বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে তালা ঝুলিয়ে ছাত্র আন্দোলনের নামে বেনজির বেলাগাম অসভ্যতা।
তার জেরে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসে সমাবর্তন অনুষ্ঠান বাতিল করা হল। আজ সমাবর্তন অনুষ্ঠান হচ্ছে নন্দন ৩–এ। রাজ্যের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান ক্যাম্পাসে না হয়ে নন্দনে হচ্ছে, এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হোক কলরব’ আন্দোলনের সময়ও ক্যাম্পাসেই হয়েছিল সমাবর্তন। ছাত্রদের ‘জঙ্গি’ আন্দোলনের জেরেই বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষের। এভাবে ছাত্র আন্দোলন কতটা যুক্তিসঙ্গত, সেই প্রশ্নও উঠছে।
ছাত্ররা এভাবে আন্দোলন করলে ক্যাম্পাসে সমাবর্তন করা যাবে না বলে সোমবার সকালেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া। পরে বিকেলে ক্যাম্পাসে সমাবর্তনের অনুষ্ঠান বাতিলের কথা ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে সাম্মানিক ডি লিট এবং বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ভারতরত্ন সিএনআর রাওকে সাম্মানিক ডিএসসি দিতে চলেছে প্রেসিডেন্সি। বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমন্ত্রিত শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জিও। ছাত্র আন্দোলনের জেরে তাঁরা যাতে কোনওভাবেই অসম্মানিত না হন, তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। প্রথমে ঠিক হয়, রাজভবনে হবে অনষ্ঠান। গভর্নিং বোর্ডের বৈঠক না হওয়ায় শুধু ডি লিট ও ডিএসসি দিয়েই অনুষ্ঠান শেষ করা হবে। ছাত্রছাত্রীদের পরে ব্যক্তিগতভাবে ডিগ্রি দেওয়া হবে। , রাজ্যপাল ও আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, তিনি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে থাকতে পারবেন না। উপাচার্যকেই সমাবর্তন পরিচালনার দায়িত্ব দেন। এটা জানার পর রাজভবনে অনুষ্ঠান করা থেকে পিছিয়ে আসে বিশ্ববিদ্যালয়। শেষে সমাবর্তন অনুষ্ঠান নন্দন ৩–এ করার সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে প্রেসিডেন্সির পড়ুয়াদের আন্দোলনের ধরন নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রী। কর্তৃপক্ষের ভূমিকারও সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তো আর কারখানার গেট নয় যে, তালা লাগালাম আর চলে গেলাম। এই রাজনীতিটা আসলে গত ৩৪ বছরের। কী ছাত্র, কী কর্তৃপক্ষ— কেউই এর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেনি। কর্তৃপক্ষ দেখছে কিন্তু ব্যবস্থা নিতে পারছে না। তবে হস্টেলের ব্যাপারে বলব, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে। হস্টেল সংস্কারের কাজ যাতে দ্রুত শেষ হয় তার ব্যবস্থা করতে।’
হিন্দু হস্টেল ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে ৪০ দিন ধরে আন্দোলন চলছে প্রেসিডেন্সিতে। ৩ আগস্টের রাত থেকে রাজারহাটের হস্টেল ছেড়ে উপাচার্যের ঘরের সামনের করিডরে রাত কাটাচ্ছেন পড়ুয়াদের একাংশ। সোমবারের মধ্যে হিন্দু হস্টেল না পেলে জমায়েতের ডাক দিয়েছিলেন তাঁরা। সেইমতো এদিন সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে, ‘ক্লোজড’ লেখা পোস্টার সেঁটে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন ছাত্রছাত্রীরা। সঙ্গে চলে স্লোগানিং। উপাচার্য, রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার–সহ অন্যান্য শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী কাউকেই ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ছাত্ররা কিছুতেই গেটের তালা না খোলায় বাধ্য হয়েই ফিরে যান উপাচার্য। অন্য শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদেরও ফিরে যেতে বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে উপাচার্য বলেন, ‘কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর আন্দোলনের কারণে একটা বিশ্ববিদ্যালয় অচল হতে পারে না। পুলিস দিয়ে বিক্ষোভ তুলে ভেতরে ঢুকতে চাই না। সমাবর্তনের আগে গভর্নিং বোর্ডের বৈঠক ছিল। যা হল না। এমন চললে সমাবর্তনে পড়ুয়াদের ডিগ্রি দেওয়া সম্ভব নয়।’ আন্দোলনরত ছাত্রদের বক্তব্য, রবিবার তাঁরা গিয়ে দেখে এসেছেন, ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাজ প্রায় শেষ। এই দুটি ওয়ার্ডে তাঁদের থাকতে দিতে হবে। কিন্তু এভাবে সমাবর্তনের আগে গেটে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন কতটা যুক্তিপূর্ণ? ছাত্রদের বক্তব্য, ৩ বছর ধরে সংস্কারের কাজ চলছে। কর্তৃপক্ষকে বারবার বলা সত্ত্বেও তাঁরা শুনছেন না। ফলে বাধ্য হয়েই গেট আটকানোর কর্মসূচি নেওয়া হয়। সমাবর্তন ক্যাম্পাসে না হওয়ায় আমরাও দুঃখিত।