আরও একবার কলম ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারও নিউ আলিপুরের সুরুচি সঙ্ঘের পুজোর থিম সং লিখলেন তিনি। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে শত ব্যস্ততার মাঝেও ফেলতে পারেননি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী ও স্নেহের পাত্র অরূপ বিশ্বাসের অনুরোধ। ফাইলের পর ফাইলে চোখ আর পেন বোলানো, একইসঙ্গে রাজ্যের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেড়ানোর ফাঁকেই সময় করে মমতা লিখে ফেলেছেন দশভুজা আবাহনের ‘ভাবনা সঙ্গীত’। গত তিন বছর শুধুই ‘গীতিকার’-এর ভূমিকায় ছিলেন তিনি। এবার জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সুরারোপ করেছেন থিম সং-এ। বহুত্ববাদের দেশে একাত্মবাদ চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে মমতা যে গান লিখেছিলেন সুরুচি সঙ্ঘের জন্য, ‘নন ফিল্মি সং’ হিসেবে তা সর্বকালীন রেকর্ডও করে ফেলেছে। ‘বৈচিত্রের মুক্তোয় গাঁথা একতার মণিহার/ অনেকের মাঝে মিলন মহান, সুর যে উপহার…’ ইউটিউবে এই গান শুনে ফেলেছেন প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ। কলারটিউন হিসাবে ব্যবহার করেছেন যাঁরা, তাঁদের সংখ্যাও ৫০ হাজার ছুঁই ছুঁই।
সুরুচির জন্য এবার কী লিখেছেন মমতা? সোমবার নেতাজি ইন্ডোরের বৈঠকে তার ইঙ্গিত দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীই। এবার যে গান তিনি লিখছেন, তাতে ‘আগমনী’- র আবাহনের সুরকে ফুটিয়ে তোলাই তাঁর লক্ষ্য- জানিয়েছেন মমতা। গান লেখার জন্য অরূপই যে তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন, সে প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তখনই ঠিক করি আমার লেখায় ‘যা দেবী সর্বভূতেষু’- র ধাঁচে আগমনীর পুরনো মেজাজকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাব। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে যে প্রচেষ্টা চালিয়েছি, আশা করি সবার তা ভাল লাগবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথা ও সুরে সুরুচির পুজোর থিম সং এবার গেয়েছেন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। নেতাজি ইন্ডোরের মঞ্চে সে গানের কয়েক কলি শুনিয়েও দেন তথ্য- সংস্কৃতি দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী। যে গানের কলিতে জয় মা, জয় দুর্গার মত শব্দের ব্যবহারে ছিল আবাহনের আমেজ।
সহকর্মী অরূপের সুরুচি সঙ্ঘের পুজোর জন্য ২০১৫ সাল থেকে ‘ভাবনা সঙ্গীত’ লিখছেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০১৫- তে মমতা লিখেছিলেন, ‘মাগো তুমি সর্বজনীন, আছো হৃদয় জুড়ে…’। সেবার জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সুরে কণ্ঠ দিয়েছিলেন শ্রেয়া ঘোষাল। ২০১৬- তে মমতা লিখলেন, ‘এই পৃথিবী একই মাটি, একই আকাশ বাতাস’। ফের জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সুরে সেবার গানটি গেয়েছিলেন পালক মুচ্ছাল। ২০১৭ সালে মমতা লিখেছিলেন গোটা বিশ্বের কথা। আসলে যে গোটা ‘পৃথিবী একটাই দেশ’ সেটাই বর্ণিত হয়েছিল গীতিকার মমতার কলমে। সেবারও জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সুরে কন্ঠ দিয়েছিলেন শ্রেয়া ঘোষাল। এবার সুরুচির থিম সং- এর জন্য সুর বেঁধেছেন মমতা নিজেই। প্রসঙ্গত, শহরে পুজোর থিম সং- এর প্রবক্তা সুরুচি সঙ্ঘই। গায়ক জীবনে এর আগে কোনও দিনও কোনও পুজোকমিটির থিম সং গাননি ইন্দ্রনীল। মুখ্যমন্ত্রীর কথা ও সুরে তৈরি সুরুচি সঙ্ঘের মিনিট চারেকের ‘ভাবনা সঙ্গীত’- এ কন্ঠ দিয়েছেন স্বনামধন্য গায়ক এবং রাজ্যের এই মন্ত্রী। পুজোর কদিন সুরুচি সঙ্ঘের প্রতিমা দর্শনে আগত প্রতিটি দর্শনার্থীকেই মমতার কথায় ও সুরে এই গান যে আগমনীর স্বাদ দেবে, এ কথা হলফ করে বলা যায়।