স্কুল কলেজ লাইফে কালীপুজোতে বাজি নিশ্চয়ই সবাই ফাটিয়েছেন?তা এই বাজি ফাটাতে ফাটাতে কে কি দুষ্টুমি করেছেন সেগুলো একটু বলুন না প্লিজ ……এই যেমন পাড়ার চেনা কুকুরগুলোকে বিস্কুট খাওয়াতে খাওয়াতে লেজে কালিপটকা বেধে দেওয়া, যে বাড়ি থেকে পূজোর চাঁদা মেলে নি সেই বাড়ির লেটার বক্সে জলন্ত চকলেট বোম ফেলে আসা,সমবয়সী মহিলা মহলের যাওয়ার পথে মূহূর্মূহ চকলেট আর কালিপটকা বর্ষণ, বোন-দিদিদের সঙ্গে রংমশাল চরকি জ্বালাতে জ্বালাতে হঠাৎ করে একটা দোদোমায় আগুন দিয়ে চম্পট দেওয়া,প্রেমীকার কমল মিত্র মার্কা গম্ভীর বাবাকে টার্গেট করে ছুঁচো বাজি ছেড়ে দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি ….. আপনারা বোধ হয় এখন বলতে লজ্জা পাচ্ছেন তাই না? তা আমার বাবা লাজ লজ্জা একটু কম…মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এখনও খেলে… তাই অকপটে স্বীকার করছি যে প্রথম আর শেষ টা ছাড়া কালীপুজোতে বাকি সবকটা দুষ্টামিই আমার দ্বারা সাধিত হয়েছে।
তবে আজ যে দুষ্টুমিটার গল্প আপনাদের বলব সেটা ঘটেছিল কিছুটা আমার অজান্তেই।
খুব সম্ভবত সালটা ছিল ১৯৯২,আমার তখন ক্লাস নাইন, কালীপুজোর রাত দশটা,চারিদিকে শুধু দুমদাম আওয়াজ, শ দেড়েক চকলেট বোম শেষ করে আমি বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি।প্যাকেটে আর পাঁচটা বোম পড়ে আছে, সেগুলো নিয়ে কি করা যায় ,কি করা যায় ভাবছি, হঠাৎ মাথায় একটা ইনোভেটিভ আইডিয়া এসে গেল,রাস্তার কর্নারে ছিল একটা গোল টিনের ডাস্টবিন..ঠিক নর্দমার পাশে,উকি মেরে দেখলাম একদম ফাকা।তিনটে চকলেট বোমের সলতে একসঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে আগুন ধরিয়ে টুপ করে ফেলে দিলাম ডাস্টবিনটার মধ্যে।দুম্ দুম্ করে বিকট দুটো শব্দ, কিন্তু তিন নম্বর টা কি হল….? ওর আওয়াজ টা হল না কেন?একসঙ্গে তিনটে বোমেই তো আগুন লাগিয়েছি…..কিছুটা অবাক আর চিন্তাহ্নিত হয়েই তাকাচ্ছি এদিক ওদিক…হঠাৎ উল্টোদিকের বসাক বাড়ির দরজা টা সশব্দে খুলে গেল, শান্তি কাকিমা ছুটে এসে আমার কানটা ধরলেন, “বেয়াদপ ছেলে, চল্ ভিতরে চল্, দেখবি কি করেছিস”।কান ধরে হির হির করে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে গেলেন আমাকে, রান্না ঘরের সামনে এনে বল্লেন “দেখ,দেখ কি করেছিস”।আমি চারিদিক ভালো করে দেখেও গন্ডগোলটা ঠিক ধরতে পারলাম না।হঠাৎ কি যেন একটা মাথায় পড়ল টুপ করে, হাত দিয়ে দেখলাম কেমন যেন একটু আঠা আঠা লাগছে।শান্তি কাকিমা পাশ থেকে খেঁকিয়ে উঠলেন “নে,চেখে দেখ,খুব ভালো লাগবে,ওটা চাটনিরে হতভাগা”। আস্তে আস্তে মাথা তুলে উপরের দিকে তাকালাম পুরো রান্না ঘরের সিলিং টা আর তার নিচে ফুট দেড়েক দেয়াল লাল ছোপ ছোপ দাগে ভর্তি….লাল লাল টমেটোর ঝোল মিশ্রিত খোসাগুলো ঝুলে আছে এদিক ওদিকে…আর ওখান থেকেই মাঝে মাঝে টুপ টুপ করে পড়ছে নিচে। কড়াইটা কে কাকিমা মাটিতে নামিয়ে রেখেছেন আগেই ।পুরো ব্যাপারটা জলের মতো পরিস্কার হয়ে গেল।পর পর দুটো ধামাকার পরে আমার তূনের তৃতীয় অস্ত্রটি কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে তীব্র গতিতে ডাস্টবিন থেকে বেরিয়ে উল্টো দিকের প্রায় আট ফুট দূরে অবস্থিত বসাক বাড়ির একতলার রান্না ঘরের খোলা জানালার তিন ইঞ্চি বাই তিন ইঞ্চি লোহার খোপ কাটা গ্রীল ক্রশ করে নিখুঁত নিশানায় শান্তি কাকীমার চাটনির কড়াইতে গিয়ে পড়েছে আর তার পরেই মহা বিস্ফোরণ।
না, সেদিন আমার বাড়িতে কোনো নালিশ যায়নি বরঞ্চ কাকীমা আমাকে গরম গরম লুচি আর ছোলার ডাল খাইয়ে বাড়ি পাঠিয়ে ছিলেন, নিঃসন্তান ছিলেন বসাক দম্পতি, আমাকে খুব ভালো বাসতেন।