শীতকাল মানেই নলেন গুড় এবং জয়নগরের মোয়া। আর মোয়া, গুড়ের শ্রেষ্ঠ উৎপাদক জয়নগর। গোটা শীতকাল জুড়েই মিষ্টির দোকানে এবং ফেরিওয়ালাদের কাছে ‘জয়নগরের মোয়া’ লেখা বাক্স মজুত থাকে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তা নকল হয়৷ তাই এবার ঘরে বসেই আসল জয়নগরের মোয়া পেতে অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। এবার থেকে রাজ্য সরকারি ওয়েবসাইটেই মিলবে আসল মোয়ার সন্ধান।
গত দু’-এক বছর ধরেই নকল মোয়াতে বাজার ছেয়ে গেছিলো। তাই ক্রেতারা যাতে আর না ঠকেন, সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই এই ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য সরকার। কলকাতা শহর ও ভিন জেলার ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে সুফল বাংলার সাইটে শহরের কতগুলি আউটলেটে জয়নগরের খাঁটি (জিআই লেগোসহ) মোয়া পাওয়া যাবে, তার সুলুক-সন্ধান দেওয়া হয়েছে। মোয়ার পাশাপাশি মিলবে আসল নলেন গুড়ও। সরকারি আউটলেটে জয়নগরের মোয়া ও গুড় নিয়ে বিপণনের ব্যবস্থা এই প্রথম। এমনকি সুফল বাংলা সাইটে গেলে আসল মোয়ার কারিগরদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।
ভেজাল জয়নগরের মোয়ার রমরমা অনেকদিন ধরে চলছে। চিনির সঙ্গে আখের গুড় মিশিয়ে তার উপর সাদা ক্ষীর ছড়িয়ে তৈরি হচ্ছে মোয়া। চলতি শীতে এখনও জয়নগরে খেজুর গাছের রস সেভাবে আসেনি। তার একমাস আগে থেকে রঙিন প্যাকেটে জয়নগরের মোয়া বিক্রি শুরু হয়ে গিয়েছে। কোনও প্যাকেটে প্রস্তুতকারীর নাম ও ঠিকানা নেই। কয়েকজন দোকানদারকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে উত্তর এল, ‘গত বছরের গুড় দিয়ে হয়েছে।’ আর খই? উত্তর সেই একই। বাস্তব হল, এখন অধিকাংশ জায়গাতে ৭৫ শতাংশ খেজুর গাছ কাটা হয়েছে। কনকচূড় খই অবশ্য বাজারে চলে এসেছে।
মূলত এই কনকচূড় ধানের খই দিয়েই আসল জয়নগরের আসল মোয়া প্রস্তুতকারীরা মোয়া বানান। এই খইয়ের সঙ্গে নলেন গুড় মিশিয়ে তৈরি হয় আসল মোয়া। সুস্বাদু, মুখে দিলেই গলে যায়। কিন্তু এক শ্রেণীর মানুষ চিনি ও সাধারণ খই মিশিয়ে তাকে আসল বলে চালাচ্ছে। ফলে ঠকছেন ক্রেতারা। সেই কারণে আসল ও নকল মোয়া চেনাতেই এবার অনলাইনে জোরদার প্রচারে নামল জয়নগর মোয়া নির্মাণকারী সোসাইটি। নিজেদের সাইট ছাড়াও রাজ্য সরকারের কৃষি বিপণন দপ্তরের অধীন www.sufalbangla.in সাইটে এই নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ বারাসতের বাসিন্দা জয়নগর মোয়া নির্মাণকারী সোসাইটির সম্পাদক অশোক কয়াল জানালেন, এই ভেজালের জন্য জয়নগরের নাম খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বাস্তবে জয়নগর-১, জয়নগর-২ দু’টি ব্লকে প্রচুর মানুষ দীর্ঘদিন ধরে খাঁটি মোয়া তৈরি করলেও তাঁরা বাজার পাচ্ছেন না। মোয়া নির্মাণকারী সোসাইটি সরকারের কাছে এই খাদ্যবস্তুর ভৌগোলিক নির্দেশিকা পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। তারই ফসল জয়নগরের মোয়ার জিআই স্বীকৃতি। তবে তা পেলেও ভেজাল বন্ধ করা যায়নি। চলতি বছরে জয়নগর-মজিলপুর ও দক্ষিণ বারাসতের ২০ জন অভিজ্ঞ ও দীর্ঘদিনের মোয়া নির্মাণকারী জিআই ব্যবহারের স্বীকৃতি পেয়েছে।
তার পরেই সরকারি ওয়েবসাইটে মোয়া বিপণনের এমন নতুন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যপাধায়ের উদ্যোগে বর্ধমানের প্রসিদ্ধ সীতাভোগ মিহিদানার সুনামকে আরও বিস্তৃত করতে সেখানে স্থাপিত হয়েছিল ‘মিষ্টি হাব’ আর এবার ঘরে বসেই আসল মোয়া কেনার এমন প্রচেষ্টায় মিষ্টি ব্যবসায়ীদের আরও সহায়তা করলেন মমতা।