বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর থেকেই নারী ক্ষমতায়ন ও সার্বিক উন্নয়নে বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহিলাদের স্বনির্ভর করে তুলতে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। এবার পূর্ব মেদিনীপুরের সিএডিসি প্রজেক্টের মধ্যে গ্রামীণ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের মাশরুম তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে রাজ্য। ইতিমধ্যে জেলার প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার মহিলা এই প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বনির্ভরতার মুখ দেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে মাশরুম তৈরি করে উপার্জনের অভিনব উৎস দেখছেন তাঁরা। কোনও আচার-অনুষ্ঠান কিংবা হোটেল-রেস্তোরাঁয় নিরামিষ খাদ্য তালিকায় মাশরুম অন্যতম উপকরণ। মাশরুম দিয়ে নানা ধরনের সুস্বাদু, এমনকী পুষ্টিকর পদ রান্না করা হয়। তাই রাজ্য জুড়ে মাশরুমের চাহিদা ব্যাপক বলা চলে। এমনকী রাজ্যের বাইরেও রফতানি হয় মাশরুম। ইতিমধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সিএডিসি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে বহু গ্রামের মহিলা স্বনির্ভর হয়েছেন। মূলত গ্রাম বাংলার মহিলারা বাড়িতেই খড় এবং মাশরুমের বীজ দিয়ে অল্প খরচে তৈরি করছেন মাশরুম। অক্টোবর থেকে শুরু হয় মাশরুমের বেড তৈরির কাজ। চলে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রথমে খড় কেটে চুন জলে ডুবিয়ে রাখা হয় সারা রাত। এরপর খড় তুলে রোদে শুকনো করার পর তা বেডে লাগানো হয়। সেখানেই মাশরুমের বীজ দিয়ে তৈরি করা হয় মাশরুম। চাল কিংবা গম দিয়ে মাশরুম তৈরি হয়।
পাশাপাশি, এক একটি বেড তৈরির জন্য খরচ হয় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। এক একটি বেডে মাশরুম উৎপাদন হয় এক থেকে দেড় কেজি। ফলে বেড প্রতি ৩৫ টাকা খরচ করে আয় হয় ৩০০ টাকা পর্যন্ত। ইতিমধ্যে তমলুক, শহিদ মাতঙ্গিনী, রামনগর, মহিষাদল-সহ জেলার একাধিক ব্লকে এই প্রশিক্ষণে বিশেষ সাড়া মিলেছে। ফলে মাশরুম থেকে এক একজন মহিলা গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করছেন মরশুমে। চার বছর আগে সিএডিসি প্রকল্পের মাধ্যমে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন রিঙ্কু জানা নামের এক মহিলা। তা থেকে আজ স্বনির্ভর হয়েছেন তিনি। রিঙ্কু জানান, “তমলুকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। গত বছর একশোটি বেড তৈরি করেছিলাম। এ বছর দেড়শো বেড তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। স্বনির্ভর হতে পেরে ভালই লাগছে।” তমলুকের সিএডিসি প্রজেক্টের ডেপুটি প্রজেক্ট অফিসার উত্তমকুমার লাহা জানান, “আমরা ইতিমধ্যে ৬ থেকে ৭ হাজার গ্রামীণ মহিলাকে এই প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ১০০ দিনের কাজ না থাকায় সেই পরিমাণ অর্থ গ্রামীণ মহিলারা মাশরুম চাষ করে আয় করতে পারছেন।” খুবই স্বল্পমূল্যে মাশরুম তৈরি করে তা বাজারে ভাল দামে বিক্রি করে এক একজন মাসে ১৫-১৮ হাজার টাকা রোজগার করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।