।। ১।।
“কীরে রোদ্দুর, অয়ন আসে নি এখনো?”
” কলকাতার ছেলে বুঝতেই পারছো, গ্রামে আসছে। ঘন্টাদুয়েক লেট হবেই..”
কথা শেষ করতে না করতেই সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ অয়নের।
“উফ কি অজ পাঁড়াগা থাকিস, তোর বাড়িতে আসতে গিয়ে আর একটু হলেই…”
“আরে আমিই যেতাম, বাড়িতে এত কাজ, পুজোর যোগাড় যন্তরে উফ!”
” আশার সময় শুনছিলাম তোদের বাড়ির পুজো এলাকার সব থেকে বড়ো পুজো।”
“শুধু বড়ো নয়, প্রচুর ইতিহাস আছে এই পুজোর।দুই শতক আগে আমাদের বাড়িতে পুজো শুরু করেছিলেন শ্যামপ্রসাদ চক্রবর্তী। সেই থেকেই চলে আসছে!”
“তোকে দেখে তুই এত বনেদি বাড়ির ছেলে বোঝাই যায় না।”
দুজনে হেসে ওঠে।
এতক্ষণ দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল দুজনের।হঠাৎ বাইরে থেকে এক মেয়ে এসে সজোরে ধাক্কা দেয় অয়ন কে।সে নিজেই ছিটকে পড়ে,আর অয়ন তো বেসামাল। কোমরে খুব লেগেছে।
মেয়েটি উঠে দাঁড়িয়ে, চিৎকার করে ওঠে।
“কে আপনি মশাই! হ্যাঁ। ইয়ার্কি হচ্ছে।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন!”
রোদ্দুর কিছু বলার আগেই,অয়ন চিৎকার করে,”বেশ করেছি আপনার কি! আমার বন্ধুর বাড়িতে দাঁড়িয়ে এইভাবে কথা বলেন কিভাবে?”
দুজন কে থামায় রোদ্দুর।
“শ্রেয়া তোকে বলেছিলাম মনে আছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড অয়ন। এ সেই অয়ন! আর অয়ন আমার বোনের নাম জানিস ই। শ্রেয়া।”
শ্রেয়া মুখ বেঁকিয়ে এগিয়ে বলতে বলতে যায়, “এরকম বাঁদর কিভাবে বেষ্ট ফ্রেন্ড হয় দাদার!দিন দিন কি যে হচ্ছে!”
অয়ন কথা শুনে বলে, “কোথায় দাদা আর কি বোন।ছাড় ঘরে নিয়ে চল।সময় নষ্ট। ”
রোদ্দুর ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।
।। ২।।
সপ্তমী সকাল।আগের দিন অয়ন ও এসে গেছে।রোদ্দুরের মন বেশ ভাল।সে কয়েকটা জিনিস আনতে পাশের গ্রামে গেছে।সপ্তমীর সকালে জল খাবার লুচি।সবার ঘরে ঘরে দিয়ে আসছে বাড়ির মেয়েরা।শ্রেয়া কে অয়নের খাবার দিয়ে আসতে বলা হয়েছে।ইচ্ছে করে ও কয়েকটা পেট খারাপের ওষুধ খাবারে মিশিয়ে ঘরে ঢুকে যায়। তখন সবে অয়ন জামা প্যান্ট পরছে।
“এ কি অসভ্যতামি! নক করে ঢুকবেন তো।”
“আপনার জন্য দাঁড়ানোর সময় নেই।খেয়ে উদ্ধার করবেন।”
“খুব বকছেন দেখছি।ঠিক হচ্ছে না।”
” বেশ করেছি” বলেই দৌড়ে চলে গেল শ্রেয়া।অদ্ভুত ভাবে হাসছে অয়ন।মেয়েটাকে ওর বেশ ভাল লেগেছে।আগের দিনের ঘটনা চিন্তা করতে থাকে ও।মাথায় ঘুরতে থাকে সেই হাসি টা।আনমনে লুচি টা খাওয়া শুরু করে,বেশ জোরে খিদে পেয়েছে ওর।ভাবছে এবার বন্ধুত্ব করেই নেবে।রোদ্দুর কি ভাববে,সেই চিন্তাও যখন মাথায় লাফালাফি করছে তখন পেটে গুড়গুড় আওয়াজ।ব্যস সারা সকাল বাথরুমেই অয়ন।রোদ্দুর এসে কিসব ওষুধ দিতে ঠিক হল ঠিক’ই, তবে শরীর টা দুর্বল হয়ে গেল অয়নের।
দুপুরবেলা বারান্দায় বসে।অনেক পুরনো।
“এটা নিরাপদ নয় ভাই।মেরামত করে ব্যবহার কর।”
“করে নেবো এখন চল!”
