বাজার থেকে বিভিন্ন রাজ্যের ঋণ নেওয়ার পরিসংখ্যান অতিসম্প্রতিই পেশ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তাতে উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। বাংলার থেকে অনেক বেশি ঋণ নিয়েছে উত্তরপ্রদেশ। পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর বাজেট পেশের সময় উত্তরপ্রদেশের মোট ঋণ ছিল ৬ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। সেখানে বাজেট নথি অনুযায়ী ২০২০-‘২১ আর্থিক বছর পর্যন্ত বাংলার মোট ঋণ ছিল ৪ লক্ষ ৮১ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি আর্থিক বছরের শেষে ৫ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছতে পারে বলে উল্লেখ রয়েছে বাজেট নথিতে। আর এই এক বছরে উত্তরপ্রদেশের ঋণের বোঝা বাড়বে আরও। ফলে ঋণের প্রশ্নে যোগীর রাজ্য যে এগিয়ে থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। সরকার চালানো ও জনমুখী প্রকল্পে খরচের জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বাজার থেকে ঋণ নিতে হয় রাজ্যগুলিকে। বাংলাকেও তা নিতে হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্রে পাওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, চলতি আর্থিক বছরের প্রায় প্রতি মাসেই পশ্চিমবঙ্গের থেকে বেশি টাকা ঋণ নিয়েছে যোগীরাজ্য। বছরের প্রথম মাসে বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে সমানে সমানে এগিয়ে চলেছে আরেক বিজেপিশাসিত রাজ্য কর্ণাটক।
প্রসঙ্গত, এমাসে এখনও পর্যন্ত চার দফায় রাজ্যগুলি যে ঋণ নিচ্ছে, তার হিসেব পেশ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। দেখা যাচ্ছে, চার দফাতেই উত্তরপ্রদেশ ও কর্ণাটক অন্যান্য রাজ্যকে টপকে এগিয়ে গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশ ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে এই পর্বে। সেখানে কর্ণাটক প্রতি দফায় ৫ হাজার কোটি টাকা করে মোট ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে চলেছে। অন্যদিকে, বাংলা এখনও পর্যন্ত এমাসে তিন দফায় নিচ্ছে ৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি আর্থিক বছরের বিভিন্ন মাসে রাজ্যগুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বাজার থেকে যে ঋণ নিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, বাংলার থেকে উত্তরপ্রদেশ এগিয়ে। মে মাসে বাংলা নিয়েছিল ৫ হাজার কোটি টাকা। সেখানে সেই মাসে উত্তরপ্রদেশের ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। জুন মাসেও বাংলা নিয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা। সেখানে যোগীরাজ্য ঋণ তুলেছে ১০ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশ শুধুমাত্র বাজার থেকেই ঋণ নিয়েছে ৪ লক্ষ কোটি টাকা। এছাড়াও আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নেয় রাজ্যগুলি। স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে যে টাকা রাজ্যে জমা পড়ে, তা থেকেও মেলে ঋণ। ক্ষমতায় থাকাকালীন বামফ্রন্ট সরকার স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প থেকে প্রচুর টাকা ঋণ নিত। সুদের হার বেশি বলে তৃণমূল সরকার স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প থেকে ঋণ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তবে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে নেওয়া ঋণ এখনও পরিশোধ করতে হচ্ছে। ঋণের বোঝা বৃদ্ধি হওয়ার এটা অন্যতম কারণ, বলছেন সরকারি কর্তারা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে একগুচ্ছ আর্থ-সামাজিক প্রকল্প চালু করেছেন। পরিকাঠামো উন্নয়ন, প্রশাসন পরিচালনা সহ এই প্রকল্পগুলির জন্য সরকারের বিপুল টাকা খরচ হয়। বিনা পয়সায় রেশনে খাদ্যশস্য সরবরাহ, কৃষকদের আর্থিক সাহায্য ও শস্যবিমা, স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রী সহ একগুচ্ছ প্রকল্প পুরোপুরি রাজ্যের খরচে চলে। উত্তরপ্রদেশ সরকারের এই ধরনের কোনও খরচ নেই। তা সত্ত্বেও যোগী সরকার দেনা করেই চলেছে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়।