অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ থেকে শুরু হল গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান। কারও পায়ে হাওয়াই চটি, কারও পা নগ্ন, কারও কোমর সামনে ঝুঁকে গিয়েছে। মাথায় ভারী ভারী লোটাকম্বল বাঁধা। পোশাকের অবস্থাও আগোছাল, শতচ্ছিন্ন। চারপাশে গাড়ির শব্দ, পুলিশের শাসন, ভেসেলে ওঠার দীর্ঘ লাইন, ঠেলাঠেলি— সেদিকে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। সকলের মন ও চোখে একটাই স্বপ্ন, সাগরসঙ্গমে ডুব দেওয়া। কাকদ্বীপ হারউড পয়েন্ট থেকে লট-৮, নামখানা, বেণুবন, কচুবেড়িয়া থেকে সাগর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রবিবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত সাগরস্নান নিয়ে উন্মাদনার চিত্রটা ছিল এমনই। জেলা প্রশাসনের সূত্রে খবর, পুণ্যস্নানের জন্য এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬ লক্ষ পুণ্যার্থী পৌঁছে গিয়েছেন গঙ্গাসাগরে।
গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নানের জন্য আসা পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৮০০টি সিসিটিভির সাহায্যে ৫০টি এলইডি স্ক্রিনে কন্ট্রোল রুম থেকে নজরদারি চালানো হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেচ ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা তৈরি থাকছেন। পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে থাকছে ৪০টি ই-কার ও ৬০টি হ্যান্ড রিকশা। এ ছাড়াও মেলা চত্বরে রয়েছে ৪০০টি শৌচালয়। গঙ্গাসাগরে দুর্ঘটনাগ্রস্ত পুণ্যার্থীদের জন্য ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। ওয়াটার অ্যাম্বুল্যান্স ও ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে পুণ্যার্থীদের জন্য।
অন্যান্য বছরের মত এবারেও বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছেন সাধুরা। তাঁদেরই মধ্যে একজন হলেন শাঁখবাবা। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। তাঁর হাতে বিশাল পঞ্চশাখ। যা মহাভারতের যুদ্ধে কৃষ্ণ বাজিয়ে ধর্মযুদ্ধ শুরু করেছিলেন বলে তাঁর দাবি। শঙ্খের মধ্যে সুদর্শন চক্র, গণেশ মূর্তি, ভিতরে শেষনাগের চিহ্ন দেখালেন। মুখে শুধু কৃষ্ণর নাম। আর এক পা যেতে যেতে একনাগাড়ে কখনও এক, কখনও দু’ মিনিট ধরে সেই শাঁখ বাজিয়ে শোনাচ্ছেন। লোকজন তা দেখে ভিড় করছে। তিনি বললেন, বহু কষ্ট করে হিমালয় থেকে এই ‘পাঞ্চজন্য’ সংগ্রহ করে এনেছি। সব কৃষ্ণের দয়া। তাঁর দাবি, ফের ধর্মযুদ্ধ আসন্ন। এরকম বিভিন্ন চিত্র নিয়ে সরগরম সাগরমেলা।