গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে দর্শনার্থীদের উৎসাহের পারদ যে ঊর্ধ্বগামী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আনুষ্ঠানিক ভাবে মেলার উদ্বোধন ১২ তারিখ থেকে হলেও এখন থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে মেলায়। গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে মানুষের এই আগ্রহকে আরও বৃদ্ধি করতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ম্যুরালের মাধমে ফুটিয়ে তোলা হবে গঙ্গাসাগরের পৌরাণিক ব্যাখ্যা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে গঙ্গাসাগর মেলার সার্বিক পরিকাঠামোর উন্নয়ন হওয়ার ফলে সাগরে এখন সারা বছর ভিড় জমাচ্ছেন পুণ্যার্থী থেকে সাধারণ পর্যটক, সকলেই। সাগরে কপিলমুনির মন্দিরে সাগর রাজা, কপিলমুনি-সহ বেশ কিছু মূর্তি আছে। প্রতি বছর ভিন রাজ্য থেকে শুধুমাত্র পুণ্য লাভের আশায় লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী চলে আসেন এই প্রত্যন্ত দ্বীপভূমিতে। এতদিন গঙ্গাসাগর বলতেই শুধু কপিলমুনির মন্দির আর সমুদ্রতটই ছিল ভ্রমণার্থীদের কাছে প্রধান আকর্ষণ। সেই আকর্ষণকে আরও বৃদ্ধি করতে এবং কপিলমুনির মন্দিরের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলতেই এই ম্যুরালের ভাবনা রাজ্য সরকারের।
সাগর–বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের সহায়তায় এই ম্যুরাল পার্কটি তৈরি করা হয়েছে। পরিকল্পনায় আছেন শিল্পী দুর্জয় সেন। গত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে পুরাণের নানান বই থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই ম্যুরাল পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। আর্ট কলেজের প্রাক্তনী দুর্জয়ও এই পার্কটি তৈরি করতে পেরে খুব খুশি। মুর্যালে শেষ তুলির টান দিতে দিতে দুর্জয় বললেন, ‘অনেক কাজ আগে করেছি। কিন্তু এই কাজটি চ্যালেঞ্জ ছিল। আশা করছি, ভ্রমণার্থীদের ভাল লাগবে।’
সত্যি যে ম্যুরালগুলি ভ্রমণার্থী ও পর্যটকদের মন কেড়েছে, তা ভিড় দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। মূর্তিগুলি নিয়ে চলছে দেদার সেলফি তোলা। এক সেনা জওয়ানের স্ত্রী পিঙ্কি আচার্য বলেন, ‘মূর্তিগুলি সত্যি অসাধারণ হয়েছে। এই প্রথমবার এলাম। খুব ভাল লাগছে। ম্যুরাল পার্কটিও খুব সুন্দর। পৌরাণিক ব্যাখ্যাটাও পড়লাম। প্রচুর সেলফি তুললাম।’
মন্দিরের ঠিক পাশে দু’টি বিশাল ডালা আর্কেডের দেওয়ালে ফাইবার গ্লাস দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ১২টি ম্যুরাল। প্রত্যেকটি ম্যুরালে সুন্দর মূর্তির মাধ্যমে থাকছে পৌরাণিক ব্যাখ্যা। বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজিতে লেখা থাকছে সাগরের পুরাণ কাহিনী। গত ২৮ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সাগরের প্রস্তুতি সফরে এসে এই ম্যুরাল পার্কের উদ্বোধন করেছেন। এই পার্কটিকে আলো দিয়ে সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। থাকছে বসার জন্য কাঠের চেয়ার। এই ম্যুরালগুলির পাশাপাশি একটি ফাইবার গ্লাসের শিবমূর্তি তৈরি করা হয়েছে। শিবের জটায় আছে গঙ্গা। সেখান থেকে জলধারা নেমে এসেছে। পুরো বিষয়টি ফুটিয়ে তোলার জন্য নানান রঙিন আলো ব্যবহার করা হয়েছে।