শিয়ালদা–দক্ষিণ শাখার যাদবপুর স্টেশন। ধর্মঘটের সমর্থনে তখন লাইনে নেমে রেল অবরোধ করেন ধর্মঘটীরা। ট্রেনে তখন উপচে পড়া ভিড়। তিল ধারণের জায়গা নেই। অধিকাংশই অফিসযাত্রী। ভিড়ে–ঠাসা লোকাল ট্রেনের জানালা-দরজা থেকে মুখ বাড়িয়ে যাত্রীরা বন্ধ সমর্থকদের অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ-আবেদন করতে থাকেন। সপ্তাহের প্রথম দিন। কর্মস্থলে যেতে দেরী হয়ে যাচ্ছে। অনেকের অন্য জরুরি দরকারও আছে। বনধ সমর্থকদের দাবি, যাত্রীরা জানেন, কেন অবরোধ। তাঁরা সমর্থনও করছেন। ট্রেনের ভেতর থেকেই যাত্রীরা পাল্টা বলেন, পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে আমরাও ভুক্তভোগী। কিন্তু ট্রেন আটকে সেই সমস্যার সমাধান হবে না। প্রথমে ধর্মঘটীরা পাত্তা দেননি। কিন্তু যাত্রীদের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। শেষে ট্রেন থেকে নেমে লাইন থেকে অবরোধকারীদের হটিয়ে দেন তাঁরা। ঝাণ্ডা গুটিয়ে লাইন থেকে উঠে পড়তে বাধ্য হল ধর্মঘটীরা। মিনিট কুড়ি পর ফের চালু হয়ে যায় ট্রেন চলাচল।
আর পাঁচটা কাজের দিনের মতো সোমবারও স্বাভাবিকভাবেই খোলা থাকল স্কুল, কলেজ, অফিস, কাছারি, দোকান পাট। বাঘাযতীন স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল অবরোধকারীরা। জনতার দাবিতে পুলিশ এসে সেই তালা ভেঙে দেয়। পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এভাবেই কংগ্রেসের ডাকা ভারত বনধ ব্যর্থ করে অবরোধকারীদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ালেন স্বতঃস্ফূর্ত আমজনতা।
ভারত বন্ধে রাজ্যের অন্তত দু’টি জায়গায় ট্রেন-বাস আটকে গা-জোয়ারি করে বন্ধ করতে গিয়ে বিরক্ত-ক্ষুব্ধ যাত্রীদের পাল্টা বিক্ষোভের মুখে পড়ে অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য হয় ধর্মঘটীরা। এমন ঘটনা সাম্প্রতিককালে নজিরবিহীন। এই ঘটনা বন্ধ সমর্থকদের কাছে বাংলার মানুষের দেওয়া কর্মনাশা বনধের বিরোধিতায় এক নিশ্চিত এবং অমোঘ সঙ্কেতও বটে।
একই সময়ে পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদায় অবরোধে আটকে পড়েন বাসযাত্রীরা। অবরোধকারীদের সঙ্গে তাঁদের কথা কাটাকাটি হয়। ক্রমে তা গড়ায় বচসায়। যাদবপুরের মতো একইভাবে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা বাস থেকে পথে নেমে সটান অবরোধ তুলে দেন। বাসযাত্রীদের ক্ষোভের মুখে পড়ে মেচেদাতেও এসইউসিআই সমর্থকদের পাততাড়ি গুটোতে হয়।
এদিন রাস্তায় বাস–ট্রাক নামানোর জন্য অনেক জায়গায় চালকদের হাতে গোলাপফুল দিয়ে অভিনন্দন জানায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি। ধর্মঘটে অংশ না নিয়ে যানচলাচল সচল রাখার জন্য হলদিয়ার সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড থেকে মিছিল বের করে তৃণমূলের শ্রমিক সংঠন। সেই মিছিল থেকে বাস ও ট্রাকচালকদের হাতে তুলে দেওয়া হয় গোলাপ। আর অবরোধকারীদের পথে কাঁটা বিছিয়ে দেয় আমজনতা।