এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত! প্রতিবারের ন্যায় ধর্মীয় উৎসবে মেতে ছিলেন সবাই। প্রথা মেনে চলছিল পাঠ, নামগান। আচমকাই গ্রেনেড বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল গোটা সভাস্থল। উৎসবের ছবি বদলে গেল আতঙ্কে। প্রার্থনার সুর বদলে গেল আর্ত চিৎকারে। জঙ্গি হানায় রক্তাক্ত হল অমৃতসর।
রবিবার অমৃতসরের রাজাসানসির কাছে আদলিওয়াল গ্রামে একটি ধর্মীয় সভাস্থলে প্রার্থনা চলাকালীন সময় হামলা চালাল জঙ্গিরা। বিস্ফোরণের তীব্রতায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হল তিনজনের। গুরুতর জখম হলেন অন্তত ১০ জন। হামলার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছন পুলিশের আইজি এস এস পারমার।
সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, গ্রামের গুরুদ্বার নিরাঙ্কারি ভবনে এক প্রার্থনাসভায় যোগ দিয়েছিলেন নিরাঙ্কারি সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান থেকে জানা গিয়েছে, প্রার্থনা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখোশ পরিহিত, সশস্ত্র ২ বাইকআরোহী সভাস্থলে হানা দেয়। এক মহিলা ভক্তের দিকে বন্দুক তাক করে মোটরবাইক নিয়েই সভাস্থলের ভিতরে ঢুকে পড়ে তারা। সেই সময় প্রায় ২০০ জন ভক্ত হাজির ছিলেন। তাঁদের লক্ষ্য করে হ্যান্ড গ্রেনেড ছোঁড়ে জঙ্গিরা। এরপরেই গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে চম্পট দেয় জঙ্গিরা। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তিনজনের। জখম ১০ জনের মধ্যে দু’জনের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।
তদন্ত শুরু করার পাশাপাশি জখমদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান পুলিশকর্মীরা। ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদও করেন তদন্তকারীরা। রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি পৃথক তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাও। ইতিমধ্যেই সিল করে দেওয়া হয়েছে নিরঙ্কারি ভবনটি। তবে ওই ভবনে কোনও সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় হামলাকারীদের চিহ্নিত করা যায়নি। জঙ্গিদের খোঁজে গোটা এলাকায় চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। সতর্ক করা হয়েছে আশপাশের থানা-প্রশাসনকে। পাশাপাশি, রাজ্যের অন্যান্য নিরঙ্কারি ভবনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
অন্যদিকে, হামলার পিছনে কোনও জঙ্গি সংগঠনের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন পাঞ্জাব পুলিশের ডিজি সুরেশ আরোরা। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় কোনও জঙ্গি সংগঠনের হাত রয়েছে। কারণ এই হামলার ঘটনাটি কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঘটেনি। হামলার নিশানায় ছিলেন এক গোষ্ঠীর মানুষরা। তাঁদের লক্ষ্য করে হ্যান্ড গ্রেনেড ছোঁড়া বা ওই গোষ্ঠীর মানুষদের উপরে হামলা চালানোর নির্দিষ্ট কোনও কারণ নেই। এই সমস্ত ঘটনাবলীর উপর নজর রেখে গোটা বিষয়টিকে জঙ্গি হামলা ধরেই তদন্ত করছি আমরা।’
ধর্মীয় সভাস্থলে হামলার তীব্র নিন্দা করে নিহতদের পরিবারপিছু পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং। হামলায় জখমদের চিকিৎসার ব্যয়ভার রাজ্য সরকার বহন করবেন বলেও জানান তিনি।