গত বৃহস্পতিবারই সর্বসম্মত ভাবে পুর এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রী হিসাবে ফিরহাদ হাকিমের নাম গৃহীত হয়েছে। আগামী ৩ ডিসেম্বর মেয়র হিসাবে শপথ নেবেন তিনি। কিন্তু দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ওপর যে আস্থা দেখিয়েছেন তাকে সম্মান জানাতে আগে থেকেই কাজে নেমে পড়েছেন তিনি।
শুক্রবার তিনি বলেছিলেন শহরকে আরও সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে তোলার কথা। আর সে কথা রাখতেই সোমবার প্রথম পদক্ষেপ নিলেন ভাবি মেয়র। যত্রতত্র পানের পিক, আবর্জনা ইত্যাদি ফেলার জন্য এতদিন পুর-আইনে শাস্তির ব্যবস্থা ছিলনা। তাই রাজ্য বিধানসভায় সোমবারই এই সংক্রান্ত একটি পুর আইনে সংশোধনী এনেছে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর। পুরমন্ত্রী (তথা কলকাতার ভাবি মেয়র) ফিরহাদ হাকিমের আনা পুর আইনের সংশোধনীটি সর্বসম্মতভাবেই পাশ হয়ে গেছে।
এতদিন পুরসভা এলাকার এই আইনের এ ধরনের অপরাধের জন্য নির্ধারিত জরিমানার পরিমাণ ছিল নূন্যতম ৫০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। সংশোধনী–পরবর্তী সময়ে ওই জরিমানার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াল নূন্যতম ৫০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা। ‘কর্পোরেশন’ এলাকায় জরিমানার পরিমাণ নির্ধারিত হল সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা। কলকাতা, হাওড়া, বিধাননগর, চন্দননগর, আসানসোল এবং শিলিগুড়ির মতো শহরে শেষোক্ত পরিমাণই কার্যকর হবে। শহরকে আবর্জনা মুক্ত করতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন ফিরহাদ, এমনই জানিয়েছেন তিনি। রাজ্য সরকারের আশা, শহর ও শহরতলির নাগরিকদের একাংশ যাঁরা যত্রতত্র আবর্জনা বা পানের পিক ফেলেন তাঁরা এই জরিমানাতেই জব্দ হবে।
নতুন আইনটিতে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে বলে জানা গেছে। মমতার পথে হেঁটেই প্রবীণ নাগরিকদের সুবিধার্থে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন ভাবি মেয়র। এতদিন ৬৫ বছর বয়সের পর থেকে প্রবীণ নাগরিকেরা সম্পত্তিকরে ছাড় পেতেন। এখন থেকে ৬০ বছর বয়সের পর থেকেই তাঁরা সম্পত্তিকরে ১০ শতাংশ ছাড় পাবেন। সরকারি মালিকানাধীন হাসপাতাল বা ক্লিনিকের সম্পত্তিকরে পুরোপুরি ছাড় দেওয়া হয়েছে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে কিছু অসুবিধে হচ্ছিল নাগরিকদের। সেটি বিচার করেই ঠিক করা হয়েছে, এখন থেকে শুধু পুরসভা এলাকা নয়, যে কোনও প্রান্তের যে কোনও শাখার ব্যাঙ্কে পুরসভার টাকা জমা দিতে পারবেন নাগরিকরা।
বিধানসভায় অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে ‘দি ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল (সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল ২০১৮’ সংশোধনীটি আনেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, ‘শহরে এখন কোথাও কোনও কাঁচা রাস্তা নেই। মুখ্যমন্ত্রী বার বার বলছেন এবং আন্তরিকভাবে চাইছেনও আমাদের শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে। তাই এই সংশোধনী। আমরা নাগরিকের ওপর জরিমানা চাপাতে চাই না। আমাদের জরিমানা করতে বাধ্য করবেন না। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হল আমাদের শহরকে আবর্জনা মুক্ত রাখার।’ তার সাথে আরও বলেন, ‘মশা নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। নাগরিক সচেতনতা না বাড়ালে মশা মোকাবিলা করা কঠিন। পুরসভার কর্মীরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। কিন্তু কিছু নাগরিক তাঁদের পরামর্শ মানছেন না। ক্ষতি হচ্ছে সকলের। এমনকী, মশার তেল দিতে গেছেন, এমন পুরকর্মীকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এমন উদাহরণও আছে। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখলে শহর বসবাসের জন্য নিরাপদও হয়।’
গতকালের সভায় অংশ নিয়ে তৃণমূল বিধায়ক সুজিত বসু বলেন, ‘এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সংশোধনী। নাগরিকদের একাংশ যেখানে সেখানে নোংরা–আবর্জনা ফেলে শহরকে কলুষিত করছে। ‘ উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের অর্জুন সিং, অপূর্ব সরকার প্রমুখ। দলীয় নেতারা মনে করছেন শপথ নেওয়ার আগেই যেভাবে পুরসভার কাজে ব্রতী হয়েছেন ফিরহাদ, তাতে শীঘ্রই ‘ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি’ রুপে আত্মপ্রকাশ করবে মহানগর৷