প্রতিবারই দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি নিয়ে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সদ্য নেতাজি ইন্ডোরে বসেছিল সেই বৈঠক। এবারের বৈঠকে মঞ্চ থেকে বক্তব্য রাখার সময় মমতা বলছিলেন, ‘নিজে হয়তো সব পুজোতে উপস্থিত থাকতে পারি না, কিন্তু খেয়াল রাখবেন, আমি কিন্তু সব পুজো কমিটির সঙ্গেই আছি।’ এটা যে স্রেফ কথার কথা নয়, সেটা ফের একবার প্রমাণ করে দিলেন নিজের বক্তব্যের শেষে। দুর্গাপুজোর আয়োজক পুজো কমিটিগুলোর জন্য ২৮ কোটি টাকার উপহার ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে জানিয়ে দিলেন এবারের বিসর্জনের তারিখ এবং এ বছর রেড রোডে কার্নিভ্যালের পরিকল্পনাও।
সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পুজো কমিটিগুলোর সঙ্গে পুলিশ, দমকল, সিইএসসি-সহ বিভিন্ন দফতরের সমন্বয় বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কলকাতায় বড় ছোট সব মিলিয়ে তিন হাজার বারোয়ারি পুজো হয়। জেলায় হয় আরও ২৫ হাজার বারোয়ারি পুজো। এই ২৮ হাজার পুজো কমিটির প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এর জন্য মোট ২৮ কোটি টাকা খরচ হবে। রাজ্যবাসীর জন্য এটাই আমাদের ক্ষুদ্র উপহার।’ শুধু অনুদান নয়, এদিন মমতা ঘোষণা করেন, রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ এবং সিইএসসি পুজো কমিটিগুলির জন্য বিদ্যুতের মাশুলে ছাড়ের পরিমাণ আরও তিন শতাংশ বাড়াবে। গত বছর পর্যন্ত ২০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হত। এবছর সেই পরিমাণ বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করার নির্দেশ দেন তিনি। অন্যদিকে, কলকাতা পুরসভা, দমকল বা অন্য কোনও রাজ্য সরকারি দফতর যাদের কাছ থেকে পুজো করার জন্য অনুমতি নিয়ে হয়, সে জন্য তাদের একটা লাইসেন্স ফি দিতে হত। এ দিন সেই লাইসেন্সের জন্য নির্দিষ্ট ফি বা মূল্য মুকুবের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, এবছরে পুজো কমিটিগুলোকে দমকল ও বিদ্যুতের অনুমতি নিতে জন্য কোনও টাকা দিতে হবে না।
পুজো সমন্বয় কমিটির বৈঠকে শুধু দুর্গাপুজো নয়, মহরমের কথাও মাথায় রাখতে হবে বলে মমতার নির্দেশ, ‘আগামী ২১ তারিখে মহরম আছে। আপনারা কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না।’ নাম না করে বিজেপিকেও বিঁধতে ছাড়েননি মমতা। বলেন, ‘এখন একটা উদ্ভট রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব হয়েছে। ধর্মের ইজারা যেন ওরা একাই নিয়ে বসে আছে। ওদের উস্কানিতে কান দেবেন না। ওরা মানু্ষে মানুষে ঝগড়া লাগাতে চায়। ধর্মকে হাতিয়ার করে দাঙ্গা লাগাতে চায়। কিন্তু আমরা সব ধর্মকেই ভালবাসি। সবাইকে সাথে নিয়ে চলার নামই ধর্ম। সেটা সকলে মাথায় রাখবেন।’ মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির নাম না করে অভিযোগ করেন, কিছু লোক সোশ্যাল মিডিয়াতে গতবারের বিসর্জন নিয়ে কুৎসা করেছে। তাঁর কথায়, ‘কত কুৎসা! কাজ নেই কর্ম নেই। শুধু মিথ্যে কথা বলে। এক একটা ছবি দেবে। দাঙ্গা লাগিয়ে দেবে। এভাবেই মার্কেট করে। আগুন লাগানো সহজ। আগুন নেভানো কঠিন। আগুন নিয়ে কাউকে খেলতে দেব না।’
এ বছর বিজয়া দশমী ১৯ অক্টোবর। এবারে ১৯ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত বিসর্জন দেওয়া যাবে। প্রথমে পুলিশ ২১ তারিখ পর্যন্ত বিসর্জনের দিন নির্দিষ্ট করলেও, মুখ্যমন্ত্রী নিজে সেই দিন ২২ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে নির্দেশ দেন। ২৩ তারিখ পুজো কার্নিভালের দিন ঠিক করে দেন তিনি। ২৩ অক্টোবর বিকাল চারটেয় রেড রোডে রাজ্য সরকারের আয়োজনে হবে এই কার্নিভাল। গতবার এই কার্নিভালে অংশগ্রহণ করেছিল ৫৫টি পুজো কমিটি। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছেতেই, এবার সেই সংখ্যাটা ৫৫ থেকে বেড়ে হবে ৭৫। এ বছর আরও ২০টি পুজো কমিটি বেশি অংশগ্রহণ করবে বলে তিনি জানান। ২৪ অক্টোবর লক্ষ্মীপুজো। লক্ষ্মীপ্রতিমা বিসর্জন দিতে হবে ২৬ অক্টোবরের মধ্যে।
এদিনের সমন্বয় বৈঠকে বিভিন্ন পুজো কমিটির সদস্যরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা, সাংসদ বিধায়ক ও মন্ত্রীরা। এছাড়া সব ধর্মের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। এঁদের মধ্যে অনেকেই মঞ্চে বক্তব্য পেশ করেন। মমতা বলেন, ‘বাংলায় সব ধর্মের মানুষ বাস করেন। উত্সাব সকলের।’ উত্সেবে সকলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, ‘বাজার মন্দা। লোভের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন না। ভিক্ষে চাইবার দরকার নেই। কেউ কেউ টাকা দিয়ে পুজো কমিটিগুলিকে কিনতে চাইবে। আপনারা তা হতে দেবেন না।’