রায়গঞ্জ-মুর্শিদাবাদ আসন দুটি নিয়ে তখনও দর কষাকষি চলছে দু’পক্ষের। আসন্ন লোকসভা ভোটে বাংলায় দু’দল আসন সমঝোতায় যাবে কিনা, তা নিয়ে বিধান ভবন ও আলিমুদ্দিনের মধ্যে বিস্তর আলোচনা চলছে। কিন্তু সে সময় হঠাতই এক তরফা ২৫ টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছিলেন বামেরা। তারপর সিপিএমের সঙ্গে জোট যে আর সম্ভব নয়, তিন দিন ধরেই সে কথা জানিয়ে আসছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। সেই কথা মতোই কাজ। সোমবার লোকসভা ভোটের প্রথম তিন দফার জন্য ১১ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিল কংগ্রেস। সোমবার রাত ১১ টা এআইসিসি-র তরফে এক বিবৃতি দিয়ে তা জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতিটি আসনে তিন জন প্রার্থীর নাম নিয়ে গতকাল দিল্লী গিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। দুপুরে সেখানে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠক হয়। সেখানেই ১১ জন প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত হয়েছে। ওই ১১ জন প্রার্থী হলেন, কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে প্রিয়া রায়চৌধুরী, আলিপুরদুয়ারে মোহনলাল বাসুমাতা, জলপাইগুড়িতে মণিকুমার দারনাল, দার্জিলিংয়ে শঙ্কর মালাকার, রায়গঞ্জ আসনে দীপা দাশমুন্সি, বালুরঘাটে আবদুস সাদেক সরকার, মালদা দক্ষিণ আসনে আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালুবাবু), মালদা উত্তরে ঈশা খান চৌধুরী, বহরমপুরে অধীর চৌধুরী, মুর্শিদাবাদে আবু হেনা এবং জঙ্গীপুরে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ও সীতারাম ইয়েচুরির হস্তক্ষেপে রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদ আসনের জট কেটেছিল ঠিকই। কিন্তু এ দিন ওই দুটি আসনেই প্রার্থীদের নামে সিলমোহর দিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। এমনকি বাকি যে ৯টি আসনের জন্য কংগ্রেস তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে, তার অনেকগুলিতেই বামফ্রন্ট প্রার্থী দিয়েছে। অর্থাৎ এর থেকেই স্পষ্ট যে, বাংলায় সিপিএমের সঙ্গে কোনও মতেই আর আসন সমঝোতার পথে হাঁটছে না কংগ্রেস। আসলে বামেদের হঠকারী সিদ্ধান্তেই যে চটেছেন সোমেন-সহ অন্যান্য প্রদেশ নেতৃত্ব, তা জলের মতো পরিষ্কার। কারণ যখন আলোচনা চলছিল আসন সমঝোতা নিয়ে, তা চূড়ান্ত হওয়ার আগেই গত শুক্রবার বামফ্রন্টের বৈঠকের পর রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদ-সহ ২৫টি কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে প্রেস বিবৃতি দেন ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।
আগ বাড়িয়ে এই এক তরফা প্রার্থী ঘোষণার ‘অপমান’ মানতে পারেনি বিধানভবন। সে দিনই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল, আর আসন সমঝোতা হবে না। দীপা দাশমুন্সি, শঙ্কর মালাকাররা তখনই স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘সম্মান বিকিয়ে বামেদের হাত ধরবে না কংগ্রেস।’ সব চেয়ে বেশি জটিলতা তৈরি হয় বীরভূম আসন নিয়ে। কারণ বামেদের প্রার্থী তালিকায় ২৫ নম্বরে বীরভূমের প্রার্থী হিসেবে নাম ছিল রেজাউল করিমের। কিন্তু তিনি তখনও কংগ্রেসের চিকিৎসক সেলের নেতা। নিজেদের দলের লোকের নাম বাম তালিকায় দেখে ক্ষুব্ধ হন সোমেন মিত্র। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে তাঁর ক্ষোভের কথা জানানও। তখন নাকি সূর্য বলেন, ‘আপনারা রেজাউল করিমকে কংগ্রেসের সিম্বল দিতে পারেন!’ এরপরেই কার্যত শিকেয় ওঠে আসন সমঝোতার ব্যাপারটি।
প্রসঙ্গত, রবিবার রাতেই সোমেন জানিয়েছিলেন, ‘মনে হচ্ছে ৪২টি আসনেই আমাদের প্রার্থী দিতে হবে।’ বাস্তবে হলও তাই। গতকাল কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছেন যে, এরপর ধাপে ধাপে বাকি আসনগুলির প্রার্থীর নামও ঘোষণা করবে দল। তাই বাকি ৩১ আসনে কংগ্রেস কাঁদের প্রার্থী করে, সে দিকেই এখন চোখ থাকবে রাজ্য রাজনীতির।
এক নজরে কংগ্রেসের ১১ প্রার্থী:
কোচবিহার – প্রিয়া রায়চৌধুরী,
আলিপুরদুয়ার – মোহনলাল বাসুমাতা
জলপাইগুড়ি – মণিকুমার দারনাল
দার্জিলিং – শঙ্কর মালাকার
রায়গঞ্জ – দীপা দাশমুন্সি
বালুরঘাট – আবদুস সাদেক সরকার
মালদা দক্ষিণ – আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালুবাবু)
মালদা উত্তর – ঈশা খান চৌধুরী
বহরমপুর – অধীর চৌধুরী
মুর্শিদাবাদ – আবু হেনা
জঙ্গীপুর – অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়