বলিউডের যে ছবিগুলি কার্যত ‘মেনস্ট্রিম’ নয়, সেই পথেই তাঁর আসা-যাওয়া বেশি। তাঁর সম্পর্কে এমন ধারণা পোষন করতেন যাঁরা, এতদিনে তাঁদেরকে কার্যত বোকা বানিয়ে দিয়েছেন তিনি। তা না হলে, একইসঙ্গে ‘কিক’, ‘বজরঙ্গী ভাইজান’, ‘মান্টো’, ‘বাবুমশাই বন্দুকবাজ’-এর মত ছবিতে কিংবা ‘স্যাক্রেড গেমস’-এর মতো ওয়েব সিরিজে আলাদা আলাদা চরিত্রে অভিনয় করতে পারতেন না বলিউডের ‘গণেশ গাইতোন্ডে’ ওরফে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। সম্প্রতি ‘হলিউড রিপোর্টার’ নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকিকে শুধু যে ‘হ্যান্ডসাম’ অভিনেতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তাই নয়, তাঁরা তাঁর সঙ্গে তুলনা করেছেন ইটালিয়ান অভিনেতা মার্সেল্লো মাস্ত্রোইয়ানির সঙ্গে। এতে নওয়াজ বিস্মিত। তবে এখনও তিনি নিজেকে এর যোগ্য মনে করেন না। নওয়াজ বলেছেন, ‘আমেরিকান সিনেমা নিয়ে এক বিখ্যাত পাবলিকেশনের মতামতকে আমি গুরুত্ব দিই। আমাদের দেশে কোনও দিন অবশ্য আমাকে হ্যান্ডসামও বলা হয়নি।’ তবে মাস্ত্রোইয়ানির সঙ্গে তুলনা করার ব্যাপারটায় তিনি একটু লজ্জিতই হয়েছেন। তাঁর মতে, মার্সেল্লোর পর্দা-উপস্থিতি দর্শককে আটকে রেখে দেয়, কারণ তিনি একজন অসম্ভব দক্ষ অভিনেতা।
‘মান্টো’র আলোচনা প্রসঙ্গেই হলিউড রিপোর্টার এই তুলনা টেনে এনেছে। নওয়াজের মতে সাদাত হাসান মান্টো ছিলেন খুবই নিয়ন্ত্রিত মানুষ। কখনওই উচ্চস্বরে কথা বলতেন না। অথচ, কোনওদিনই তাঁর কোনও কথা শুনতে মানুষের অসুবিধে হয়নি। এই অভ্যেস মার্সেল্লোরও ছিল। অনেকেই লক্ষ্য করেছেন মার্সেল্লোর মতো নওয়াজও খুব একটা উচ্চস্বরে কথা বলেন না। তবু জানালেন, ‘আমি গত মাস দেড়েক রোমে কাটিয়ে এলাম তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়ের একটি ছবিতে কাজ করতে গিয়ে। সেই সময় আমি এমন একটি মিউজিয়াম ঘোরার সুযোগ পেলাম যেটা সম্পূর্ণভাবে মার্সেল্লো মাস্ত্রোইয়ানির প্রতি নিবেদিত। তাঁর অভিনীত ছবির সমস্ত নিদর্শন প্রদর্শিত হচ্ছে। অথচ, ভাবলে কষ্ট হয় আমাদের দেশে অশোককুমার কিংবা দেবানন্দকে নিয়ে কোনও জাদুঘর আজ পর্যন্ত তৈরি হল না!’ যে সব অভিনেতাদের নওয়াজ প্রশংসা করেন, তার একটা তালিকাও দিয়েছেন তিনি। ‘ইন দ্য মুড ফর লাভ’ ছবির টনি লেউং কিংবা ‘বার্ডম্যান’ ছবির মাইকেল কিটন অথবা ‘দ্য উলফ অফ ওয়ালস্ট্রিট’-এর লিওনার্ডো ডিক্যাপ্রিও-র অভিনয় তাঁকে মুগ্ধ করে। এই ধরনের ভিন্নতর চরিত্রায়ণ তাঁর খুবই পছন্দ। আর এই কারণেই তিনি শো-বিজ-এর খপ্পরে পড়তে চান না। তাই তিনি বলতে পারেন, ‘আমারও অর্থের প্রয়োজন আছে ঠিকই, কিন্তু একটা মেনস্ট্রিম ছবিতে অভিনয় করে আমি যে অর্থ রোজগার করি সেই অর্থের সুবাদে বিনা পারিশ্রমিকে মান্টো-তে অভিনয় করার সুযোগ পাই।’ কান চলচ্চিত্র উৎসবে সাড়া ফেলার পর, এবার দেশে মুক্তি পাবে নওয়াজ অভিনীত ‘মান্টো।