কাশ্মীরে সেনা ও পুলিশের ‘গণহত্যা’র প্রতিবাদ করে আইএএসের চাকরি ছেড়েছিলেম কাশ্মীরের ভূমিপুত্র ফয়জল শাহ৷ এই পরিস্থিতির প্রতি বিজেপির উদাসীনতা দেখে তাঁর ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তিনি৷ তাঁর এই ঘটনা বেশ নাড়িয়ে দিয়েছে বিজেপির ভিত তাই হাল বেগতিক দেখে পদত্যাগ করার তিন দিনের মধ্যেই কাশ্মীরের ‘ইয়ুথ আইকন’ হয়ে ওঠা শাহ ফয়জলকে ‘অকৃতজ্ঞ’ বলে আক্রমণ করল বিজেপি৷
কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবং কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদে সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করার পর শুক্রবারই প্রথম সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন শাহ ফয়জল। আগামী লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়াতে নিজের ইচ্ছের কথা স্পষ্ট ভাবেই সাংবাদিকদের জানান তিনি। যদিও বিচ্ছিন্নতাবাদী ‘হুরিয়ত কনফারেন্স’-এ যোগ দেওয়ার কোনও ইচ্ছে নেই, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাও জানিয়েছিলেন শাহ ফয়জল। তাঁর নিজের কথায়, ‘‘আমি একটা পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছি। আমার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা প্রশাসনিক কাজকর্মেই। কিন্তু হুরিয়ত আমাকে সেই সুযোগ দিতে পারবে না। ওঁরা নির্বাচনী রাজনীতিতেও বিশ্বাস করে না। তাই হুরিয়ত চাইলেও আমি ওঁদের সঙ্গে যোগ দিতে পারবো না। ’’ পাশাপাশি ফয়জল জানান, ইমরান খান বা অরবিন্দ কেজরিওয়াল যে ধারার রাজনীতি করে উঠে এসেছেন, তিনিও সেই রাস্তায় হাঁটতে চান।
শাহ ফয়জলের এই সাংবাদিক বৈঠকের পরই তাঁকে কোনঠাসা করতে আসরে নেমে পড়েছে বিজেপি। শাহ ফয়জল মিথ্যা বলছেন বলে তাঁকে তোপ দেগেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের বিজেপি প্রধান সুনীল শেঠি। পাশাপাশি তাঁকে দেওয়া হয়েছে দেশবিরোধী তকমাও। বিজেপি প্রধানের বক্তব্য, ‘‘ শাহ ফয়জলের সাংবাদিক বৈঠক আগাগোড়া মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। শাহ ফয়জল সমাজের শান্তি নষ্ট করতে চাইছে চায়। আসলে দেশবিরোধী শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে শাহ ফয়জল।’’
যদিও বা বহু বিদ্বজনেরাই সমর্থন জানিয়েছেন ফয়জলকে৷ প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক এবং সমাজতত্ত্ববিদ প্রশান্ত রায়ের মতে, ‘‘শাহ ফয়জল কেন্দ্রের কার্যকলাপের প্রতিবাদ অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবেই করেছেন। তাঁর পদত্যাগে মুখ পুড়েছে সরকারের। তাই বিজেপির এই আক্রমণ প্রত্যাশিতই। কিন্তু তাঁকে ডাকাত বা অপরাধী বলে ছোট করা সম্ভব নয়। সেই কারণেই ‘দেশবিরোধী’ শব্দের ব্যবহার। কাশ্মীরের এক জন মানুষকে দেশবিরোধী তকমা লাগিয়ে দিলে দেশপ্রেমের আবেগ তৈরি করা যায় জনমানসে। বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার সেই চেনা রাস্তাতেই হাঁটছে।’’