মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই রাজ্যের পর্যটন শিল্পের বিকাশে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। নতুন নতুন পর্যটন সেক্টর তৈরি করেছেন তিনি। বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপুজোকে বিশ্বের বাজারে তুলে ধরতে উদ্যোগী হয়েছেন তিনি। তাঁর উদ্যোগে দুর্গা কার্নিভাল শুরু হয়েছে। যেখানে কলকাতার সেরা পুজোগুলি তাঁদের প্রতিমা ও মণ্ডপের রেপ্লিকা নিয়ে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। যা দেখতে দেশ-বিদেশের বহু মানুষ হাজির হন রেড রোডের দু’ধারে। এ বছরই ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে দুর্গাপুজোকে কয়েকটি এপিসোডে দেখানো হয়েছে। এবার মমতার হাত ধরেই কলকাতার দুর্গাপুজো এবং ডালহৌসি চত্বর পেতে চলেছে ‘হেরিটেজ’ তকমা।
তিনশো বছরেরও বেশি ঐতিহ্য, দুর্গাপুজোর অসামান্য শিল্পকলা দেখার জন্য উপচে পড়া ভিড়, ঐতিহাসিক ডালহৌসি চত্বর, স্থাপত্য এই আবেগ, ইতিহাসকে তুলে ধরেই ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে কলকাতার নাম অন্তর্ভুক্ত করতে চলেছে মমতার সরকার। তার জন্য ডকুমেন্ট তৈরি করতে ইতিমধ্যেই উদ্যোগী হয়েছে পর্যটন দফতর। শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের ইতিহাস বিজড়িত স্থান বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা, শান্তিনিকেতন, নবদ্বীপ, কোচবিহার, দার্জিলিংয়ের চা বাগানও এই ডকুমেন্টে স্থান পাবে।
দুর্গাপুজোকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে স্থান করে দিতেই এই ডকুমেন্ট তৈরি হচ্ছে। শুধু দুর্গাপুজো নয়, ডালহৌসি চত্বরের লালদিঘি ও তার পাড়ের সৌন্দর্য, ব্রিটিশ আমলে তৈরি রাইটার্স বিল্ডিং, জিপিও সহ অন্য ঐতিহ্যমণ্ডিত বাড়িগুলিও ওই ডকুমেন্টে স্থান পাবে। এছাড়া স্থান পাবে কলেজ স্ট্রিট, শোভাবাজার রাজবাড়ি সহ উত্তর কলকাতার ইতিহাস বিজড়িত বাড়িগুলি। এই বিষয়ে ইউনেস্কোর আগ্রহ দেখে খুশি রাজ্য সরকারের কর্তারা। কলকাতা সহ বিষ্ণুপুর, শান্তিনিকেতন, নবদ্বীপ, কোচবিহার, দার্জিলিংয়ের আরও অনেক আগেই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে স্থান পাওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন অফিসাররা। এই সব জায়গায় দেশ-বিদেশের পর্যটকরা প্রতি বছরই আসেন। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে স্থান পেলে এর গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে বলে মনে করছে অভিজ্ঞমহল।
কীভাবে সেই ডকুমেন্ট তৈরি করতে হয় তা জানাতেই গত সপ্তাহে ইউনেস্কোর কর্তারা কলকাতায় আসেন। নিউটাউনে বিশ্ব বঙ্গ কনভেনশন সেন্টারে তাঁদের সঙ্গে রাজ্যের পর্যটন সচিব অত্রি ভট্টাচার্য সহ পর্যটন দফতরের অফিসারদের দু’দিন ধরে বৈঠক হয়। সেখানে কীভাবে ইউনেস্কোর কাছে আবেদন করতে হবে, তাও দেখিয়ে দেন তাঁরা। ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যেই রাজ্যের কয়েকটি স্থান পরিদর্শন করে তাঁদের খুশির কথা ব্যক্ত করেছেন। একইসঙ্গে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটেও এই স্থানগুলি জায়গা পেতে পারে বলে জানিয়েছেন। ইউনেস্কোর এই মতামতে খুশি রাজ্য সরকার।