জোরদার ছাত্র আন্দোলন, লড়াই ও অনশন চলছে। কলকাতায় না, কলকাতা থেকে অনেক দূরে। জানেন আপনি? টিভির পর্দা, খবরের কাগজে সে খবর দেখছেন? মালদায় ভূমিপুত্র গণিখান চৌধুরীর নামাঙ্কিত এক কেন্দ্রিয় কলেজ আছে, অখ্যাত কলেজ, হয়ত নাম শোনেননি। ২০১৩ তে এই কলেজের উদ্বোধন হয়, উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। স্বাভাবিক ভাবেই মালদাবাসীর প্রত্যাশার পারদ ছিল তুঙ্গে, তাদের জেলায় সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হচ্ছে, তাও কেন্দ্রীয়। মড্যুলার প্যাটার্নে চলা কলেজ। মাধ্যমিক পাশ করে দু বছরের ভোকেশনাল কোর্স, তারপর দু বছরের ডিপ্লোমা এবং পরে দু বছরে বি টেক ডিগ্রী।
২০১৪ সালে রাষ্ট্রপতির হাত ধরে উদ্বোধন হয় বি টেক কলেজের। এ যেন স্বপ্ন পূরণের এক ধাপ পেরিয়ে যাওয়া। কথা রাখার বৃত্ত সম্পূর্ণ হওয়া। এল ২০১৬, বি টেকের প্রথম ব্যাচ বেরল। জেলায় থাকা কেন্দ্রিয় সরকারি কলেজ থেকে বি টেক ডিগ্রী!! কিন্তু, আকাশ থেকে পড়ার পালা। এক মুহূর্তে সব স্বপ্ন খানখান হয়ে গেল! জানা গেল, গণিখান কলেজের (GKCIET) বি টেক ডিগ্রী প্রদানের অনুমোদনই নেই। মানে পুরোটাই ভুয়ো! প্রতারণা! ভাবতে পারছেন? পাশ করার পর জানা গেল কলেজ ডিগ্রী দিতে পারবে না। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আতঙ্ক গ্রাস করে ছাত্র-ছাত্রীদের।
এতো জীবনের প্রশ্ন! ছাত্র আন্দোলনে মুখর হয় মালদা। দীর্ঘ ২৬ দিন অনশন, জাতীয় সড়ক অবরোধ, রেল অবরোধ চলে। রাজ্য সরকার ডিপ্লোমা কলেজের অনুমোদন দেয়। কেন্দ্রিয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয় বি টেক ডিগ্রী দেবে দুর্গাপুর এন আই টি। কিন্তু কথা রাখেনি দুর্গাপুর এন আই টি। শুধু আশ্বাস মেলে, এদিক থেকে ওদিক ছোটাছুটি চলে, পেরিয়ে যায় এক একটা দিন। ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে শুধু ঘন আঁধার!
অনেকেই বাঁচার স্বার্থে ডিপ্লোমা ডিগ্রী নিয়েই চাকরির চেষ্টা করে। সরকারি নানা সংস্থায় পরীক্ষায় পাশ করেও বাদ যায় ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশনে। গণিখান কলেজের ডিপ্লোমা ডিগ্রীরও দাম নেই। দু বছরের ডিগ্রী ভ্যালিড হবে যদি তার আগে দু বছরের আই টি আই অথবা 12 th ভোকেনশনাল কোর্স থাকে। কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে জানা যায়, তাদের ১০+২ তে আই টি আই বা ভোকেশনাল কোর্স কিছুই নেই। আবারও প্রতারিত তারা। সবটাই ভুয়ো, জালিয়াতি। ভাবতে পারছেন?
তারপর আশ্বাস মেলে ২০১৮ র মার্চে MAKAUT থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অনুমোদন পাওয়া যাবে। কিন্তু স্পষ্ট বলা হয়, পুরানো ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির কোনো ব্যবস্থা হবে না। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। একটা কেন্দ্রীয় সরকারি কলেজে এই প্রতারণা! মানুষ কোথায় যাবে? ছেলেমেয়েগুলোর ভবিষ্যত কি হবে?
তারা লড়ছে। তারা হাল ছাড়েনি। জীবনের স্বার্থে, অস্তিত্বের স্বার্থে তারা লড়ছে। তারা যোগাযোগ করে ‘বাংলা পক্ষে’র সাথে। বাংলা পক্ষ পাশে দাঁড়ায়। আইনি সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সংগঠনের আইনজীবীদের তরফে। আন্দোলনকারী সাইন জায়েদি বলেন, “বাংলা পক্ষকে আমরা বললে তারা সর্বতোভাবে পাশে দাঁড়ায়। আমরা একসাথে লড়ছি। কিন্তু এ লড়াই জটিল। একটা সংগঠনের পক্ষে সম্ভব না। সংবাদ মাধ্যম, মানুষের সমর্থন চাই। আমাদের পাশে সকলে দাঁড়ান। আমাদের বাঁচান। আমরা প্রতারিত। আমাদের জীবন শেষ হয়ে যাবে।”
বাংলা পক্ষের তরফে বলা হয়েছে, তারা শীঘ্রই মালদা যাবে। সংগঠনের তরফে সম্রাট চৌধুরী জানান, ” আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে অংশ নিতে আমরা আগষ্টের শুরুতেই মালদা যাবো। আমরা সব রকম ভাবে পাশে আছি। আবেদন করছি পশ্চিম বঙ্গের মানুষ ও সব ছাত্র সংগঠন প্রতারিত ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়াক একসাথে। আমরা সংসদে এই প্রতারণা নিয়ে বলার জন্য বাংলার সাংসদদের চিঠি দেব। “
ওরা কলকাতার বাইরের, অনেক দূরের ছেলেমেয়ে। এতদিন সংবাদ মাধ্যমের সমর্থন না পেয়েও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তারা লড়ছে, ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলন। অনশন চলছে, দাবী পূরণ না হওয়া পর্যন্ত চলবে। তাদের লড়াই চলুক, জয়ী হোক তারা। তাদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত হোক।
( মতামত ব্যক্তিগত )