হাসিনা নিশ্চিত ছিলেন তাঁর দলই জিতবে। কিন্তু তিনি যে এ ভাবে ইতিহাস গড়বেন তা কি তিনি নিজেও জানতেন? উত্তরটা সম্ভবত না-ই হবে। আসলে এ তো কেবল জয় নয়, রীতিমতো ইতিহাসের মাইলফলক। প্রায় একশো শতাংশ আসন নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতল আওয়ামি লিগ। ফলে আজ সোমবার নতুন এক দিন শুরু হল বাংলাদেশে। উঠল নতুন দিনের সূর্য।
রবিবার সন্ধ্যায় ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পরেই বুথে বুথে ভোট গোনা শুরু হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আওয়ামি লিগ জোট পেয়েছে ২৮৮টি আসন। বিএনপি মাত্র ৬টি। বাকিরা ৪টি আসন পেয়েছে। অর্থাৎ আওয়ামি লিগেরই বিপুল জয়জয়াকার। অন্যদিকে প্রায় মুছে গেছে বিরোধীরা।
যদিও ফলের আভাস স্পষ্ট হতেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগিরকে পাশে নিয়ে বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান কামাল হোসেন ঘোষণা করেছেন, এই ফল তাঁরা প্রত্যাখ্যান করছেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে দেশে ফের ভোটের দাবি জানাচ্ছেন তিনি।
তবে সে সবকে হেলায় উড়িয়ে দিয়েই পাল তুলল আওয়ামি লিগের নৌকা। বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ভেঙে টানা তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় শেখ হাসিনা। শুধু দল নয়, রেকর্ড করেছেন মুজিব কন্যাও। গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে ২ লক্ষ ৩২ হাজার ভোট পেয়ে রেকর্ড গড়েছেন হাসিনা। সেখানে বিএনপি প্রার্থী এস এম জিলানী পেয়েছেন মাত্র ১২৩টি ভোট।
কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে সকাল আটটা বাজা মাত্রই রবিবার ঢাকায় নিজের বুথে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন হাসিনা। ভোট দিয়ে আঙুল তুলে বিজয়-চিহ্ন দেখান তিনি। একইসঙ্গে তখনই তাঁর গলা থেকে ঝরে পড়েছিল আত্মবিশ্বাসের সুর। সংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘মানুষ যে রায় দেবে, তা মাথা পেতে নেব। আমি নিশ্চিত সাধারণ মানুষ নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়ী করবেন। বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখবেন।’
বাংলাদেশের সংসদে মোট আসন ৩০০। সরাসরি সাধারণ ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হন এই আসনগুলির প্রার্থীরা। এর বাইরেও আরও ৫০টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। সাধারণ ভোটে রাজনৈতিক দলগুলির প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে এই ৫০টি আসনের প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ৩০০টির মধ্যে ২৩৪টি আসন জিতে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামি লিগ।
নৌকাডুবির প্রতিজ্ঞায় এ বার জোট বেঁধেছিল বিরোধীদের রামধনু জোট। দুর্নীতির দায়ে কারাবন্দি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ছাড়াই ভোটে নেমে কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দিকি, আ স ম আব্দুর রবের মতো নামী মুক্তিযোদ্ধাদের হাত ধরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়েছিল বিএনপি। তবে ভোটের ফল যদি কোনও বার্তা বয়ে আনে, তা হলে বলতেই হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ চাননি দুর্নীতির দায়ে জেলে যাওয়া খালেদা মুক্তি পান। অর্থাৎ তাঁরা দুর্নীতির বিপক্ষে।
২০২১-এ স্বাধীনতার ৫০ বছর। সেই বছরকে পাখির চোখ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নানা রূপকল্প ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা। এ বার তা বাস্তবায়নের পালা।