সংসদ ও সংসদের বাইরে তৃণমূল যে জোরদার রাজনৈতিক আন্দোলনে যাবে তার স্পষ্ট ইঙ্গিত আগেই পাওয়া গিয়েছিল। এবার নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনে নামার পথে নমশূদ্র সমাজকেও পাশে পেয়ে গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
নমশূদ্র বিকাশ পরিষদের দাবি, ১৯৫১ থেকে ২০১৪-র ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম সাবেক পূর্ব পাকিস্তান ও পরে বাংলাদেশ থেকে এপার বাংলায় এসে মোট ৪ কোটির বেশী হিন্দু বসবাস করছেন। তাঁদের নাগরিকত্ব হরণের পাকাপাকি বন্দোবস্ত লোকসভায় ওই বিল পাশের মাধ্যমে হয়ে গেল বলেই মনে করছে নমশূদ্র বিকাশ পরিষদ। তারা জানাচ্ছে, ওই নাগরিকদের দরজায় দরজায় গিয়ে একথা প্রচার করা হবে।
বইলে জানানো হয়েছে, ২০১৪-র ৩১ ডিসেম্বরের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের মুখে পড়ে যেসব হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ পালিয়ে এসে ভারতে বসবাস করছেন, তাঁদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এই বিলের বিরোধিতা করে নমশূদ্র বিকাশ পরিষদের কার্যকরী সভাপতি মুকুলচন্দ্র বৈরাগ্যের কথায়, ‘এই বিলের বিরুদ্ধে আমরা রাজ্য জুড়ে জনমত গঠন করব। লাগাতার আন্দোলনে নামব। যার ফলে বাংলা থেকে বিজেপির অস্তিত্ব লোপ পাবে’।
মুকুলের কথায়, ‘বইলে জানানো হচ্ছে, ছয় বছর পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যাবে। এর মানে কী? ভারতে যারা ভোট দিচ্ছেন, সরকারি চাকরি করছেন, তাঁদের নাগরিকত্বের জন্য ফের আবেদন করতে হবে! অর্থাৎ মেনে নিতে হবে যে, এতদিন তাঁরা বিদেশি ছিলেন। তাছাড়া ধর্মীয় অত্যাচারই বা প্রমান করা যাবে কী করে? ওই সব দেশ স্বীকার করবে? নমশূদ্র সমাজের ওই শীর্ষনেতার কথায়, ‘এই বিল আসলে চার কোটি হিন্দু নাগরিকের নাগরিকত্ব হরণের বিল’।
তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, এই বিল এনে বিজেপি ভেদাভেদের রাজনীতি করছে। বাংলার ক্ষেত্রে তাদের লক্ষ্য, ওপার বাংলা থেকে এসে এই রাজ্যে বছরের পর বছর ধরে বসবাস করা হিন্দুদের ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসানো। রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের প্রশ্ন, ‘ওই সব দেশ থেকে ভারতে আসা মুসলমানরা কী দোষ করলেন? তাঁদের কেন নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না’? তিনি বলেন, ‘বিলের বিরুদ্ধে লাগাতার মিছিল, মিটিং, সভা-সমিতি হবে। এখানে সবাই একসঙ্গে আছেন, থাকবেনও’।