মাত্র ১২ দিনেই নাকি বদলে যাবে গোটা পুরী স্টেশনের হালহকিকত। যাওয়া-আসার ‘কনফার্মড’ টিকিট হাতে পেয়ে যাঁরা নিশ্চিন্ত মনে পুরীযাত্রার পরিকল্পনা করেছিলেন, ভারতীয় রেলের একটি এসএমএসে তাঁদের আক্কেল গুড়ুম। রেলের পক্ষ থেকে এসএমএস করে যাত্রীদের জানানো হয়েছে, পুরী স্টেশনে সংস্কারমূলক কাজ চলবে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে টানা ১২ দিন ধরে I
২৫ সেপ্টেম্বর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে জানা গেছে রেল সূত্রে। এই কারণে বহু ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। অনেক ট্রেনের আবার গন্তব্যের আগেই যাত্রা শেষ হবে বলে জানা গেছে। আচমকা ট্রেন বাতিলের এমন ঘোষণায় চরম সমস্যায় যাত্রীরা। ভারতীয় রেলের তরফে এই ঘোষণা শোনার পরেই মাথায় হাত পড়েছে পর্যটকদের। পুজোর আগেই পুরী যাওয়ার ট্রেনের টিকিট বুক করে রেখেছিলেন বহু যাত্রী। হোটেল বুকিংও হয়ে গিয়েছিল অনেকের। রেলের কাজ চলার সময় যাঁদের ফেরার কথা, তাঁরা কীভাবে পুরী থেকে ফিরবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।এভাবে ট্রেন বাতিল হলে আদৌ টিকিট বিক্রি করা হয়েছিল কেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে? যাত্রী দুর্ভোগে দুঃখপ্রকাশ করে দক্ষিণ-পূর্ব রেলে মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেছেন, ‘সংস্কারের কাজ শুরুর নেপথ্যে লম্বা তোড়জোড় থাকে। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত দল সবুজ সঙ্কেত দিলে সংস্কারের মূল প্রক্রিয়ায় হাত দেওয়া হয়। পুরী স্টেশনের সংস্কারের প্রয়োজন। গোটা স্টেশনেরই পরিবর্তন হবে। তাই ১২ দিন আমরা ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি।’ তবে, আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকেই যে সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হবে সেটা আগে ঠিক হয়নি বলেই জানিয়েছেন তিনি।
২০১৫-য় জগন্নাথের ‘নব কলেবর’ উৎসবের কিছুদিন আগে পুরী-খুর্দা রোড সিঙ্গল লাইন বদলে ডবল লাইন করা হয়েছিল। তার পরে এ বারের উদ্যোগ। ভারতীয় রেল জানাচ্ছে, হাওড়া-চেন্নাই মেন লাইনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জংশন স্টেশন খুর্দা রোড। এখান থেকে খুর্দা রোড-পুরী ব্রাঞ্চ লাইনের সূত্রপাত। জংশন স্টেশন না হলেও ‘টার্মিনাল স্টেশন’ হিসাবে পুরী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই স্টেশনে দিনে গড়ে ৫৪টি দূরপাল্লার ট্রেন আসে। দৈনিক অন্তত ১৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। রেলের দাবি, ১২ দিন টানা কাজ করতে পারলে পুরী স্টেশনের যে পরিবর্তন হবে, তার ফল মিলবে সঙ্গে সঙ্গে। কী কাজ হবে পুরী স্টেশনে? সঞ্জয় জানান, প্ল্যাটফর্মগুলির দৈর্ঘ্য বাড়ানো হবে। সেটা হলে ইয়ার্ডের নকশা, সিগন্যাল-ব্যবস্থা, ওভারহেড তার, পয়েন্ট, স্লিপার- সব বদলাবে। বর্তমানে প্ল্যাটফর্মগুলির যা দৈর্ঘ্য, তাতে ২২ কোচের ট্রেন দাঁড়াতে পারে। সংস্কারের পরে সেগুলি ২৬ কোচের ট্রেন দাঁড়ানোর উপযুক্ত হবে।
কিন্তু আচমকা ট্রেন বাতিলের ঘোষণায় বেজায় বিপদে পড়েছেন এই মুহূর্তে পুরীতে থাকা পর্যটকরা। এঁদের মধ্যে রয়েছেন নাট্যকার চন্দন সেন। তিনি বলেন, ‘এমনটা হবে জানলে টিকিট বাতিল করে দিতাম। গোপালপুরে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে একবার পুরীতে ঢুঁ দিয়ে ফিরব – এমনটাই পরিকল্পনা ছিল। মুশকিলে পড়ে গিয়েছি। নাটক, মহড়া সব তারিখ ঠিক করা আছে।’ অনেকে আবার ভুবনেশ্বর থেকে ফিরতি ট্রেন বা দূরপাল্লার বাস ধরার কথা ভাবছেন।
কোন ট্রেন কবে বাতিল:
পুরী-হাওড়া বাই উইকলি এক্সপ্রেস (১৭, ১৯ ও ২৪ সেপ্টেম্বর)
হাওড়া-পুরী বাই উইকলি এক্সপ্রেস (১৮, ২০ ও ২৫ সেপ্টেম্বর)
পুরী-যশোবন্তপুর গরিব রথ এক্সপ্রেস (১৪ ও ২১ সেপ্টেম্বর)
যশোবন্তপুর-পুরী গরিব রথ এক্সপ্রেস (১৫ ও ২২ সেপ্টেম্বর)
পুরী-চেন্নাই সেন্ট্রাল এক্সপ্রেস (১৬ ও ১৯ সেপ্টেম্বর)
চেন্নাই সেন্ট্রাল-পুরী এক্সপ্রেস (১৭ ও ২৪ সেপ্টেম্বর)
পুরী-আহমেদাবাদ এক্সপ্রেস (১২ ও ১৯ সেপ্টেম্বর)
আহমেদাবাদ-পুরী এক্সপ্রেস (১৪ ও ২১ সেপ্টেম্বর)
পুরী-হাওড়া এক্সপ্রেস (১৬ ও ২৩ সেপ্টেম্বর)
হাওড়া-পুরী এক্সপ্রেস (১৭ ও ২৪ সেপ্টেম্বর)
গান্ধীধাম-পুরী এক্সপ্রেস (১৪ ও ২১ সেপ্টেম্বর)
পুরী-গান্ধীধাম এক্সপ্রেস (১৭ ও ২৪ সেপ্টেম্বর)
গান্ধীধাম-পুরী এক্সপ্রেস ভায়া ভিজিয়ানাগ্রাম (১২ ও ১৯ সেপ্টেম্বর)
পুরী-গান্ধীধাম এক্সপ্রেস (১৫ ও ২২ সেপ্টেম্বর)
লোকমান্য তিলক-পুরী এক্সপ্রেস (১৬ সেপ্টেম্বর)
পুরী-লোকমান্য তিলক এক্সপ্রেস (১৮ সেপ্টেম্বর)
শিয়ালদহ-পুরী এক্সপ্রেস (১৪, ১৭, ১৯ ও ২১ সেপ্টেম্বর)
পুরী-শিয়ালদহ এক্সপ্রেস (১৫, ১৮, ২০ ও ২২ সেপ্টেম্বর)
পুরী-হাওড়া শতাব্দী এক্সপ্রেস (১৫ ও ২২ সেপ্টেম্বর)
হাওড়া-পুরী শতাব্দী এক্সপ্রেস (১৫ ও ২২ সেপ্টেম্বর)
ভঞ্জপুর-পুরী স্পেশ্যাল (১৪ ও ২১ সেপ্টেম্বর)
পুরী-ভঞ্জপুর স্পেশ্যাল (১৫ ও ২২ সেপ্টেম্বর)
রৌরকেল্লা-পুরী প্যাসেঞ্জার (১৪ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর)
পুরী-রৌরকেল্লা প্যাসেঞ্জার (১৫ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর)
খুর্দা রোড-পুরী-খুর্দা রোড প্যাসেঞ্জার (১৪ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর)
খুর্দা রোড-নয়াগড় টাউন-খুর্দা রোড প্যাসেঞ্জার (১৪ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর)