লোকসভা ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচারের ঢাকে কাঠি দেওয়ার জন্য ব্রিগেডে জনসভা ডেকেছে বামফ্রন্ট। অথচ নির্বাচনী লড়াইয়ের রণকৌশল নিয়ে ফ্রন্টের ভিতরেই তুমুল মতপার্থক্য। ফলে ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে শরিক দলগুলির নেতারা একসুরে কীভাবে কথা বলবেন, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দলের অন্দরেই। কংগ্রেসের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে শরিকদের মধ্যে যে ভিন্ন মত রয়েছে, সেব্যাপারে সভায় আগত কয়েক লক্ষ মানুষের সামনে কেমন করে এড়িয়ে যাওয়া যাবে, তা নিয়েও উঠছে নানা প্রশ্ন। সব মিলিয়ে জোট নিয়ে এক সুরে বার্তা দেওয়া নিয়ে বামেদের অন্দরেই প্রবল অস্বস্তির আবহাওয়া। তাই ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিয়েও স্বস্তিতে নেই বাম নেতারা।
ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চ থেকে বাংলায় বিজেপি ও তৃণমূল উভয়কেই পরাস্ত করার ডাক দেওয়ার পাশাপাশি এই দুই দলের বিরোধী সমর্থকদের ভোট যথাসম্ভব এক জায়গায় আনার বার্তাও দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে। তাই কংগ্রেসকে এই লক্ষ্যে দূরে সরিয়ে রাখা চরম নির্বুদ্ধিতার কাজ হবে। আলিমুদ্দিনের কর্তারা চাইছেন, ব্রিগেড সমাবেশ থেকে বামফ্রন্ট তো বটেই, সহযোগী দলগুলির নেতারাও সেই সুরেই বার্তা দিন। কিন্তু আরএসপি বা ফরওয়ার্ড ব্লকের মতো শরিক দলগুলি কংগ্রেসের সঙ্গে সরাসরি নির্বাচনী জোট করার আদৌ পক্ষপাতী নয়। সিপিএমের তরফে এই ধরনের জোট করার বিষয়টি গত বিধানসভা ভোটের মতো চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে তারা এবার তা মানবে না বলে হুমকি দিয়ে রেখেছে। এমনকী, সিপিএম কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের রাস্তায় হাঁটলে সেই গাঁটছড়াকে বামফ্রন্টের নামে চালানো যাবে না বলেও সতর্ক করেছে তারা। এই অবস্থানে অনড় থাকলে ব্রিগেডের সমাবেশে তাদের নেতৃত্ব কিছুতেই সিপিএম নেতাদের পথে হেঁটে কথা বলবেন না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। আর সমস্যা বা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এই ইস্যুকে ঘিরেই।
সিপিএম-সহ ফ্রন্টের শরিক দলের নেতারা এখন প্রকাশ্যে এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাইছেন না। ডিসেম্বরে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং আরএসপি ও ফরওয়ার্ড ব্লকের পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে বাম নেতারা শেষ পর্যন্ত একসুরে বক্তব্য রাখতে পারবেন কি না। পাঁচ রাজ্যের ভোটে সামগ্রিকভাবে কংগ্রেস কতটা সাফল্য লাভ করে, তার উপরই এই বাম দলগুলির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনেকটাই নির্ভর করবে বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল। তবে তারা সকলেই নিজেদের পূর্ব অবস্থানে অনড় থাকলে ব্রিগেড সমাবেশে ফ্রন্টের ঐক্যের ছবি রক্ষা করা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।




