পুলওয়ামায় জঙ্গী হামলার ঘটনায় কোণঠাসা পাকিস্তান। এমএফএন তকমা তুলে নিয়ে তাদের বাণিজ্যিক ভাবে ধাক্কা দেওয়ার পর, জল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার কথাও ঘোষণা করে দিয়েছে ভারত। এমন অবস্থায় নয়াদিল্লীকে তুষ্ট করতে মুম্বই সন্ত্রাসের ঘটনায় অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী হাফিজ সঈদের জঙ্গী সংগঠন জামাত-উদ-দাওয়াকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল ইসলামাবাদ। সেইসঙ্গে জামাতের অনুগামী একটি সংগঠনকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করল তারা।
পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা মন্ত্রকের এক মুখপাত্র বৃহস্পতিবার জানান, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সচিবালয়ে হওয়া জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে জামাদ উদ দাওয়া এবং তার অনুগামী সংগঠন ফালাহ ই ইনসানিয়তকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, এবার এই ধরনের সংগঠনগুলিকে ক্রমশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পথে এগোবে ইসলামাবাদ।
প্রসঙ্গত, জামাত-উদ-দাওয়া হল লস্কর-ই-তৈবার ফ্রন্টাল সংগঠন। অর্থাৎ জামাত মৌলবাদের কথা প্রচার করে। মাদ্রাসা, স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদি চালায়। আর তার জঙ্গি সংগঠন হিসাবে অপারেট করে লস্কর-ই-তৈবা। হাফিজ সঈদ লস্কর-ই-তৈবার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। এর আগে ২০০৮ সালে মুম্বইয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালিয়েছিল লস্কর জঙ্গীরা। পাকিস্তানে বসে সেই হামলার গোটা নকশা তৈরির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হাফিজ সঈদ। ফলে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরেই হাফিদ সঈদের বিরুদ্ধে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জে। পরে ২০১২ সালে হাফিজকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী বলে ঘোষণা করে মার্কিন স্বরাষ্ট্র দফতর। সেই সঙ্গে হাফিজকে গ্রেফতারের জন্য ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে ওয়াশিংটন।
আন্তর্জাতিক মহল থেকে সেই চাপের মুখে পড়ে অতীতে হাফিজ ও তার সংগঠনকে ‘ওয়াচ লিস্টে’ রাখতে বাধ্য হয়েছিল ইসলামাবাদ। তাঁকে নাম কে ওয়াস্তে গৃহবন্দী করে রাখা হলেও পরে ২০১৭ সালে মুক্তি দেওয়া হয়। এবার ফের তার সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল। যদিও এ ব্যাপারে নয়াদিল্লী সরকারি ভাবে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে সাউথ ব্লকের এক কর্তার কথায়, এ সবই হল লোক দেখানো। ২০০৮ সালে মুম্বই সন্ত্রাসের ঘটনার পর হাফিজের বিরুদ্ধে তথ্য ও প্রমাণ দেওয়া হয়েছিল ইসলামাবাদকে। তখন তার উপর কোনও ব্যবস্থাই পাকিস্তান নেয়নি। এখন, পুলওয়ামা কাণ্ডের পর জৈশ-ই-মহম্মদ চিফ মাসুদ আজহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভারত তথা গোটা বিশ্ব পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়াচ্ছে, তখন নাকের বদলে নরুন দেওয়ার চেষ্টা করল পাকিস্তান।
কূটনৈতির মহলের মতে, জামাত-উদ-দাওয়া হোক বা লস্কর, কিংবা জৈশ-ই-মহম্মদ, এদের সবাইকেই মদত দেয় পাক সেনা ও আইএসআই। আর্থিক সাহায্য থেকে সামরিক সাহায্য, গোয়েন্দা তথ্য, প্রযুক্তি সবই ওরা এদের সরবরাহ করে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্বের এদের ওপর কোনও নিয়ন্ত্রণ কোনও কালেই ছিল না। ইমরান খান প্রশাসনের তো আরও নেই। কারণ, ইদানীং কালের মধ্যে রাজনৈতিক ভাবে সব থেকে দুর্বল সরকার চালাচ্ছেন ইমরান। তাঁর ভাগ্যই ঝুলে আছে পাক সেনাবাহিনীর ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর। ফলে এ দিন ইসলামাবাদ যে পদক্ষেপ করেছে তাতে খুব একটা ভরসা করতে পারছে না নয়াদিল্লী। কারণ, পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক মহলে কোণঠাসা করতে ভারত যে তৎপর, তা দেখেই ইসলামাবাদ তড়িঘড়ি এই পদক্ষেপ করল বলে মনে করা হচ্ছে।