বিয়ের সময় মোটা অঙ্কের পণ, গয়নাগাঁটি ইত্যদি নিয়ে বিয়ে করার রেওয়াজ চলে আসছে বহুদিন দিন ধরেই। পণের জন্য বধূহত্যার খবরও আকছার শোনা যায়। তবে এবার সোদপুরের ঘোলার বাসিন্দা অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় চেনা ছক ভেঙ্গে তাঁর শ্বশুরবাড়ির থেকে চাইলেন অভিনব এক পণ। বিয়ে ঠিক হবার পর অঞ্জনের বাবা গণেশ বন্দ্যোপাধ্যায় পাত্রীপক্ষকে জানান তাঁদের চাহিদার কথা। ২০ জন রক্তদাতার দাবি ছিল তাঁদের। ছেলের বৌভাতে তাঁরা একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে চান।
অঞ্জন বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই বাড়িতে বিয়ের কথা চলছিল, একদিন তাঁর বাবার ফোনে আচমকাই ভুল করে ফোন করেন রুপা অর্থাৎ পাত্রীর মা। আলাপের পরে তাঁর বাবা জানতে চান কোন পাত্রী আছে কিনা।’ সেখান থেকেই বিয়ের কথাবার্তা শুরু হয়। অঞ্জনের বাবা জানিয়েছেন, ‘পণের কথা উঠতেই আমি বলি, ২০ জন রক্তদাতা দেবেন, তাহলেই হবে। প্রথমে চমকে গেলেও পরে ওঁরা পরে বুঝতে পারেন এটাই আমাদের দাবি। ২০ জন না হলেও ১৭ জন রক্তদাতাকে এনেছিলেন ওঁরা, পাত্রীর মা বাবাও রক্তদান করেন।’
কিন্তু হঠাৎ এমন আয়োজন কেন? এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে গনেশবাবু বলেন, মাত্র ২ বছর বয়সে বড় ছেলের মৃত্যুর পর থেকেই তিনি সমাজসেবায় যুক্ত। অঞ্জনের উপনয়নেও রক্তদান শিবিরের আয়জন করেছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘সবাই যদি এভাবে রক্তদানের আয়োজন করেন, রক্তদানে এগিয়ে আসেন তাহলে অনেক মানুষের প্রাণ অকালে চলে যায় না।’ রক্তদান শিবিরে আমন্ত্রিত ছিলেন রক্তদান আন্দোলনের সাথে যুক্ত ডি আশিস। তিনি বলেন, ‘এই ক্ষেত্রে পাত্র এবং কন্যা দুই পক্ষই যেভাবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা পালন করেছে তা সত্যি দৃষ্টান্তমূলক।’
গত ১৮ নভেম্বর ক্যানিঙের পিয়ালীর বাসিন্দা রুপা ভট্টাচার্যের সাথে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হয় গণেশবাবুর ছেলে অঞ্জনের। রবিবার বৌভাতের আমন্ত্রণপত্রে রক্তদান শিবিরে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন পাত্রের বাবা। অনুষ্ঠান প্রাঙ্গনে নবদম্পতির বসার মঞ্চ, খাওয়াদাওয়ার জায়গার পাশেই ছিল রক্তদান শিবির। মোট ২০০ জন আমন্ত্রিতের মধ্যে ৪৫ জন রক্ত দেন। খাদ্যতালিকায় ছিল এনার্জি ড্রিঙ্ক, কফি, বিস্কুট , ফল এবং পরে চিকেন বিরিয়ানি, মটন কষা আর মিষ্টি।
উত্তর ২৪ পরগণা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কার্যালয়ে এক সময় এলসিডি প্রজেক্টর, সিনেমা প্রজেক্টর চালাতেন গনেশবাবু। পরিবার পরিকল্পনা, ডটস, কুষ্ঠরোগ সংক্রান্ত ফিল্ম স্লাইড চালানোই ছিল তাঁর কাজ।। তখন থেকেই অন্যকে সচেতন করার প্রয়াস শুরু তার। আর এবার নিজের ছেলের বিয়েতে এহেন উদ্যোগ নিয়ে অনন্য নজির সৃষ্টি করলেন তিনি।