যেটুকু আশার আলো ছিল, তাও নিভে গেছে ‘সুপ্রিম’ রায়ে। শেষমেশ শীর্ষ আদালতেই বসে গেছে বিজেপির রথের চাকা। আবার, রথযাত্রা না হওয়ার পাশাপাশি অমিত শাহর রাজ্য সফরে আসা নিয়েও বারবার তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। অন্যদিকে, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে উঠছে নানা অভিযোগ। এমনই একটার পর একটা ধাক্কায় আশা হারাচ্ছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার বিজেপির বহু কর্মী-সমর্থক। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে আশাহত ওইসব কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভ, ‘দেশের তাবড় হেভিওয়েট নেতাদের ব্রিগেডে এনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় গোটা দেশকে এক ছাতার নীচে এনে মোদী বিরোধী হাওয়া জোরদার করছেন। অথচ এ রাজ্যে বিজেপির একটা বড়সড় কর্মসূচিই করা গেল না।’
পূর্ব বর্ধমান আগে ছিল সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি। তবে ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পরিবর্তনের বাতাস বইতে শুরু করে। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে জেলার ২টি আসনই তৃণমূলের দখলে যায়। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটেও জেলার ১৯টি বিধানসভাতেই বিপুল ভোটে জেতে তৃণমূল। জেলার ৬টি পুরসভাই তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণে। আর পঞ্চায়েত ভোটেও দেখা যাচ্ছে বিজেপি ধুয়েমুছে সাফ। এর কারণ ব্যাখ্যা করে কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘মোদী প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসার পরই মানুষ বুঝে গিয়েছেন, তাঁর আচ্ছে দিনের স্লোগান পুরোপুরি ভাঁওতা। তাই যে অংশের মানুষ বিজেপিতে ছিলেন, তাঁরাও এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নে শামিল হয়েছেন।’
জেলা মহিলা তৃণমূলের নেত্রী চন্দনা মাজি বলেন, ‘মানুষ কেন বিজেপি করবে বলতে পারেন? যে দলের কন্যাশ্রী, খাদ্যসাথী, সবুজসাথী, সমব্যথী, যুবশ্রীর মতো হাজারো জনস্বার্থমূলক কর্মসূচি নেই, যে দলের লক্ষ্য বড়লোকদের তোষামোদ করা, সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দিয়ে মানুষে মানুষে ভেদ করা, সেই দলে কীজন্যে যাবেন মানুষ?’ তবে তৃণমূলের মতো বিজেপির বহু সাধারণ কর্মী-সমর্থকদেরও ধারণা, বিজেপি মানুষকে দিশা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মন কি বাতে যা বলেন, তা শুনতে ভাল, কিন্তু কাজে লাগে না। বাংলার মানুষের মন বুঝতে বিজেপি ব্যর্থ হয়েছে বলেই তৃণমূলের রমরমা বাড়ছে।
শুধু তাই নয়, ফেব্রুয়ারিতে দলীয় নেতৃত্বের ব্রিগেড সমাবেশ ভাবনাকেও ‘অদূরদর্শী’ আখ্যা দিয়ে অনেক বিজেপি কর্মীই বলছেন, ‘যেটা আমরা সাধারণ বুদ্ধিতে ভাবছি, সেটা রাজ্য নেতারা বুঝতে পারছেন না? তৃণমূলের ব্রিগেডে দেশের তাবড় হেভিওয়েট নেতারা যোগ দেওয়ায় সমাবেশ ধারে-ভারে যে বিশাল হবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। নেতৃত্বের উচিত ছিল হয় তৃণমূলের আগে ব্রিগেড করা, না হয় লোকসভা ভোটের একেবারে মুখে ব্রিগেড করা।’ আর পূর্ব বর্ধমানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের মন্তব্য, ‘লোকসভা ভোটের ফল দেখবেন, আমাদের জেলার দুটি আসনই শুধু নয়, রাজ্যের ৪২টি আসনেই ঘাসফুল ফুটবে।’