কার ভাগ্যে কে খায়!
রাজা-রাজড়াদের ব্যাপারই আলাদা। তাঁরা সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাতেন। সোনার থালায় তাঁরা ভাত খাবেন, এ আর এমন কী! রাজা-রাজড়াদের কাজকারবার যদি চোরের ভাগ্যেও ঘটে! তখন কার ভাগ্যে কে খায় বলা ছাড়া অন্য উপায় থাকে না।
আর সাধ্য না থাক। সাধ থাকতে দোষ কী? কুঁজোরও তো শখ হয় চিৎ হয়ে শোওয়ার। চোরেরও তো সাধ যায় রাজা-রাজড়াদের মতো হওয়ার। আর হয়েছেও তাই। হায়দরাবাদের একটি জাদুঘর থেকে নিজামের সোনার টিফিন বাক্স আর কয়েকটি মূল্যবান জিনিস নিয়ে পালিইয়েছিল দুই চোর। মনের আয়েসে সেই টিফিন বাক্সেই খাওয়া-দাওয়া করত তারা। কিন্তু বিধি বাম! পুলিশের হাতে ধরা পড়তে হয়েছে তাদের। মঙ্গলবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করেছে হায়দরাবাদ পুলিশ।
গত ২ সেপ্টেম্বর হায়দরাবাদের পুরানি হাভেলির সংগ্রহশালা থেকে নিজা়মের ব্যবহৃত সোনার টিফিন বক্স, বহুমূল্যের রত্নখচিত কাপ-প্লেট, সোনার চামচ-সহ বেশ কিছু সামগ্রী চুরি যায়। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে, ভেন্টিলেশন ভেঙে দুই চোর ওই সংগ্রহশালার ভিতর ঢুকে ওই বহুমূল্য সামগ্রী চুরি করে পালায়।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, জাদুঘরের বাইরে দাঁড় করানো মোটরবাইকে চড়ে পালায় ওই দুই চোর। যার মধ্যে একজনকে দেখা গিয়েছে ফোনে কথা বলতে। সেই সূত্র ধরে এগোতে থাকে পুলিস। তাদের ফোন ট্র্যাক করতে ২২ জনের একটি টিম তৈরি করা হয়। ৩০০টি টাওয়ারের সব ডেটা খতিয়ে দেখা হয়। কিন্তু শেষমেশ পুলিশ জানতে পারে, চোরেরা যে ফোনে কথা বলছিল, তাতে কোনও সিমই ছিল না। পুলিশের চোখে ধুলো দিতেই এমন মাস্টার প্ল্যান। তবে প্রাথমিক ভাবে এই জারিজুরি পুলিশকে বিভ্রান্তিতে ফেললেও পরে তাদের কারসাজি ধরা পড়ে যায়। এবার বাইকের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে তারা। জানতে পারে, হায়দরাবাদ থেকে সোজা মুম্বইয়ে পাড়ি দিয়েছে ওই দুই চোর।
পুলিশ জানিয়েছে, মুম্বইয়ের একটি নামজাদা হোটেলে ওঠে তারা। এমনকি নিজামের সোনার টিফিন বক্সে নিয়মিত খাবার খেয়েছে ওই দুই চোর। ধরা পড়ার পরে বোঝা যায় দুজনেই পুলিশের খাতায় মোস্ট ওয়ান্টেড। তাদের বিরুদ্ধে মোট ২৬টি মামলা চলছে। উল্লেখ্য, তিন কৌটের সোনার টিফিনবক্সটির ওজন প্রায় ৪ কিলোগ্রাম। দুবাইয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকায় বেচতে পারত তারা। নিজা়ম জাদুঘরে ছোটো বড় সামগ্রী নিয়ে মোট ৪৫০টি বহুমূল্যের জিনিস রয়েছে। এই সামগ্রী ষষ্ঠ নিজাম মির মেহবুব আলি খাঁ আমল থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই বহুমূল্য সামগ্রী শেষ ব্যবহার করেন হায়দরাবাদের নিজা়ম মির ওসমান আলি খাঁ, সপ্তম আসফ জাহ।