জোর করেই প্রায় নিয়ে এসেছে ওকে রোদ্দুর।
একটু বিরক্তি আর ভয় নিয়েই বসে।বাড়িতে পুজো এমনি,সপ্তমীর অঞ্জলিও দেওয়া হয় নি দুজনের ই।সে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে,হঠাৎ শ্রেয়া এলো।রোদ্দুর কে কানে কানে কি একটা বলল।কি বলছে, সেটা জানতে মন চাইছিল,কিন্তু উপায় নেই।ঘরে যাবে,তার আগে নীচ থেকে কে ডাকল শ্রেয়া বলে।বাড়ি ভরতি লোক,কত আত্মীয়।সবাই ব্যস্ত।শ্রেয়া আর রোদ্দুর পালিয়ে বেড়ায় কাজের ভয়।
শ্রেয়া এগোতেই বারান্দার রেলিং টা ভেঙে নীচে পড়লো আর সিমেন্টের চাই।শ্রেয়াও পরে যাচ্ছিল, কিন্তু পেছন থেকে একটা হাত তাকে টেনে আনল।
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল শ্রেয়া।আর একটু হলেই একটাবড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেত।
“দাদা তুই না থাকলে..” কথাটা বলতে বলতে পেছনে ঘুরতেই দেখে অয়ন।মুচকি হাসছে।
“অনেকক্ষণ ধরেই দেখছিলাম যা অবস্থা।রোদ্দুর কে বললাম ও।ও যা ভুঁড়ি বানিয়েছে,ওর উঠতে উঠতে এত ক্ষণে.. ”
“ঠিক আছে বেশি আহ্লাদিত হওয়ার কিছু নেই।”
মুখ বেঁকিয়ে চলে গেল শ্রেয়া।অদ্ভুত ভাল লেগে গেছে অয়নের শ্রেয়াকে।
“চল আমি একটু ঘুম দিই,বিকেলে তো আবার অনুষ্ঠান আছে!”
“হ্যাঁ আমি ও যাই। ”
বিকেলবেলা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছে।সব্বাই সেখানেই।অনেকক্ষণ বসার পর আর ভাল লাগছিল না।
“রোদ্দুর আমি একটু ঘুরে আসি….”
“কোথায়..?”
“তুই এখানে থাক আসছি।”
বাড়ির ছাদে চলে যায়। চুপ চাপ দাঁড়িয়ে থাকে।শ্রেয়ার মুখ টা বার বার মনে পড়ছে।
“সত্যি প্রেমে পড়ে গেলাম!”
নিজেকেই প্রশ্ন করে।এক দেখাতেই ভাল লেগে গেছিল অয়নের শ্রেয়াকে।কিভাবে বলবে,রোদ্দুর কি ভাববে,এই ধরনের নানাবিধ প্রশ্ন যখন তাকে এফোঁড় ওফোঁড় করছে,তখন মনে হল কে যেন ডাকছে!
“কে!”
“ভুলে গেলেন!”
” আরে শ্রেয়া?এখানে তুমি?”
“হ্যাঁ আপনি ও তো।”
“একদম ভাল লাগছিল না।তাই একটু.. ”
“কেন? ভাল লাগছে না কেন?”
“ইয়ে মানে থাক না। তুমি এখানে কেন?”
“থাকবে কেন? বললে মন হালকা হয়।”
“আগে তুমি।”
” আমাকে সব সময় কেন নোটিশ করা হয়?”
“কখন? মানে না তো।”
“অস্বীকার করে তো আর বাস্তব বদলায় না।”
“এমনি আর কি!”
“ও তাই বুঝি!”
“সত্যি তাই।”
“মন খারাপ কেন!”
“কাউকে ভাল লেগে গেলে কি করা উচিৎ, সেটাই ভাবছি।”
“বলে দেওয়া ভাল।”
“সেটা এক্কেবারেই উচিৎ নয়।”
শ্রেয়া অদ্ভুত ভাবে তাকালো অয়নের দিকে।তার পর হেসে এগিয়ে গেল।দরজার সামনে গিয়ে, শ্রেয়া বলে উঠল,
“এই যে শুনছেন স্যার!”
“বলো!”
“সিদ্ধান্ত সাহস করে নিতে হয় নইলে আপসোস করতে হয়।”
চলে গেল শ্রেয়া।অয়ন আকাশের দিকে চেয়ে থাকে।
অন্ধকার যেন ওর মন কে গ্রাস করছে!
।। ৩।।
“এই যে শুনছেন,এবার উঠুন। অঞ্জলি মিস করা যাবে না।”
ঘুম চোখ টা কোনো ভাবে খুলতেই চেয়ে দেখে সামনে শ্রেয়া।আজ অষ্টমী, শাড়ি পরেছে।গৌর বর্ণ,টিকালো নাক ভারি মিষ্টি লাগছে ওকে।
“আমি আসছি।ধন্যবাদ।আসলে আমার অভ্যাস নেই।”
“আপনাকে দেখলেই বোঝা যায়! ”
“এরকম অপমান সক্কালবেলা! ”
“আচ্ছা শার্ট পরবেন না।দাদার একটা পাঞ্জাবী আমি নিজে পছন্দ করে আপনার জন্য টেবিলে রেখেছি। ওটা পরবেন।তাড়াতাড়ি স্নানে যান। আমি আসি।”
অয়ন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
“শ্রেয়া মা ফুলগুলো একটু ওদিকে দিয়ে আয় না!”
“ঠাকুমা তুমি না!একটু বসতে দাও না আমায়।”
“সারা দিন ঘুরে বেড়াচ্ছিস আর এইসব বলছিস!যা এক্ষুনি।”
শ্রেয়া শাড়িতে খুব একটা অভ্যস্ত নয়।মন্ডপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, আঁচলের নীচের দিক পায়ে লেগে ফুলের থালাটা মাটিয়ে পড়ে যায়, সবার চোখ শ্রেয়ার দিকে।
“একটু দেখে চলতে পারো না!”
শ্রেয়ার কোমর টা ধরে নেয় অয়ন।চোখ খুলে অয়ন কে দেখে খানিক লজ্জায় পরে যায়। দাদার বন্ধু যে বেশ মনে ধরেছে, সে সব না বলাই থাক।
“আসলে শাড়িতে একটু…”
“বুঝেছি থাক,চলুন অঞ্জলি দিই।”
“একটা কথা বলবেন?আমাকে তুমি না আপনি বলবেন সেটা আগে বলুন!”
“আপনি বলুন?”
“তুমি টাই পছন্দ আমার।অগত্যা..”
দুজনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে অঞ্জলি দিল।অয়ন আজ চোখ সরাতেই পারছে না।
অনেক সাহস যুগিয়ে বলে,
“আমাকে তোমাদের গ্রাম টা দেখাবে?”
“এখন চলো।”
বাড়ি থেকে বেরিয়ে দুজন হাটতে লাগল।একটা বাচ্চা সাইকেল নিয়ে যাচ্ছিল, শ্রেয়া দিকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো।
“কি গো শ্রেয়া দি,আমাদের জামাইবাবু নাকি?”
“তুই কিন্তু খুব বদমাইশ হয়েছিস!”
“এখন সত্যি বললেই বদমাইশ। ”
অয়ন হেসে ফেলে। সেই দেখে শ্রেয়াও হাসতে থাকে।অদ্ভুত ভাবে দুজনেই কিছু অস্বীকার না করে, তাকিয়েছিল,একদম চুপচাপ।
“কি নাম তোর?” অয়ন জিজ্ঞাসা করে।
“রতন,রতন হালদার।”
“কি খাবি রতন বল?”
“কচুরি খাওয়াও।সক্কালবেলা থেকে কিছু…”
রতন কে কচুরি খাইয়ে ওর সাথে গল্পগুজব করে দুজনে বেরিয়ে পরে।মন্দির থেকে ধান ক্ষেত সব ঘুরে ঘুরে দেখে। অয়নের দারুণ লাগছিল,আর শ্রেয়া তো দুইবার ওর হাত ধরেছিল, সেই ঘটনা ভাবতে ভাবতে ফিরছিল ওরা।বাড়ির সামনে পৌছে যায়।রোদ্দুর দাঁড়িয়ে।
“শ্রেয়া,অভীকদা এসেছে। যা এক্ষুনি দেখা করে আয়। না বলে কোথায়…”
অয়ন থামিয়ে বলে,”ওকে বকিস না, আমি ই বলেছিলাম।”
“ও আচ্ছা ঠিক আছে,শ্রেয়া যা। ”
অয়ন ও ঘরে চলে গেল।দুপুরে ভোগ খেয়ে ঘুম।
ঘুম ভাঙল সন্ধ্যার ঢাকের আওয়াজে।রেডি হয়ে নীচে গেল।যেতেই রোদ্দুর ধরলো।
“সারা জীবন ঘুমিয়েই গেলি।আলাপ কর অভীক দা।”
“হ্যালো! ” অভীকবাবুর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল অয়ন।
“নাইস টু মিট ইউ।” বড্ড ঘ্যাম, তেমন পাত্তাই দিলো না।
বেশ খারাপ লাগল অয়নের।কিছু বলল না।সন্ধ্যা আরতির পর ধুনুচি নাচের পালা।সবাই বাড়িতে মত্ত।রোদ্দুর ও বেশ পটু কিন্তু বেশিক্ষণ পারলো না।অভীকবাবু আলাদা জামাকাপড় পরে এলো। অনেক পটু যেন, কিন্তু কিছুক্ষণ পরই ধপাস।অয়ন দাঁড়িয়েছিল।শ্রেয়া এলো পাশে।কানের কাছে এসে বলল, “আমারও দেখার ইচ্ছে আমার মনের মানুষ কেমন করতে পারে ধুনুচি নাচ।” পাঞ্জাবীর হাতা গুটিয়ে এগিয়ে গেল।তালে তালে এত সুন্দর নাচল যে সারা বাড়ির লোক প্রশংসায় পঞ্চমুখ। রোদ্দুরের বন্ধু যে খুব ভাল ধুনুচি নাচে সেটা নিয়ে আলোচনা।অভীকদাও এসে শুভেচ্ছা জানিয়ে গেল।
রাত হয়েছে, রোদ্দুর আর অয়ন বসে।পরশুদিন বিকেলে ট্রেন,সেই নিয়ে কথা।কথায় কথায় অয়ন বলে উঠল,
“এই অভীকদা কে রে!”
“বিলেত ফেরত ডাক্তার। খুব ভাল মানুষ। শ্রেয়ার বিয়ে ওর সাথেই দেবো। পাকা কথা প্রায় হয়ে গেছে।”
“শ্রেয়া জানে?”
“ওকে জানিয়ে দেবো পরে..”
“ওকে জানিয়ে দে।”
“সে হবে,তুই আসবি তো…”
“জানিস ই তো ছুটি পাই না।চেষ্টা করবো।মুখের হাসিটা উধাও হয়ে যায়, অয়নের।”
“তোর আবার কি হল?”
“মাথাটা ধরেছে,সেই সকাল থেকে পরিশ্রম। আর পারছি না।ঘুমাতে গেলাম।”
“আচ্ছা যা। ”
মন টা ভেঙে গেল অয়নের।একরাশ ক্লান্তি নিয়ে এগিয়ে গেল ঘরের দিকে।
।। ৪।।
ঘুম টা সকালেই ভেঙেছে আজ। ফ্রেশ হয়ে সেজে মন্ডপে বসলো অয়ন।শেষ দিন। শ্রেয়াও সেজেগুজে এসেছে।দুজনে গল্প করতে থাকে।অয়নের বাড়িতে কে কে আছে,ও কি করে অবসরে, কি খেতে ভালবাসে সে কত রকমের প্রশ্ন। অয়ন ও মাঝেমধ্যে করছে কিছু প্রশ্ন। দুজনে দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত ভাবে হাসছিল।কথাবার্তার মাঝে এলো রোদ্দুর। আড্ডা জমলো।ওদের কলেজের বিভিন্ন গল্প উঠে এলো, একবার অয়ন মারতে যায় রোদ্দুরকে তো একবার রোদ্দুর মারতে যায় অয়নকে।
আড্ডা যখন জমজমাট, তখন বেনুপিসি এসে বলে গেল বড়োকর্তা ডাকছে। শ্রেয়া আর রোদ্দুরের বাবা।অগত্যা দুজন গেল।অয়ন ও ঘরে গেল।
চেঁচামিচির আওয়াজে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে অয়ন।শ্রেয়ার ঘরের সামনে ভিড়।রোদ্দুর দাঁড়িয়ে।
“কি হল রে!”
“আরে বাবা অভীকদার কথা বলতেই এরকম করছে।দুপুরে কিছু খায়নি। কেউ পারেনি।”
“খাবারের থালা কই!”
ভেতরে ঢুকে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয় অয়ন।
“আরে কি হল, বন্ধ করলি কেন?”
“ভেতর থেকে উত্তর নেই।”
মিনিট দশ পর বেরিয়েছে অয়ন।থালা ফাঁকা।
“তোর কথায় খেলো?”
“খাবে না কেন?”
