ফেস্টুনেই বাজিমাত! বিগত কয়েকবছর ধরেই রাজ্যের হেভিওয়েট পুজো কমিটিগুলির মধ্যে মহালয়ার আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় ফেস্টুন-হোর্ডিং যুদ্ধ। বড় সত্যিই হোক কিংবা হাজার হাতের দুর্গা, ফেস্টুন বা হোর্ডিংগুলোর মাধ্যমে অর্ধেক প্রচার পেয়ে যায় পুজোগুলি। সেদিক থেকে, এবার সকলকে টেক্কা আগেই প্রচারের আলো নিজের দিকে টেনে নিয়েছে হাওড়ার রামকৃষ্ণ স্বামীজি স্মৃতিসঙ্ঘ। ডাঙায় নয়, মাঝগঙ্গায়। হাঁটাপথে নয়, জাহাজে। একশো, দু’শো, পাঁচশো নয়, ২১০০ বছর। কলকাতা ও হাওড়া শহরজুড়ে হোর্ডিং, ফেস্টুনে চোখে পড়ছে এমনই ‘ক্যাচলাইন’। ফলে এখন থেকেই তাদের পুজো দেখতে মুখিয়ে আছেন মানুষ।
রামকৃষ্ণ স্বামীজি স্মৃতিসঙ্ঘের উদ্যোগে এ বার মাঝগঙ্গায় ভাসমান জাহাজের উপরে অভিনব দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। প্রায় ২১০০ বছর আগে কুষাণ যুগে গড়া দুর্গা প্রতিমার আদলে জাহাজে বসবে দেবীর মূর্তি। ইলোরার গুহাচিত্রের অনুকরণে আঁকা ছবিতে সাজবে জাহাজের উপরের মণ্ডপ। চারপাশে থাকবে চন্দননগরের আলো। জাহাজের উপর প্রায় ৬ হাজার কেজি লোহার রড দিয়ে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। হাওড়া স্টেশনের কাছে রামকৃষ্ণপুর ঘাট থেকে একশো ফুট দূরে মাঝগঙ্গায় থাকবে বিশালাকার সেই জাহাজ। হাওড়ার গ্র্যান্ড ফোরশোর রোডে গঙ্গার পার থেকেই দশনার্থীরা পনেরো ফুট উচ্চতার প্রতিমা দর্শন করতে পারবেন।
মাঝগঙ্গায় দুর্গোৎসবের আয়োজনের মূল পৃষ্ঠপোষক মন্ত্রী অরূপ রায়। এছাড়া গত এগারো মাস ধরে রাতকে দিন করে যাঁরা এ বারের পুজোয় চমক দিতে চলেছেন, তাঁরা হলেন হাওড়া পুরসভার ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নারায়ণ মজুমদার ও রাজ্য সমবায় সংগঠনের অধিকর্তা এবং রামকৃষ্ণ স্বামীজি স্মৃতিসঙ্ঘের সভাপতি সত্যব্রত সামন্ত। সত্যব্রত বাবুর কথায়, ‘ভারতীয় সংস্কৃতির মূল কথাটি হল বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। থিমের যুগে আমরা ইতিহাসে ফিরে যেতে চেয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল, সব থেকে পুরনো প্রতিমার আদল দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন চারপাশে থিমের হিড়িক। ইলোরার ভাস্কর্যে মায়ের ছবি আমাদের সকলকে কাছে টানে। গত বছরের পুজোর পর থেকেই মা দুর্গার ইতিহাসের সন্ধানে কলকাতা বইমেলা, জাতীয় গ্রন্থাগার, কলকাতার ভারতীয় জাদুঘর ছাড়াও রাজস্থানের জয়পুর জাদুঘরের সাহায্য নিয়েছি।’ হাওড়ার পুজো উদ্যোক্তাদের সাধুবাদ জানিয়ে ভারতীয় জাদুঘরের ডেপুটি কিউরেটর নীতা সেনগুপ্ত বলেন, ‘প্রায় ২১০০ বছর আগে কুষাণ যুগে প্রথম মা দুর্গার প্রতিমা দেখা গিয়েছে। হাওড়ার পুজো উদ্যোক্তারা দুর্গার ইতিহাসের সুলুকসন্ধানে আমাদের কাছে বারবার এসেছেন। ওঁদের এই উদ্যোগ ইতিহাসপ্রেমীদের সাহায্য করবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।’
দু’পাশে রবীন্দ্র সেতু ও দ্বিতীয় হুগলি সেতু। ঠিক মাঝখানে হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর ঘাটের সামনেই ভাসমান জাহাজের উপরে থাকবে ১৫ ফুট উচ্চতার প্রতিমা। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, জাহাজের চারপাশ থেকে চন্দননগরের শিল্পীদের আলোর মায়াজাল রবীন্দ্র সেতু, দ্বিতীয় হুগলি সেতু থেকে শুরু করে কলকাতার দিকে মিলেনিয়াম পার্ক পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে। থ্রি ডি আলোকসজ্জার জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলুমিনেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপকদের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। অন্ধকারে হাওড়া ব্রিজ থেকে বিদ্যাসাগর সেতু পর্যন্ত গঙ্গায় আলোর মায়াজাল তৈরি করা হবে। ইতিহাসের সন্ধান পেতে অবশ্য কম পরিশ্রম করতে হয়নি উদ্যোক্তাদের। তাঁদের দাবি, এই পুজো এবার হাওড়া তো বটেই, কলকাতার বড় পুজোকেও রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে।