অযোধ্যা নিয়ে গোটা দেশেই চলছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন। রাম মন্দির তৈরির দাবিতে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ বাড়ছে। আরএসএস ও অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি এখন আর সুপ্রিম কোর্টের শুনানি অবধিও অপেক্ষা করতে চাইছে না। ঠিক এমন পরিস্থিতিতেই এক ‘নতুন’ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হলেন বিজেপি সাংসদ সাক্ষী মহারাজ।
তাঁর দাবি, হিন্দুদের মন্দির ভেঙেই তৈরি হয়েছে দিল্লির জামা মসজিদ। তাই এই মসজিদ ভেঙে তৈরি হোক মন্দির। যদিও এই অভিযোগের কোনও ভিত্তি বা সত্যতা নেই, কিন্তু এই নিয়ে ইতিমধ্যেই জলঘোলা শুরু হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার উত্তর প্রদেশের উনাওয়ের সভায় সাক্ষী বলেন, যদি জামা মসজিদ খুঁড়ে কোনও হিন্দু দেবতার বিগ্রহ না পাওয়া যায়, তবে ফাঁসিতে চড়তেও প্রস্তুত তিনি।
‘ইতিহাস’ ঘেঁটে নাকি সাক্ষী জেনেছেন, মোঘলরা ভারত আক্রমণের পর সমস্ত হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে সেই স্থানে প্রায় ৩ হাজার মসজিদ তৈরি করে। দিল্লির জামা মসজিদ তারই মধ্যে একটি! উল্লেখ্য, ভারতে বৃহত্তম মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম দিল্লির জামা মসজিদ। মোঘল সম্রাট শাহজাহান ১৬৪৪ থেকে ১৬৫৪ সালের মধ্যে তৈরি করেছিলেন জামা মসজিদ।
সাক্ষীকে নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। এর আগেও বহুবার বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন এই বিজেপি সাংসদ। একসময় তিনি নিদান দিয়েছিলেন হিন্দু ধর্মকে রক্ষা করতে, প্রত্যেক হিন্দু মহিলার অন্ততপক্ষে ৪টি করে সন্তান থাকা উচিত। যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল।
আবার ২০১৬ সালে দাদরিতে গো-হত্যার ‘গুরু পাপ’-এ এক মুসলিম ব্যক্তিকে খুনের ঘটনাকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছিলেন সাক্ষী। এমনকি তিনি ঘোষণাও করেছিলেন, ‘গো-মাতা’কে রক্ষা করতে তাঁরা প্রাণ নিতে ও প্রাণ দিতে প্রস্তুত। গত বুধবারও সাক্ষী মহারাজের নিদান ছিল, যে যুগলেরা দিবালোকে ‘অশালীন’ আচরণ করেন, তাঁদের উচিত কোনও ক্লাব বা ‘বার’-এ গিয়ে ওই সব করা।
এই মুহূর্তে যোগীর মতো বিজেপির হিন্দুত্ববাদী নেতাদের পাশাপাশি সমস্ত হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলিই সরব রাম মন্দির তৈরির আইন পাশ করাতে এত সময় লাগায়। তার উপর দিল্লির ঐতিহ্যশালী জামা মসজিদ নিয়ে সাক্ষী মহারাজের এই নয়া তত্ত্ব যে এক নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজনীতির কারবারিদের মতে, বিভিন্ন রাজ্যে ভোটের ফল দেখে চিন্তিত বিজেপি আর শুধুমাত্র ‘রাম’-এর উপর ভরসা করে বসে থাকতে পারছে না। তাই ভোটের আগে আবারও এক ধর্মীয় ইস্যু খাঁড়া করতে চাইছে মোদীর দল।