“ম্যাজিশিয়ান তুই ভাই।”
হাসে রোদ্দুর।
বিকেলবেলা অনুষ্ঠান ছিল।অয়ন ছিল আসেনি শ্রেয়া।ভাল লাগছিল না ওর।ঘরে গিয়ে প্যাকিং সেরে ফেলল।কাল দুপুরেই রওনা দেবে।দিয়ে ছাদে গেল।ক্লান্ত লাগছিল।ঠান্ডা হাওয়া খেলে বেড়াচ্ছে,অয়ন চোখ বন্ধ করেছিল।হঠাৎ পেছন থেকে কে জড়িয়ে ধরলো।অয়ন সামনে ঘুরতেই ওকে ভাল করে জড়িয়ে ধরলো।
“এটা ঠিক হচ্ছে না।”
“আমি তোমাকে ভালবাসি।আমি জানি তুমিও..”
“রোদ্দুর আমার ছোটবেলার বন্ধু।ওর বিশ্বাস নিয়ে খেলতে আমি পারব না।”
“আমাদের ভালবাসার বলিদান দেবে?”
“না সারা জীবন ভালবেসেই যাব। ”
“ভুল করলে,শ্রেয়া দূরে সরে যায়। কেউ আমায় তোমায় ভালবাসা থেকে আটকে দেখাক।”
চলে যায় শ্রেয়া।অয়ন চোখটা মুছে নেয়।কাল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেরিয়ে যেতে হবে।
।।৫।।
সক্কালবেলা জল খাবার খেয়ে রেডি হয়ে নেয়।সবার সাথে চলে প্রচুর ইয়ার্কি। একমাত্র শ্রেয়া। একবারও দেখাই করে নি।অনেক বার অয়ন ডেকেছিল।দুপুরবেলা একসাথে খেয়ে সবার সাথে খেয়ে মাকে প্রণাম করে দরজার সামনে দাঁড়াল। রিক্সা আসলেই রওনা দেবে।
“এইত্ত চলে এসেছে রিক্সা। সাবধানে যাস। ”
“ওয়েট আ মিনিট।আমি দশ মিনিটে আসছি।”
“কোথায় যাচ্ছিস? ”
না বলেই হাওয়া।মিনিট কুড়ি পর ফিরে এলো।
“গেছিলিস কই!” রোদ্দুর বলে।
“এই একটা কাজ বাকি ছিল।আসি আমি এইবার। ”
রিক্সায় উঠে পরে।
শ্রেয়া আর রাগ করে থাকতে পারে না।নীচে ছুটে যায়, ততক্ষণে অয়ন চলে গেছে।ঘরে এসে প্রচুর কাঁদে।
সন্ধ্যায় বিসর্জন। যেতেই হবে।মন ভাল নেই। একাই ছিল।বাড়ির সবাই আনন্দে আছে।ঘাটে মায়ের বিসর্জন হল।সব আনন্দ নিমেষ এ শেষ। সবাই বাড়ির দিকে ফিরছে।রতনও গেছিল।
“ও শ্রেয়া দি!”
“বল।”
“জামাইবাবু একটা কাগজ তোমায় দিয়ে দিতে বলেছিল।আমায় পঞ্চাশ টাকাও দিয়েছে।আমার কাজ শেষ। আসি।”
কাগজ টা নিয়ে শ্রেয়া খুলে ফেলে,তাতে লেখা ছিল ,
” এই যে পাগলি।আমি ভার্জিন। সেই দিন প্রথম কাউকে চুমু খেয়েছিলাম,উপায় ছিল না অন্যভাবে খাওয়ানোর।যা জেদি, একবার ও দেখাও করলো না।আমি ও খুব ভালবাসি।ভেবে নিও এই অগোছালোটাকে সামলাতে পারবে তো? তাহলে সাহস করে রোদ্দুর কে বলেই দেব।ফোন নম্বর -৭০৪৭৫৬৬৬১৪ রইল, আশা করি আজ রাতেই কথা হবে।মা,বাবাকে নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি আসছি।”
চোখ থেকে জল চিঠিতে পরে।চিঠিটা আগলে ধরে বুকে শ্রেয়া।বিসর্জন যে একটা শুভারম্ভ বুঝতে পারে ও।দূরে আর একটা ঠাকুর আসছে বিসর্জনের উদ্দেশ্য। একটা ধ্বনি কানে ভেসে বেড়াচ্ছে, “আসছে বছর আবার হবে।”
(সমাপ্ত)
লেখক – বিশ্বরূপ চক্রবর্তী