সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণেই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার শিকার হতে হয় বাংলাকে, এ কথা বরাবরই বলে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর দিন দিন সেই বঞ্চনার পরিমাণ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। তবে তাতেও মাথা নীচু করতে নারাজ তিনি। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের পর এবার কেন্দ্রের অনাগ্রহে অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী ফের যৌথ উদ্যোগ থেকে বেরিয়ে এসে একাই তাজপুর সমুদ্র বন্দর গড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
বুধবার সন্ধ্যায় নবান্ন থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের মুখ্যমন্ত্রী জানান, কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ উদ্যোগে এই বন্দর নির্মাণের কথা ছিল। এতে কেন্দ্রের ভাগ ছিল ৭৪ শতাংশ আর রাজ্যের ভাগ ছিল ২৬ শতাংশ। কিন্তু ৩ বছর কেটে গেলেও কেন্দ্র এ বিষয়ে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ না নেওয়ায় তাজপুর গভীর সমুদ্র-বন্দর রাজ্য সরকার নিজেই তৈরি করবে। তাঁর কথায়, ‘৩ বছর ধরে এই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার কিছুই করেনি। আমরা অপেক্ষা করেছি এত দিন। আর নয়। এখানে বিনিয়োগ আসবে। প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। আর্থিক উন্নয়ন হবে।’
নবান্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত তাজপুর বন্দরের ৭৪ শতাংশ অংশীদারি কেন্দ্রকে ছাড়ার পাশাপাশি ঠিক হয়েছিল, মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সাগরদ্বীপকে জুড়তে মুড়িগঙ্গা নদীর উপর একটি লোহার ব্রিজ বানাবে কেন্দ্র। কিন্তু এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার নীরব থাকায় কয়েকদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, মুড়িগঙ্গা নদীর উপর প্রস্তাবিত ব্রিজটি রাজ্য সরকারই বানাবে। গতকাল তাজপুর বন্দর গড়ার কথা ঘোষণা করার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এ-ও জানিয়েছেন, ‘কুলপিতে নদী-বন্দর তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র পাওয়া গেছে। খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে।’
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জানান, শুধু তাজপুর বন্দর গড়াই নয়, প্রস্তাবিত কুলপি নদী বন্দর নির্মাণ সংক্রান্ত যাবতীয় ছাড়পত্র মিলেছে। কুলপি বন্দরও গড়বে রাজ্য। এই প্রকল্প রাজ্য নিজে করবে নাকি কোনও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে করবে, তা সমীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পরই ঠিক হবে। ২০০৮ সালে কুলপি বন্দর গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। রাজ্যের কেভেন্টার্স গ্রুপ এবং দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ডের যৌথ উদ্যোগে কাজের কথা ছিল। কিন্তু কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রকের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র মেলেনি। তবে অর্থমন্ত্রীর কথায়, ‘সব সমস্যা মিটে গেছে। সব ছাড়পত্র পাওয়া গেছে। এবার কাজ শুরু হবে।’
নবান্ন সূত্রে খবর, মাইনর পোর্ট গড়ার যে ক্ষমতা রাজ্যের এক্তিয়ারে রয়েছে, তাকে ভিত্তি করেই তাজপুর বন্দর সংক্রান্ত (নোটিফিকেশন) বিজ্ঞপ্তি কয়েকদিন আগে জারি করেছে রাজ্য সরকার। ওই বিজ্ঞপ্তির অর্থ, তাজপুরের প্রস্তাবিত বন্দর তৈরির বিষয়টি রাজ্য সরকার নিজের আয়ত্তে নিচ্ছে। ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সঙ্গেই ‘ট্রান্সজাকশন অ্যাডভাইজার’ নামক সংস্থাকে প্রস্তাবিত বন্দর তৈরির বিষয়ে সমীক্ষা করতে বলেছে রাজ্য। ওই সমীক্ষা রিপোর্টের ভিত্তিতেই কোন মডেলে গড়া হবে বন্দর, তা ঠিক হবে।
অন্যদিকে, প্রস্তাবিত কুলপি বন্দরের যাবতীয় ছাড়পত্র মেলায়, তা নির্মাণে আর কোনও বাধা রইল না রাজ্যের। ওই বন্দরটি তৈরি হবে পিপিপি মডেলে। দুবাই ভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড, কেভেন্টার গ্রুপের সংস্থা বেঙ্গল পোর্ট লিমিটেড এবং রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম যথাক্রমে ৪৪.৫, ৪৪.৫ এবং ১১ শতাংশ অংশীদারিত্বে এই বন্দর তৈরি করবে।