দোরগোড়ায় লোকসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যেই ভোটের বিউগল বাজিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে দেশের প্রায় সবকটি রাজনৈতিক দলই। পাশাপাশি শুরু হয়ে গেছে আসন সমঝোতা নিয়ে নানা নাটকও। যেমন বাংলায় এবার জোট বা আসন সমঝোতার ব্যাপারে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটকে সময় বেঁধে দিল বিধানভবন। বুধবার লোকসভা ভোট নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠকে বসেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। বিধানভবনে ওই বৈঠকের শেষে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, মুর্শিদাবাদ এবং রায়গঞ্জ আসন দুটি ছাড়া সম্ভব নয়। পুরুলিয়া আসনেও কংগ্রেসই লড়বে। এরপর যদি সিপিএম তথা বামেরা আসন সমঝোতা করে তাহলে তা রবিবারের মধ্যে জানাক। না হলে ৪২টি আসনেই প্রার্থী দেওয়ার জন্য কংগ্রেস তৈরি বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত লোকসভা ভোটে বাংলা থেকে সিপিএম দুটি আসনে জিতেছিল। সেই দুটি রায়গঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদ। কিন্তু এ বার সেই দুটি আসন সিপিএম-কে ছাড়া হবে না বলে জানিয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু কংগ্রেসের তরফে হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেন? সোমেন বাবুর ব্যাখ্যা, রায়গঞ্জে মহম্মদ সেলিমের কাছে দীপা দাশমুন্সি হেরেছিলেন মাত্র দেড় হাজার ভোটে। এবার প্রতি বুথে অল্প বিস্তর ভোট এদিক ওদিক হলেই সেই আসন কংগ্রেস পুনর্দখল করতে পারবে। তাছাড়া রায়গঞ্জে দীপা দাশমুন্সি দাঁড়ানো মানেই সেখানে কাজ করবে প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির আবেগ।
অন্যদিকে, মুর্শিদাবাদ আসনও সিপিএম-কে ছাড়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রদেশ নেতৃত্ব। কংগ্রেসের তরফে আবদুল মান্নান এবং প্রদীপ ভট্টাচার্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিপিএমের সঙ্গে আলোচনার জন্য। যদি সিপিএম মানে তো ভাল, না হলে নিজের তাকতেই বাংলায় লোকসভা ভোট লড়বে কংগ্রেস। যদিও বুধবারের বৈঠকে হাজির ছিলেন না বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান। তবে সাংবাদিক বৈঠকের সময় বিধান ভবনে ঢোকেন তিনি। এবং বেরনোর সময় তাঁর ওপর সিপিএমের সঙ্গে আলোচনার দায়িত্ব দেওয়া প্রসঙ্গে চাঁপদানির বিধায়ক বলেন, ‘আমার কাঁধ অত চওড়া নয়।’
এদিকে, গত বামফ্রন্টের বৈঠকে শরিকদল ফরওয়ার্ড ব্লক জানিয়ে দিয়েছে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হলে তারা থাকবে না। তার ওপর তাদের ভাগের তিনটি আসনে প্রার্থীর নামও ইতিমধ্যেই বিমান বসুর হাতে জমা দিয়ে দিয়েছেন তারা। তার মধ্যে রয়েছে পুরুলিয়া আসনও। আবার কংগ্রেসও সাফ জানিয়ে দিয়েছে পুরুলিয়া আসন তারা ছাড়বে না। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দলের রাজ্য দফতরে রাজ্য কমিটির বৈঠকে বসছে সিপিএম। তবে কংগ্রেসের এমন সময় বেঁধে দেওয়ার পর সিপিএমের বর্ধমান লাইনের এক নেতা বলেন, ‘এরপরও যদি দল আসন সমঝোতায় যায় তাহলে তা মাথা বিকিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।’ কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না করলে কি বাংলায় আদৌ টিকে থাকতে পারবে সিপিএম? এই প্রশ্নই চিন্তা বাড়াচ্ছে আলিমুদ্দিনের। তাই কংগ্রেসের কাছে ‘মাথা বিকিয়ে দেওয়া’টাই এই মুহূর্তে খানিকটা স্বস্তিদায়ক, এমনটাই মনে করছে দলের একাংশ।