উরি হামলার পরে সাম্প্রতিক অতীতে এত ভয়াবহ বিস্ফোরণ আর হয়নি। গতকাল কাশ্মীরের পুলওয়ামার বিস্ফোরণের তীব্রতা ছাড়িয়ে গিয়েছে পূর্বের সবকিছুকে। ক্রমশই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুমিছিল। সেই মিছিলেই যোগ হল বাংলার আরও এক জওয়ানের নাম। গতকালের বিস্ফোরণে প্রাণ হারালেন নদিয়ার তেহট্টের হাঁসপুকুরিয়া গ্রামের ছেলে সুদীপ বিশ্বাস। হাওড়ার বাবলুর পর এবার নদিয়ার আরও এক জওয়ানের মৃত্যু সংবাদ এসে পৌঁছল গ্রামের বাড়িতে। জঙ্গি হামলায় বাংলার জওয়ানের মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ২।
দুপুরে সাড়ে ৩টে নাগাদ পুলওয়ামার অবন্তীপোরায় সিআরপিএফ কনভয়ে ফিঁদায়ে হামলা চালায় জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি আদিল। ৩৫০ কেজি বিস্ফোরকবোঝাই এসইউভি নিয়ে এসে ধাক্কা মারে কনভয়ের একটি গাড়িতে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় পুড়ে খাক হয়ে যায় কনভয়ের সেই গাড়িটি। সেই কনভয়েই ছিল তেহট্টের সুদীপ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই কনভয়ে জঙ্গি হামলার খবর পেয়েছিল সুদীপের বাড়ির লোক। আশঙ্কায় বুকটা কেঁপে উঠেছিল। রাতে সুদীপের সঙ্গে বার বার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে বাড়ির লোক। কিন্তু কোনভাবেই সুদীপের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। এরপর শুক্রবার সকাল থেকেই বাহিনী থেকে বার বার ফোন আসতে থাকে গ্রামের বাড়িতে। তিল আছে কিনা, চশমা পরত কিনা, সুদীপ সম্পর্কে একের পর এক প্রশ্ন করা হয় বাড়ির লোককে। প্রতিবার ফোনে আশঙ্কায় দুরু দুরু করে উঠছিল বুকটা। কিন্তু তখনও মন মানতে চায়নি যে খারাপ কিছু সত্যিই ঘটে গিয়েছে! বেলা গড়াতে শেষপর্যন্ত সত্যি হল সেই আশঙ্কাই। জঙ্গি হামলায় শহিদ হয়েছে ঘরের ছেলে।
মা, বাবা আর এক বোনকে নিয়ে ছোট্ট ছিমছাম সংসার ছিল সুদীপের। সিআরপিএফ-এ যোগ দেওয়ার পর ঘরে কিছু টাকা এসেছিল। সেই উপার্জনকে সম্বল করেই সদ্য বোনের বিয়ে দিয়েছিল সিআরপিএফ জওয়ান দাদা। নিজের এখনও বিয়ে হয়নি। দেখাশোনা শুরু হয়েছিল। বিয়ের আগে একটা পাকা ঘরের করার দরকার ছিল খুব। তাই বাড়ির কাজও শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্ত, বৃহস্পতিবারের আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় এক মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে গুঁড়িয়ে চুরমার করে দিয়েছে সব স্বপ্ন। একমাত্র ছেলে, সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম, সুদীপকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন বৃদ্ধ বাবা সন্ন্যাসী বিশ্বাস। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মা মমতা বিশ্বাস। বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টেয় গ্রামের বাড়িতে ফোন করেছিল সুদীপ। সেটাই ছিল শেষ ফোন। পরিবারের সঙ্গে শেষবারের মতো তখনই সুদীপের কথা হয়। ফোনে সুদীপ মা, বাবকে চিন্তা করতে বারণ করেছিল। এবার তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে বলে আশ্বস্ত করেছিল সে। বাড়ি ‘ফিরছে’ সুদীপ, তবে কফিন বন্দী হয়ে।