পদ্মার ইলিশের খ্যাতি ভুবনজোড়া। ২০১৭ সালেই বাংলাদেশের ইলিশ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এবার আবারও ইলিশ নিয়ে সাফল্য পেল বাংলাদেশ। ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির পর এবার ইলিশের জীবনরহস্য উদঘাটনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল বাংলাদেশ। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশি গবেষক দলের উদ্ভাবন করা পদ্মার ইলিশের জিন বিন্যাস বা জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্বখ্যাত জার্নাল বায়োমেড সেন্ট্রাল (বিএমসি) প্রকাশ করেছে। লন্ডন ভিত্তিক এই জার্নালটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংক্রান্ত নানা তথ্য প্রকাশ করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হাসিনা খানের নেতৃত্বে দেশের বেশ কয়েকজন গবেষক এই উদ্ভাবনে যুক্ত ছিলেন। তিনি ছাড়াও প্রকাশিত জার্নালে গবেষক হিসেবে নাম রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিয়াজুল ইসলাম, অলি আহমেদ, অভিজিৎ দাস, তাসনিম এহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং ইলিশ গবেষক এম নিয়ামুল নাসের, নিউজিল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী আবদুল বাতেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিজ্ঞানী ও নিউকিওটাইড রসায়ন বিভাগের প্রধান ড. মং সানু মারমা এবং পিটার ইয়ানাকিভের।
অধ্যাপক হাসিনা খান জানান, বিভিন্ন ধাপ ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ এই স্বীকৃতি পেল। প্রকাশনার আগের প্রক্রিয়া হিসেবে উদ্ঘাটন বিষয়ক সমস্ত তথ্য যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক জিন ব্যাঙ্ক ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন (এনসিবিআই) -এ জমা দিতে হয়েছে। জিন ব্যাঙ্কের তরফ থেকে সমস্ত তথ্য যাচাই হওয়ার পর প্রকাশনার জন্য তা বিএমসিতে দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের এ উদ্ভাবন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল। জার্নালটিতে উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার থাকায় যে কেউ গবেষণাটি সম্পর্কে জানতে পারবেন। ভবিষ্যতে ইলিশ সম্পর্কিত যে কোনও গবেষণায় বাংলাদেশের গবেষণালব্ধ তথ্য ব্যবহার করতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, ইলিশ কীভাবে সমুদ্রের নোনা জল ও স্বাদু জল দু’জায়গাতেই বসবাস করে, ইলিশের রোগবালাই কী, ইলিশ কি বদ্ধ জলাশয়ে চাষযোগ্য মাছ, কেন ইলিশ এত সুস্বাদু, কেন একেক এলাকায় ইলিশের স্বাদ পাল্টায়, পদ্মার ইলিশই বা কেন বেশি সুস্বাদু, ইলিশের জিন বিন্যাস উদঘাটনের ফলে এমন সব প্রশ্নের জবাব পাওয়ার পথ এখন তৈরি হয়েছে। ইলিশের জিনতত্ত্বের ওপর কাজ করা বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাংলাদেশের গবেষণাটিই বিএমসিতে সবার আগে স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে এই বিষয়টিকে দেশের এক অনন্য গৌরব বলেই মনে করছেন তাঁরা।