ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের অমর শহীদ বিপ্লবী ‘বাঘা যতীন’ খ্যাত শ্রী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের বুড়িবালামের তীরের বিখ্যাত যুদ্ধের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে রডা কোম্পানির রোমহর্ষক অস্ত্রহরণের ঐতিহাসিক ঘটনাটি। এই অস্ত্রলুঠের ঘটনা বাংলা তথা ভারতের বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের অভিমুখ বদলে দিয়েছিল। কারণ ১৯১৪ সাল থেকে অনুষ্ঠিত বিপ্লবীদের যুদ্ধকালীন যত ভয়াল একশ্যান ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে, তার মূলে প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রেই ছিল রডার অস্ত্রাগার থেকে লুন্ঠিত ‘মাউজার’ এর শক্তি। ‘রডা একশ্যান’ শুধুমাত্র দুঃসাহসী ও চমকপ্রদই নয়, এর রাজনৈতিক গুরুত্বও প্রচুর।
১৯১৪ সালের ২৬শে আগস্ট রডা কোম্পানির অস্ত্র দিন-দুপুরে রাজপথ থেকে লুঠ হয়। রডা অস্ত্র লুন্ঠন নিয়ে অনেক গল্প শোনা যায়। এর মধ্যে কোনটা ঠিক ও কোনটা বেঠিক সেটা সকলের পক্ষেই বোঝা মুশকিল। পুলিশ রিপোর্ট বা ষড়যন্ত্র মামলার রিপোর্ট থেকে ঘটনার কিছু খবর পাওয়া যায়, আর পাওয়া যায় শোনা গল্প থেকে। সরকারি রিপোর্টে সাল-তারিখ বা সরকারের জানা (সেটা ভুলও হতে পারে) তথ্যাদি পাওয়া যায়, কিন্তু শোনা গল্প নানা মুখে নানারকমের হতে বাধ্য। যাঁরা হাতে-নাতে এই কাজটি করেছিলেন তাঁরা কেউই কোন কথা বলার সুযোগ পাননি বলে এই বিষয়ের ঐতিহাসিক সত্য দেশবাসীর সামনে আসে নি আর কেউ চেষ্টাও করেন নি সত্যিকে সকলের সামনে তুলে ধরার। স্কুল কলেজের ইতিহাসের মুদ্রিত পাঠ্যপুস্তকে এই বিষয়ে তথ্য নেই, ফলে বর্তমান প্রজন্ম এই ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। রডা ষড়যন্ত্রের কথা পুলিশ যা জানত, তার থেকে বেশি তারা যেগুলো কোনদিন জানতে পারে নি, সেগুলোর গুরুত্ব অনেক বেশি।
সে যুগের দুর্ধর্ষ পুলিশকর্তা চার্লস টেগার্ট তাঁর নোটে লিখেছিলেন যে, তাঁরা অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছেন যে, হেম ঘোষের দল আত্মোন্নতির সমিতির ভগ্নাবশেষের সঙ্গে কলকাতায় মিলিত হয়েছে (আই.বি. রেকর্ড এফ.এন ১০৩০।১৯১৪)। তারপরে লিখেছিলেন, যে দলটি রডা অস্ত্র অপহরণ ঘটনাটি সংঘটিত করেছিল, তাঁরা ঢাকার হেম ঘোষের দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল (আই.বি. রেকর্ড এফ.এন ১০৩০।১৯১৪)। রডা অস্ত্র ডাকাতির ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল ১৯১৪ সালের মার্চ মাসে। পুলিশের গোপন নথি থেকে জানা যায় যে, এই সময়ে হেম ঘোষের দলের দু’জন নামকরা সদস্য, হরিদাস দত্ত ও খগেন দাসকে কলকাতায় পাঠানো হয়েছিল গোপন হত্যা সংগঠিত করার জন্য। পরবর্তীকালে বিপ্লবী নেতা শ্রী হরিদাস দত্ত নিজেই স্বীকার করেছিলেন যে, সেই সময়ের বিখ্যাত বিপ্লবী নেতা শ্রী হেমচন্দ্র ঘোষ, তাঁর বিপ্লবী গুপ্ত সমিতি ‘মুক্ত সংঘের’ (উত্তরকালে বি.