রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে রোগীর সংখ্যা বাড়ল প্রায় ১০ কোটি! ২০১১-’১২ অর্থবর্ষে সিপিএম জমানার অন্তিম বছরে রাজ্যের সমস্ত সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের আউটডোরে মোট রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে তিন কোটি (৩.৪৮ কোটি)। ২০১৭-’১৮ আর্থিক বছরে সেই রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২.৩২ কোটি। এই ছ’বছরে আউটডোরে রোগী বেড়েছে প্রায় ন’ কোটি।
রবিবার স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১-২০১২ সালে রাজ্যের সমস্ত সরকারি ক্ষেত্রে ইন্ডোরে রোগীর সংখ্যা ছিল ৭ লক্ষ ৬০ হাজার। ২০১৭-’১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ লক্ষ ১৪ হাজারে। সেদিক থেকে বলতে গেলে ২০১১-’১২ অর্থবর্ষের তুলনায় ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে আউটডোর-ইন্ডোর মিলিয়ে মোট রোগী বেড়েছে প্রায় সাড়ে ন’ কোটি।
এবার দেখা যাক চলতি অর্থবর্ষ এবং অর্থবর্ষ শেষের প্রস্তাবিত হিসেবের দিকে। ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, চলতি অর্থবর্ষের ন’মাসে রাজ্যের সরকারি আউটডোরগুলিতে রোগীর সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি (৯.৯৪ কোটি)।
অন্যদিকে চলতি অর্থবর্ষের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ন’মাসে সরকারি হাসপাতালগুলির ইন্ডোরে রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ লক্ষ ৭ হাজার। অর্থবর্ষের শেষে তা বেড়ে হতে পারে ৬৬ লক্ষ ৭৬ হাজার। বামেদের সময়ের তুলনায় এখন হাসপাতালগুলির ইন্ডোরে রোগী ভর্তি সাড়ে আটগুণেরও বেশি এগিয়ে রয়েছে। এই অর্থবর্ষের শেষের প্রস্তাবিত হিসেব ধরলে রোগীর সংখ্যা বাম জমানার তুলনায় বাড়বে ১০ কোটি ৩৪ লক্ষ!
এ বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ অজয় চক্রবর্তী বলেন, “আউটডোরে রোগী বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হল বিনামূল্যের চিকিৎসা। অন্যদিকে ইন্ডোরে রোগী ভর্তির হার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হল উন্নততর সরকারি পরিষেবা। কারণ, আউটডোরে দেখানোর তুলনায় ইন্ডোরে ভর্তির বিষয়ে মানুষ অনেক বেশি চিন্তাভাবনা করেন” আর তাই ইন্ডোরের হিসেব বলছে, বাংলার সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর ভরসা বাড়ছে মানুষের।
দফতরের শীর্ষ মহলের একাংশের অভিমত, এর অনেকগুলি কারণ আছে। একাধিক সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে সাধারণ চিকিৎসার পাশাপাশি ল্যাপারোস্কপি, পেসমেকার ও সুপার স্পেশালিটি চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন। এসএনসিইউ, এসএনএসইউ, আইটিইউ, আইসিইউ বেড ও ইউনিটের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাইরে দামি ও খরচ সাপেক্ষ পরীক্ষাগুলি এখানে নিখরচায় হয়ে যায়। সরকারি স্টোর থেকে বিনা পয়সার দামি ওষুধ পাওয়া যায়। বেসরকারি হাসপাতালের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি (উদাহরণস্বরূপ ক্যান্সারের চিকিৎসায় লিনিয়ার অ্যাক্সিলারেটর, রেডিওলজিতে ডিজিট্যাল এক্স-রে) সরকারি ক্ষেত্রেও চলে আসে। এখন সরকারি হাসপাতালগুলোয় অসাধারণ দক্ষ এবং সহানুভূতিসম্পন্ন চিকিৎসকদের সংখ্যা বেশি। সুতরাং স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, বাম জমানাকে এক্ষেত্রে বেশ পিছনে ফেলে দিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা।