যোগী রাজ্য উত্তরপ্রদেশ। এখানেই নেপাল সীমান্তে গোরক্ষপুরের একটা অংশের নাম মগহর। মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে মায়াবতী এই মগহরকে গুরুত্ব দেন। আলাদা জেলা করেন, নাম দেন সন্ত কবির নগর। যা এখন একটি আস্ত লোকসভা কেন্দ্র। প্রচলিত ধারণা কাশীতে মৃত্যু মানে অনন্ত স্বর্গবাস। আর মগহরে মৃত্যু মানে অনন্ত নরকবাস। কবির বলেছিলেন, আমি মগহরেই মরতে চাই। কিন্তু তাতেও কি নিস্তার আছে!
কবির হিন্দু ছিলেন, এই দাবি করে কবিরপন্থীদের দু’ভাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যার একভাগকে বিজেপি কাজে লাগাচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, ২০১৮ সালের ২৮ জুন কবিরের সমাধিতে চাদর চড়াতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, এখানে বসে বাবা গোরক্ষনাথ (একাদশ শতাব্দী), সন্ত কবির (১৩৯৮–১৫১৮ খ্রিঃ) এবং গুরু নানক (১৪৬৯–১৫৩৯ খ্রিঃ) আধ্যাত্মিক আলোচনা করতেন। হাসা যাবে না, ধর্মের ব্যাপার তো!
শারদ ত্রিপাঠি এখানকারই সাংসদ ছিলেন। তাঁরই কেন্দ্রের একজন বিধায়ক রাকেশ সিং বাঘেল (বিজেপি)। একটি অনুষ্ঠানে দু’জনেই হাজির। ফলকে সাংসদ তাঁর নাম না দেখে রেগে লাল। বিধায়ককে সাংসদ জুতোপেটা করেন। এবার তিনি প্রার্থী হতে পারেননি। শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এরকম সিদ্ধান্ত তা ভাবাটা বোকামি হবে। আসল লক্ষ্য নিষাদ ভোট। সন্ত কবির নগর, কুশিনগর, গোরক্ষপুর, ফুলপুর— উত্তরপ্রদেশ ও বিহার জুড়ে বিরাট সংখ্যক নিষাদের বাস।
ফুলনদেবী ও বিশ্বম্ভর নিষাদ সফল সাংসদ হওয়ার পরই নিষাদ ভোটব্যাঙ্কের দিকে সবার নজর পড়ে। বিহারের মুকেশ সাহনিকে দেখে উৎসাহ পেয়ে গোরক্ষপুরের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সঞ্জয় নিষাদ ১৭ শতাংশ নিষাদকে ঐক্যবদ্ধ করতে একটি দল গড়েন। ভিন্দ, কেওয়াট, বেলজার, বানপর— সবাই নিষাদ। মূলবাসীর স্বীকৃতিই দাবি।
২০১৭ সালে যোগী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় গোরক্ষপুরে উপনির্বাচন হয়। ১৯৯৮-২০১৭। পাঁচবার এই কেন্দ্রের সাংসদ যোগী। নিষাদ ভোটের তোপে উড়ে যায় বিজেপি। সঞ্জয়-পুত্র প্রবীণ নিষাদ সাংসদ হন। এবার নির্বাচনে প্রবীণ নিষাদ সন্ত কবির নগরে যোগীরই পছন্দের প্রার্থী। যোগী নাকি টাকার খেলায় হাত করেছেন প্রবীণের পিতা সঞ্জয়কে। তবু বিজেপির রাতের ঘুম ছুটেছে। কারণ, প্রবীণের পাশে গতবার সপা ছিল। এবার কংগ্রেসের পরভেজ খান বেশিরভাগ মুসলিম ভোট কাটতে না পারলে যোগীকে কাঁদতে হবে।
কাশ্মীরি পণ্ডিত মতিলাল নেহেরুর রাজনৈতিক অভিযান শুরু উত্তরপ্রদেশ থেকেই। জওহরলাল নেহেরু কিন্তু নির্বাচনে দাঁড়াতে যান সংলগ্ন ফুলপুরে। এখানে কুর্মি, পটেল, নিষাদ ভোট খুবই বেশি। তখন তো নিম্নবর্গের সব ভোটই কংগ্রেসের। নেহেরু কখনও ঠাঁই বদল করেননি। ফুলপুরে এবার বিজেপির কেশরীদেবী প্যাটেলের ভরসা ভোট ভাগাভাগি। কংগ্রেসের পঙ্কজ নিরঞ্জন এবং সপার পানধারি যাদব। একটু হলেও পাল্লা ভারী পানধারির।
এলাহাবাদই এখন প্রয়াগরাজ। কুম্ভমেলার সময় গঙ্গা দূষণ রুখতে কানপুরের চর্মশিল্প প্রায় বন্ধ ছিল ছ’মাস। সাধুরা চলে গেছেন। প্রয়াগের গঙ্গাপাড়ে বিপুল জঞ্জাল। কেউ দূষণ নিয়ে টু শব্দটি করছে না। ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ তো আছেই। আবার বিজেপির রীতা বহুগুণা যোশিকে বিজেপির অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। অন্যদিকে, সপা-বসপা জোটের প্রার্থী আশিস প্যাটেল বেশ প্রভাবশালী। যাদব ও নিম্নবর্গের সব ভোট তাঁর পাওয়ার কথা। মুসলিম ভোটও অনেক। ত্রিমুখী লড়াইয়ে এগিয়ে তাই আশিস।
বরাবরই উত্তরপ্রদেশে ভোট হয় জাতপাতে, বাহুবলে, অর্থবলে। তার মধ্যে মানুষ মাঝে মাঝে জোট বাঁধে বাহুবল ও অর্থবলের বিরুদ্ধে। তখন হিসেব মেলে না। তবে এবার জাতি সমীকরণ বুঝেই দলীয় প্রার্থী করতে সব দল তাদের নীতির বাইরে ছুটছে।