বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ খুললেই বিরোধীদের চুপ করাতে তাদের হাতে থাকা এজেন্সি লেলিয়ে দেয় মোদী সরকার। বারবারই এই অভিযোগ করে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দেশের বিরোধী নেতা-নেত্রীরা। এই অভিযোগ যে আদৌ ভ্রান্ত নয়, একাধিকবার মিলেছে তার প্রমাণ। বৃহস্পতিবারও গোয়ায় নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, তৃণমূল গোয়ার রাজনীতিতে পা রাখার পর থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ইডি আমাকে ১০ বার তলব করেছে। উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব, প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীদের ভাষণেও ঘুরে ফিরে থাকছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ‘এজেন্সি-রাজ’-এর কথা।
ইডি, সিবিআই, আয়করের মতো কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির হালের কাজকর্ম নিয়ে ভোটের ময়দানে সরব পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের চরণজিৎ সিং চান্নি, আপ নেতা তথা দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, আরও দুই কংগ্রেস নেতা গোয়ার ভোটে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত পি চিদম্বরম এবং উত্তরাখণ্ডে হরিশ রাওয়াতেরা। সরব মহারাষ্ট্রের শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ডিএমকে নেতা এমকে স্ট্যালিন, কেরালার সিপিএম মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। বস্তুত, গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে যে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভার ভোট গ্রহণের পর্ব শুরু হয়েছে। এই সব রাজ্যেই বিরোধীদের অভিন্ন ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘এজেন্সি-রাজ।’ বিজেপির নেতাদের একাংশও মানছেন ইডি, সিবিআই, আয়কর বিভাগের বিরোধী শিবিরের নেতা, মন্ত্রী, ঘনিষ্ঠজনের বিরুদ্ধে অভিযান বেড়েছে।
তবে দিন দুই আগে এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিরোধীদের এই অভিযোগ নিয়ে খানিক উপহাস করেছেন। তাঁর বক্তব্য, দেশে সারা বছরই কোনও না কোনও নির্বাচন লেগে থাকে। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগকে প্রধানমন্ত্রী হালকা ছলে উড়িয়ে দিলেও ইডি, সিবিআই, আয়করের সাম্প্রতিক অভিযানগুলি দেখলে স্পষ্ট হবে, ভোটের মুখে বিরোধী শিবিরে এজেন্সির হানাদারি বেড়ে যাচ্ছে। এমনকী নির্বাচনকে সামনে রেখে অভিযানের অঙ্ক মেনেই পুরনো কেস নিয়ে নাড়াচাড়া করা হচ্ছে। যেমন, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চান্নির ভাইপো ভুপিন্দর সিংয়ের বাড়িতে ইডি গত ৪ ফেব্রুয়ারি হানা দেয় ২০১৮-র একটি এফআইআর-কে হাতিয়ার করে। তার বাড়ি থেকে ১০ কোটি টাকা নগদ পাওয়া গিয়েছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির দাবি। তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই ২০১৪ থেকেই বলে আসছেন বিরোধীদের দিকে এজেন্সি লেলিয়ে দেওয়া মোদী সরকারের অন্যতম কর্মসূচি। তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগের সঙ্গে অভিযান নিয়ে মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য-পরিসংখ্যান মিলে যাচ্ছে। মোদী ২০১৪-এ দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এ পর্যন্ত বিরোধী দল এবং নানা ক্ষেত্রে সরকারের সমালোচক মিলিয়ে ৫৭০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে সিবিআই, ইডি, আয়করের মতো কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন তদন্ত এজেন্সি। অন্যদিকে, বিজেপি ও তাদের সহযোগী দলের মাত্র ৩৯ জন নেতা-নেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সব এজেন্সি। আগের ইউপিএ-টু সরকারের তুলনায় মোদীর সাত বছরে সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের কিংবা ব্যবস্থা গ্রহণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩৪০ শতাংশ।
হালে উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশের পর পরই সক্রিয় হয়ে ওঠে আয়কর দফতর। সমাজবাদী পার্টির বিধায়ক তথা ব্যবসায়ী পম্পি জৈনের বাড়ি, অফিস-সহ ৩০ জায়গায় হানা দেয় আয়কর দফতর। আবার পাঞ্জাবে ড্রাগ পাচারের একটি পুরনো মামলায় প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক সুখপাল সিং খৈরাকে গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট। গত বছর বিধানসভা ভোটের আগে বাংলার পাশাপাশি তামিলনাড়ু এবং কেরালাতেও সমানতালে চলে এজেন্সি রাজ। তামিলনাড়ুতে ভোটের আগেই স্পষ্ট ছিল ক্ষমতায় ফিরছে ডিএমকে এবং মুখ্যমন্ত্রী হবেন স্ট্যালিন। ভোটের আগে তাঁর মেয়ের বাড়িতে আয়কর হানা হয়। বাংলাতেও ভোট শুরুর দিন কয়েক আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা নোটিস ধরায় ইডি। সিবিআই, ইডি এবং এনআইএ-র দফায় দফায় অভিযান চালায় কেরালায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালাকৃষ্ণাণের বাড়ি এবং মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের অফিসে।