৩ বিধানসভা উপনির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়েছে গেরুয়া শিবির। উপনির্বাচনের আগে মারাত্মক হম্বিতম্বি করেছিল বিজেপি ভোটে জেতার ব্যাপারে। কিন্তু ফল হয়েছে পুরো উল্টো। এরকম ল্যাজেগোবরে দশা কেন হল, তা খুঁজতে গিয়ে বিজেপি স্বীকার করল অতিরিক্ত আত্মতুষ্টি এবং গোষ্ঠীকোন্দলই এই হারের কারণ। শুধু তাই নয়, মমতার ভোটকৌশল এবং কৌশলী পিকে ফ্যাক্টরও স্বীকার করেছে বিজেপি।
আত্মতুষ্টি ও গোষ্ঠীকোন্দলে ব্যস্ত থাকার জন্যই যে গেরুয়া শিবিরের এই হার তা স্বীকার করেছে স্বয়ং অন্দরমহল । পাশাপাশি প্রশান্ত কিশোর ও তাঁর টিমের ছেলে-মেয়েদের এলাকায় মাটি কামড়ে পড়ে থাকার সুফল জোড়াফুল শিবির পেয়েছে সাম্প্রতিক উপনির্বাচনের ফলাফলে। বৃহস্পতিবার বিজেপি’র রাজ্য অফিসে তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে হারের ময়নাতদন্তে এমনই তথ্য উঠে এসেছে।
দলের দুই কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং শিবপ্রকাশ এদিন সকাল থেকে দফায় দফায় করিমপুর, কালিয়াগঞ্জ এবং খড়্গপুরের দলীয় প্রার্থী ও ভোটের কাজে যুক্ত জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে করিমপুরের প্রার্থী নিয়ে জেলার সঙ্গে রাজ্য নেতৃত্বের বচসা হয়। দলের অন্যতম রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের বদলে স্থানীয় প্রার্থীর পক্ষে সওয়াল করেন জেলার নেতারা। তাঁদের দাবি, বাড়ি বাড়ি না গিয়ে বড় বড় নেতাদের দিয়ে মিটিং করানোর খেসারত দিতে হয়েছে ভোটে। নদীয়ার পর্যবেক্ষক সাফ জানান, রাজ্য থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী, জয়প্রকাশ মজুমদার এবং তাপস ঘোষ নিজেরাই ভোটের ছক কষেছিলেন। প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করেননি জয়প্রকাশবাবু। তিনি হেঁটেছেন কম, গাড়িতে চড়েছেন বেশি। পাশাপাশি জেলার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং বিজেপি নেতাদের বাড়তি অহংকার বোধের নেতিবাচক ফলও উঠে আসে এই খারাপ ফলের কারণ হিসেবে।কালিয়াগঞ্জ ও খড়্গপুরের পরাজয়ে এনআরসি ইস্যু হয়েছিল বলে এদিন আলোচনায় উঠে এসেছে।
খড়গপুরে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে গাফিলতিও আলোচনায় উঠে এসেছে। উত্তরবঙ্গের আটটি লোকসভার মধ্যে সাতটিতে জয়ের জেরে কালিয়াগঞ্জ কার্যত হেলায় বিজেপি জিতবে বলেই ধরে নিয়েছিল। আখেরে সেই পর্যবেক্ষণ যে ভুল ছিল, তা এদিন কেন্দ্রীয় নেতারাও স্বীকার করে নিয়েছেন। একইসঙ্গে পিকে এবং তার টিমের ছেলে-মেয়েরা এলাকায় পড়ে থেকে ভোটারদের বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করেছে বলেও তিনটি কেন্দ্রের সম্ভাব্য ব্যর্থতা হিসেবে উঠে এসেছে।
একইসঙ্গে এদিন ফের রাজ্য এবং জেলা নেতৃত্বের মধ্যে একাধিক ইস্যুতে মতান্তর হয়েছে। যা মেটাতে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে দুই জাতীয় নেতাকে। সব মিলিয়ে ছ’মাস আগে লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর রাজ্য বিজেপি’র এই সার্বিক ব্যর্থতার ছবি আগামীদিনের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।