১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি বিহারের পাটনায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন সুশান্ত সিংহ রাজপুত। আদি বাড়ি বিহারের পূর্ণিয়া জেলায় হলেও বেড়ে ওঠা পাটনাতেই। সেখানেই সেন্ট ক্যারেন্স হাই স্কুলে শুরু হয় শিক্ষাজীবন। তারপর দিল্লীর হংসরাজ মডেল স্কুল থেকে পড়াশোনা করেন তিনি। এরপর দিল্লী কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং-র প্রবেশিকা পরীক্ষায় সপ্তম স্থান পেয়েছিলেন। পদার্থবিজ্ঞানের অলিম্পিয়াডে জয়ী হয়েছিলেন। হতেই পারতেন মেধাবী, উচ্চপদস্থ চাকুরে। কিন্তু তার পরিবর্তে সুশান্ত বেছে নিয়েছিলেন রুপোলি দুনিয়াকেই। তাঁর মনে অভিনয় ও নাচের প্রতি ভালবাসার বীজ বপন করেছিলেন বলিউডের কোরিয়োগ্রাফার শামক ডাভর। তাঁর কাছেই নাচের প্রশিক্ষণ নিতেন সুশান্ত।
২০০৫-এর ফিল্মফেয়ার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি ছিলেন ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সার। তার পরের বছর অস্ট্রেলিয়ায় তিনি কমনওয়েলথ গেমস-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও অংশ নেন। মুম্বইয়ে এসে সুশান্ত প্রথমে নাদিরা বব্বরের নাটকের দলে যুক্ত হন। সে সময় টেলিভিশনে চকোলেটের বিজ্ঞাপনেও তিনি ছিলেন জনপ্রিয় মুখ।
ধীরে ধীরে থিয়েটার থেকেই ছোট পর্দায় হাতেখড়ি। ২০০৮ সালে একতা কপূরের মেগাসিরিয়াল ‘কিস দেশ মেঁ হ্যায় মেরা দিল’-এ জনপ্রিয় হয় সুশান্তের অভিনয়। এর পর ‘পবিত্র রিস্তা’ সিরিয়ালেও তাঁর অভিনয় দর্শকদের মন জয় করে নেয়। এরপরই ব্রেক মেলে বড়পর্দায়। ২০১৩ সালে প্রথম অভিনয় ছবিতে। অভিষেক কপূরের পরিচালনায় ‘কাই পো চে’ ছবিতে রাজকুমার রাও ও অমিত সাধের সঙ্গে তিনিও ছিলেন অন্যতম মুখ্য অভিনেতা। ছবি হিট হতেই সাফল্য পান সুশান্ত।
এরপর দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় বলিউডের বড় পর্দায় ব্যোমকেশ বক্সীকে নতুন রূপে পেশ করেন তিনি। ২০১৫ সালে মুক্তি পেয়েছিল থ্রিলার ‘ডিটেক্টিভ ব্যোমকেশ বক্সী’। তার পরের বছরেই সুশান্ত সিংহ রাজপুত নিজেকে ধরা দেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি রূপে। নীরজ পাণ্ডের পরিচালনায় ধোনির বায়োগ্রফি ‘এম এস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’-তে সুশান্তের অভিনয় তুমুল প্রশংসিত হয়।
সেইময় ধোনির চরিত্র সঠিক ভাবে পর্দায় তুলে ধরতে তিনি মাঠে কাটিয়েছেন বহু সময়। প্রাক্তন জাতীয় উইকেটকিপার কিরণ মোরের কাছে কোচিং শিখেছিলেন। নিখুঁত নকল করেছিলেন ধোনির ব্যাটিং স্টাইল। পর্দায় ধোনির ঢংয়ে তাঁর হেলিকপ্টার শট বাহবা কুড়িয়েছিল স্বয়ং এমএসডির-ও। সুশান্তের ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য অন্য ছবিগুলি হল ‘রাবতা’, ‘কেদারনাথ’, ‘সোনচিড়িয়া’ এবং ‘ছিছোড়ে’। এ বছর মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ‘দিল বেচারা’। অসমাপ্তই থেকে গেল সেই ছবির কাজ। পাশাপাশি ১২ জন বিখ্যাত ভারতীয়ের বায়োপিকে তাঁর অভিনয় করার কথা ছিল।
অভিনেত্রী অঙ্কিতা লোখণ্ডের সঙ্গে দীর্ঘ সম্পর্ক ছিল সুশান্তের। ২০১৬ সালে বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁদের। ব্রেকআপের কারণ হিসেবে সুশান্তের বদলে যাওয়া অ্যাটিটিউড এবং কৃতী শ্যাননের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা বলা হয়। অঙ্কিতাও এ ব্যাপারে সুশান্তকেই সরাসরি দায়ী করেছিলেন। তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্ট দেখেই বোঝা যেত, এই বিচ্ছেদ কতটা কষ্ট দিচ্ছে অঙ্কিতাকে। সেই তুলনায় সুশান্ত অনেক নিরুত্তাপ ছিলেন।
‘রাবতা’ ছবির সহনায়িকা কৃতী শ্যাননের সঙ্গেও সুশান্তের সম্পর্ক ছিল বলে গুঞ্জন ছিল ইন্ডাস্ট্রিতে। তবে সেই সম্পর্কও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ২০১৮ সালে দু’জনে আলাদা হয়ে যান। কয়েক দিন আগেই জন্মদিন ছিল সুশান্তের আর এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী দিশা পাটানির। সহনায়িকা দিশার সঙ্গেও তাঁর বিশেষ সম্পর্ক ছিল বলে অনুমান অনেক অনুরাগীর। তবে সেই সম্পর্ক রয়ে যায় গুঞ্জনের স্তরেই। এরপর রিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গেও সুশান্তের ঘনিষ্ঠতা ঘিরে আলোড়িত হয় গুঞ্জন। শোনা যায়, এই মুহূর্তে রিয়া-ই ছিলেন তাঁর বিশেষ বান্ধবী।
গত ৮ জুনই রহস্যমৃত্যু হয় সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা সালিয়ানের। মুম্বইয়ের মালাডের এক বহুতল থেকে পড়ে গিয়ে তিনি মারা যান। পুলিশের ধারনা, তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। দিশার মৃত্যুতে সেইসময় শোকপ্রকাশ করেছিলেন সুশান্ত সিংহ রাজপুত। তখন কে আর জানত, এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হবে সুশান্তেরও। মাত্র ৩৪টি বসন্ত কাটিয়েই থেমে গেলেন সুশান্ত। ইদানীং তাঁর ছবি প্রত্যাশিত সাফল্য পাচ্ছিল না বক্সঅফিসে। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ নিজেই নিজেকে দিলেন না। ইতি টানলেন জয়যাত্রায়।
