পুজো প্যান্ডেলের বাইরে গরম গরম মাছ ভাজার দোকান! আমিষ খাবারের গন্ধে ম ম করছে চারপাশ! খাসির মাংসর দোকানে লম্বা লাইন। কোথাও মোষ বলি, তো কোথাও মাছের ভোগ, কোথাও পাঁঠার মাংস।
এতো উত্তর ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের কাছে দুঃস্বপ্ন। হ্যাঁ, ওদের কাছে দুঃস্বপ্ন হতে পারে, বাংলার মাটিতে এটাই বাস্তব, এটাই বাংলার পরম্পরা। ফতোয়া ছিল পুজোর সময় আমিষ না খাওয়ার। গুজরাটে ও উত্তর ভারতের নানা জায়গায় পুজোয় সমস্ত আমিষ স্টল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি অনেক দুর্গাপুজো হুমকির মুখে। কিন্তু বাংলার মাটিতে বাঙালি নিরামিষ ফতোয়া দেওয়া হিন্দুত্ববাদীদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছে। নিরামিষ ফতোয়ায় কান না দেওয়াই ছিল বাঙালির স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া।
গত বছর পুজোর সময় এগরোল, চিকেন রোল খাওয়া নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। বিজেপির নানা ফেক নিউজ পোর্টাল এ নিয়ে কথাবার্তা শুরু করে। প্রথমবার বাঙালির পুজোর সময় আমিষ খাওয়া নিয়ে এসব শোনা যায়। এ বছর আরও খানিকটা অ্যাগ্রেসিভ প্রচার চলে। হিন্দুরা আমিষ খায় না পুজোর সময়, আমিষ খাওয়া পাপ। বাঙালির ধর্ম প্রশ্নের মুখে পড়ে, নকল হিন্দুর ছাপ বাঙালির গায়ে। আমেদাবাদে বাঙালির ৮০ বছরের পুজোয় সব আমিষের স্টল বন্ধ করতে হয়, নয়তো পুজো বন্ধের হুমকি দেওয়া হয়। আরও নানা জায়গায় থেকে খবর ভেসে আসছে। বিতর্ক দানা বাধে দুর্গাপুজোয় ফরচুন সরষের তেলের বিজ্ঞাপনকে ঘিরে। দুর্গাপুজোয় ফরচুন তেল দিয়ে মাছ ভাজা হচ্ছে, এই ছিল বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপন দেখেই উত্তর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রে রে করে তেড়ে আসে, পুজোয় মাছ ভাজা দেখানোয়। ফরচুন ক্ষমা চায়, বাংলা ছাড়া দেশের সব জায়গা থেকে বিজ্ঞাপন উঠিয়ে নেওয়া হয়। এতো বাঙালির অপমান। বাঙালির যা স্বাভাবিক, তা অন্যের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয় এবং বিজ্ঞাপন কোম্পানী ক্ষমা চায়। বাঙালিও ঝাঁপিয়ে পড়ে, ফরচুনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় বাংলায় ব্যবসা করতে হলে বাঙালিকে অপমান করা চলবে না।
গত বছর থেকে যা শুরু হয়েছে, তা এবার অন্য মাত্রা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু বাঙালি সব নস্যাৎ করে দিয়েছে। নিজের পাত থেকে আমিষ উধাও হতে দেবে না বাঙালি, বরং কব্জি ডুবিয়ে খাবে। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে। ওরা বাংলাকে গুজরাট, হরিয়ানা বানাতে চায়। এটা কক্ষনো হতে দেওয়া যায় না। বাঙালিকে কেন নিজের ধর্মের প্রমাণ দিতে হবে? একবার বাঙালি নিজের জায়গা ছাড়লে তার খেসারৎ দিতে হবে ভবিষ্যতে। তাই ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে অধিকার বুঝে নিতে হবে, বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য ও পরম্পরাকে রক্ষা করতে হবে আমাদেরই। খাবার সবার ব্যক্তিগত পছন্দের জায়গা। কেউ আমিষ বা নিরামিষ কোনোটাই চাপিয়ে দিতে পারে না। আমিষ-নিরামিষের বর্তমান এই লড়াই খাদ্যাভাসের লড়াই না শুধু। এটা সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক লড়াই। এটা মাটির লড়াই, মাটি রক্ষার লড়াই। এটা বাঙালির অস্তিত্বের লড়াই।
( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত )