২০১৭-র বর্ষ বিদায়ের রাতে আসামে জন্ম নিয়েছিল যে অনিশ্চয়তা ও আতঙ্কের, ২০১৮-র বর্ষ বিদায়ের রাতে সেই অনিশ্চয়তাই যেন আরও সুনিশ্চিত হয়েছে। ধারে-ভারে বেড়েছে আতঙ্কও। ২০১৭-র ৩১ ডিসেম্বর মাঝরাতেই প্রকাশিত হয়েছিল নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি)-র প্রথম খসড়া। সেই তালিকায় বহু বাঙালির নাম বাদ যাওয়ায় এখনও নিজভূমে পরবাসী হয়ে রয়েছেন তাঁরা।
ফলে গত এক বছর ধরেই অশান্তির কালোমেঘ আসামে। বছর ঘুরতে সেই মেঘ এখন আরও ঘনীভূত। তবে শুধু বাঙালিরাই নয়, ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি অসমের খিলঞ্জিয়া (ভূমিপুত্র)-রাও আর স্বস্তিতে নেই সর্বানন্দের শাসনে। গত ৩০ জুলাই প্রকাশিত চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় বাদ যায় ৪০ লাখ ৭ হাজার ৭০৭ জনের নাম। গত সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর ছিল আবেদন ও আপত্তি জানানোর শেষ দিন।
সূত্র থেকে জানা গেছে, ১০ লাখেরও বেশি মানুষ নিজেদের নাম তোলার আবেদন করতে পারেননি। কারণ দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের হাতে প্রমাণপত্রটুকু নেই। স্বাভাবিকভাবেই যত দিন যাচ্ছে আসামবাসীর সামনে নেমে আসছে অন্ধকার। কারণ রাজ্যের শাসক দল বিজেপি ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়া ‘শরণার্থী’দের তাড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে সুর মিলিয়ে গোটা দেশের বিরোধীরাই যদিও বলেছে কোনও বৈধ ভারতীয় নাগরিককে তাড়ানো চলবে না। তবে রাজ্যের বিশিষ্ট আইনজীবী হাফিজ চৌধুরি জানিয়েছেন, পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে ব্যর্থ হলে পরে বিচার পাওয়া মুশকিল। ফলে এই অবস্থায় আসামে বসবাসকারী প্রায় ১০ লাখ বাঙালি নতুন বছরে পা দিলেন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।
অন্যদিকে আজ, বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে তালিকাভুক্তদের নাম ও তথ্য সংশোধনের প্রক্রিয়া। আসাম এনআরসির দফতর থেকে জানানো হয়েছে, চূড়ান্ত খসড়া নাগরিক পঞ্জীতে যেসব নাম উঠেছে, সেই সব নাম ও অন্যান্য তথ্য অনলাইনে সংশোধনের কাজ ২ জানুয়ারি বেলা ১০টা থেকে শুরু হবে। এবং তা করা যাবে আসাম নাগরিক পঞ্জির ওয়েবসাইট www.nrcassam.nic.in-এ। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে এনআরসি সেবা কেন্দ্রেও সংশোধিত ফর্ম জমা দিয়ে নাম সংশোধনের সুযোগ পাওয়া যাবে।
নাম তোলা ও আপত্তি জানানোর সময় বাড়াতে বহু আবেদন করা হলেও সুপ্রিম কোর্ট সেটা গ্রাহ্য করেনি। আপত্তিও জমা পড়েছে মাত্র হাজার খানেক। এ প্রসঙ্গে আসামের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানান, ঠিক মতো আপত্তি জানানোয় গলদ রয়েছে। সেইসঙ্গে আসামে বসবাসকারী বহু বাংলাদেশীকে সনাক্ত করা গিয়েছে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি। এরপরই আসাম নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় সমিতির চেয়ারম্যান তপোধীর ভট্টাচার্য পাল্টা মন্তব্য করেন, ‘সচেতনতার সংজ্ঞা ওঁর কাছ থেকে নতুন করে জানতে হবে। কারণ উনি কখন কোন দলে থাকেন কী বলেন জানা নেই। ওঁর তো অনেক রূপ!’
আবার আসামবাসীদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিয়ে বিজেপি সরকার লোকসভার চলতি অধিবেশনেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করতে চলেছে। তবে এই বিল প্রত্যাহারের দাবিতে ইতিমধ্যেই উত্তেজনা তুঙ্গে। জানা গেছে, ৪ জানুয়ারি জেপিসির বৈঠকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন স্বাক্ষরিত হওয়ার পর আগামী ৭ জানুয়ারি বিলটি লোকসভায় পেশ হবে। এ বিষয়ে আসাম গণ পরিষদ নেতা প্রফুল্ল মহন্ত বলেছেন, ‘আমরা কোনও অবস্থাতেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল মানব না। এই বিলে আসামের সর্বনাশ হবে। এই বিল আসাম চুক্তির বিরোধী।’