মন্ত্রিসভা থেকে তিন সদস্যকে অপসারিত করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মন্ত্রিসভায় ফের বড়সড় রদবদল করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রদবদলের এই পর্বে যেমন কয়েকজন মন্ত্রীর দায়িত্ব কমানো হয়েছে, তেমনই দায়িত্ব বেড়েওছে কয়েকজনের। রদবদল সংক্রান্ত এই ফাইলে মুখ্যমন্ত্রী সই করার পরই মুখ্যসচিব মলয় কুমার দে তা সরকারি বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করেন। মন্ত্রিসভার সদস্যদের দায়িত্ব বদলের সঙ্গেই প্রশাসনিক স্তরে অতিরিক্ত মুখ্যসচিব থেকে শুরু করে জেলাশাসক পর্যায় পর্যন্ত আধিকারিকদেরও বড়সড় বদলি ফাইলে সই করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, বদলির তিনটি পর্যায়েই এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, যতই ঘনিষ্ঠ হন না কেন, কর্তব্যে গাফিলতি কিংবা শৃঙ্খলাভঙ্গের ক্ষেত্রে কোনও আপস চাইছেন না মমতা।
মন্ত্রিসভায় রদবদলের এই পর্বে দায়িত্ব বেড়েছে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী এবং শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের। কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের আবাসন, দমকল এবং পরিবেশ দপ্তরের মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ভার কমানো হয়েছে। এখন পরিবেশ দপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্ব সামলাবেন শুভেন্দুবাবু। একইভাবে মন্ত্রিসভার প্রবীণ সদস্য সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দায়িত্বভারও কিছুটা কমিয়ে মলয়বাবুকে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রাম বিধানসভার বিধায়ক জেমস কুজুরকে নতুন দপ্তর আদিবাসী কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন মমতা। সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্রে তো বটেই, গোটা জেলায় আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় বিজেপি’র দাপট রুখতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। মন্ত্রিসভার যে তিন সহকর্মীকে অপসারণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী, তার মধ্যে রয়েছেন কুজুরও। আদিবাসী আবেগ আর ভাবাবেগকে আঘাত করে এমন কোনও কাজ তিনি কখনও বরদাস্ত করবেন না, এ ঘোষণা প্রকাশ্যেই করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রদবদলের এই পর্বে সেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানোন্নয়নে সহায়ক দপ্তরটি নিজের হাতেই রেখে দিলেন মমতা। তবে বিশ্বস্ত সহকর্মী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে আদিবাসী কল্যাণ দপ্তরের ডেপুটি বানিয়েছেন তিনি।
মন্ত্রিসভায় রদবদলের এই পর্বে সবচেয়ে বড় চমক হল সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দপ্তর পরিবর্তন। সেচের পরিবর্তে এবার থেকে অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ দপ্তরের দায়িত্ব সামলাবেন তিনি। নিজের বিধানসভা কেন্দ্র তথা ঝাড়গ্রাম জেলায় নির্বাচনী বিপর্যয়ের জেরে অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রীর পদ খুইয়েছিলেন গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাত। এদিন তাঁরই স্থলাভিষিক্ত হলেন রাজীববাবু। কিন্তু কেন এই পরিবর্তন? ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, পঞ্চায়েত নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে রাজীববাবুর উপর কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন মমতা। তবে তার জেরে দপ্তর বদল কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। রাজীববাবুর জায়গায় রাজ্যের নতুন সেচমন্ত্রী হয়েছেন অধ্যাপক সৌমেন মহাপাত্র। রদবদলের এই পর্বে সবচেয়ে পদোন্নতি হয়েছে তাঁরই। আসন্ন বর্ষা মরশুমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বাঁধ সংস্কার ও মেরামত এবং বিভিন্ন জলাধার থেকে জল ছাড়া সংক্রান্ত নানা জটিল আবর্তন সেচমন্ত্রী হিসেবে সৌমেনবাবু কতটা সামলাতে পারেন, এখন সেটাই দেখার। মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে সৌমেনবাবু দেখভাল করতেন জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দপ্তরের। রাজ্যে যা ‘জল ধরো জল ভরো’ দপ্তর হিসেবে লোকমুখে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। পঞ্চায়েত দপ্তরের সঙ্গে সেই দপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্ব সামলাবেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়।