হুগলী নদীর তীরেও প্রকট হল গেরুয়া শিবিরের ভাঙন। প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই জেলা নেতৃত্বের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন ‘বহিরাগত’ লকেট চট্টোপাধ্যায়। প্রথমে তাঁর প্রার্থী হওয়ায় ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে নিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন রাজ্য সহ সভাপতি রাজকমল পাঠক। আর তারপর ভোটে কাজ না করার কথা জানিয়ে দিয়েছেন আর এক সহ সভাপতি রাজকুমারী কেশরী। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, বাইরের প্রার্থী আমরা কোনওভাবেই মানব না।
বিজেপির দাবি ছিল, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাংলার ৪২ টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২২ থেকে ২৩টা আসন থাকবে তাদের দখলে। কিন্তু রাজনৈতিক গতি প্রকৃতি যে আকার নিচ্ছে এবং বিজেপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর যেভাবে দলেরই একাংশ প্রকাশ্যে বিদ্রোহ এবং অসন্তোষ দেখাতে শুরু করেছে, তাতে গেরুয়া শিবিরের সেই স্বপ্ন কতটা সার্থক হবে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে তৈরি হয়েছে একটা বড়মাপের প্রশ্ন চিহ্ন।
প্রসঙ্গত, রাজকমল পাঠক পদত্যাগ করার পর থেকে ক্রমাগতই তাঁর অনুগামীরা দলীয় প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সমর্থনে প্রচার না করার হুঁশিয়ারিও দিয়ে যাচ্ছেন। আর রাজকুমারীদেবীও সরাসরি অভিযোগ করেছেন রাজ্য বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু এবং দীপাঞ্জন গুহর বিরুদ্ধে। তাঁর দাবি, হুগলী কেন্দ্রে আমার প্রার্থী হওয়া প্রায় নিশ্চিত ছিল। চক্রান্ত করে এই নেতারা বিজেপির হুগলী জেলা সভাপতি সুবীর নাগের ইন্ধনে আমার হাতে তৈরি এলাকায় বাইরের লোককে প্রার্থী করেছে। নির্বাচনে এর যোগ্য জবাব দেওয়া হবে।
ফলে সব মিলিয়ে বেশ ভাল হুগলীতে এমন গোষ্ঠীদ্বন্দের কারণে
প্রার্থী তালিকা প্রকাশের চার-চারটে দিন কেটে গেলেও নমো নমো করে দু-একটি কর্মসূচি সেরে এসে সকাল থেকেই পার্টি অফিসে বসে দলীয় কর্মীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুনতে শুনতেই দিনের অধিকাংশ সময় কেটে যাচ্ছে লকেটের। জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে এগারোটার সময় চুঁচুড়ার জেলা কার্যালয়ে হআজির হয়ে, সেখানে প্রথমেই দলের যুব এবং মহিলা মোর্চার কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন তিনি।
তবে সেখানেই মগরা ও একাধিক মন্ডলের যুব নেতা দলীয় প্রার্থীর সামনে প্রকাশ্যেই জেলা বিজেপির সভাপতির বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তোলেন। যা নিয়ে শুরু হয়ে যায় তুমুল হই-হট্টগোলও। ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় লকেটকে। পরে কিছুটা হতাশ হয়েই সবাইকে শান্ত হতে বলে তিনি বলেন, ‘কী গন্ডগোল আছে এখন তা দেখবার সময় নেই। নির্বাচনে সবাই ভালো করে কাজ করুন।’ কিন্তু ঠিক কী অভিযোগ রয়েছে হুগলি জেলা বিজেপির সভাপতি সুবীর নাগের বিরুদ্ধে? কেন তিনি দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে দলের কর্মী-সমর্থকদের ময়দানে নামাতে পারছেন না? সুবীরের সাফাই, ‘কিছু সমস্যার কথা কর্মীরা বলেছে। এটাকে ক্ষোভ-বিক্ষোভ বলা যায় না। সব ঠিক হয়ে যাবে।’
এদিকে হুগলীতে যখন দলীয় প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে তীব্র অসন্তোষ শুরু হয়েছে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের মনে, ঠিক তখনই শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দেবজিত সরকারের সমর্থনে মাহেশের স্নানপিঁড়ি মাঠে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদের জনসভা করার জন্য প্রায় সমস্ত কিছু ঠিক হয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত তা বাতিল হয়ে যাওয়াতে বিজেপি নেতা কর্মীদের মনে তৈরি হয়েছে তীব্র হতাশা। আচমকা বিজেপির এই হেভিওয়েট নেতার সভা বাতিল হওয়ায় দলের ভিতরেও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
সব মিলিয়ে বাংলার ২২-২৩ আসন নিজেদের দখলে রাখবার জন্য বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব রাজ্য নেতৃত্বকে নির্দেশ দিলেও শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রার্থী নিয়ে যেভাবে রাজ্যের বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি কর্মীদের প্রকাশ্যে বিদ্রোহ শুরু হয়েছে, তাতে সেই স্বপ্ন গেরুয়া শিবিরের কতটা সার্থক হবে তা নিয়ে সন্দিহান রাজনৈতিক মহল। কারণ গোটা রাজ্যজুড়েই এই মুহূর্তে অন্তর্কলহে জেরবার গেরুয়া শিবির। যা সামাল দিতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে দিলীপ ঘোষদের।