ভি) তরফ থেকে খগেন দাস ও তাঁকে তাঁর দলের কলকাতা শাখার কাজ করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। ওই গুপ্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ছিলেন শ্রী শচন্দ্র পাল। হরিদাস দত্ত ও খগেন দাস শচন্দ্র পালের কাছে উপস্থিত হয়ে জানতে পারেন যে, ‘যুগান্তর’ ও ‘আত্মোন্নতি সমিতি’র সঙ্গে একযোগে কাজ করার নির্দেশ হেমচন্দ্র ঘোষ ঢাকা থেকে দিয়েছেন, এবং সে জন্যই শ্রী শচন্দ্র পাল নিজে বিপিন বিহারী গাঙ্গুলীর আত্মোন্নতি দলের সঙ্গে এবং তাঁরই নির্দেশে হরি ঘোষ (গুনেন ঘোষ) তাঁর সহকারী রূপে মুন্সেফ অবিনাশ চক্রবর্তী’র মাধ্যমে যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করছিলেন।
হরিদাস দত্ত ও খগেন দাস কলকাতায় আসার পরে তাঁরা ১৯১২ সালে চব্বিশ পরগণার জগদ্দল অঞ্চলের আলেকজান্ডার জুট মিলের সাহেব ইঞ্জিনিয়ার ওব্রায়েনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হয়। শ্রী শচন্দ্র পাল ও আত্মোন্নতি সমিতির ‘অনুকূলবাবু’ পরামর্শ করে হরিদাস দত্ত ও খগেন দাস কে ওব্রায়েনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য জগদ্দলে পাঠান। হরিদাস দত্ত ও খগেন দাস পাক্কা তিনমাস কুলি সেজে আলেকজান্ডার জুট মিলে দিনের পর দিন কাজ করেন এবং ওব্রায়েনের গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকেন। কিন্তু এত কিছু সত্বেও শেষরক্ষা হয় নি। ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যায় এবং ওব্রায়েন প্রাণে বেঁচে যান। দলের নির্দেশে হরিদাস দত্ত পলাতক হন এবং এক সমুদ্রগামী জাহাজের স্টোর কিপারের কাজ নেন। খগেন দাসও দলের নির্দেশমতো পলাতকের জীবন গ্রহণ করেন। টেগার্টের উল্লেখিত রিপোর্ট থেকে জানতে পারা যায় যে পুলিশ তাঁদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে জ্ঞাত হয়েছিল। এরপরে প্রথম মহাযুদ্ধের সময় আগত হয়। ১৯১৪ সালে যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ও রাসবিহারী বসু সমগ্র বিপ্লবী দলগুলি নিয়ে ভারতে একটি সশস্ত্র বিপ্লবের পরিকল্পনা করার আগে অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করতে উদ্যোগী হন। বিদেশে নির্বাচিত বিপ্লবী নেতারা জার্মানির সাথে যোগসাজসে ভারতে সশস্ত্র বিপ্লব সংগঠিত করতে ক্রমশঃ ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত হলে জাহাজ বোঝাই অস্ত্র আসতে পারে – প্রচুর অর্থও পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু তার আগে কিছুটা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তৈরি থাকা চাই। স্মাগলিং করা রিভলবার-পিস্তলে প্রকৃত লড়াই করা সম্ভব নয়। সুতরাং নেতারা অস্ত্র সংগ্রহ করার নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করতে তৎপর হলেন। এমন সময়ে বিপিন বিহারী গাঙ্গুলীর তরুণ বন্ধু শ্রী হাবু মিত্র সংবাদ দেন যে, রডা কোম্পানি ২৬শে আগস্ট (১৯১৪ সাল) বহু অস্ত্রশস্ত্র কাস্টম অফিস থেকে খালাস করে নিচ্ছে। তার মধ্যে থাকবে দালাই লামার অর্ডার মতন ৫০ টি মাউজার পিস্তল ও ৫০ হাজার রাউন্ড কার্তুজ। হাবু মিত্র বিপ্লবী নেতাদের রাস্তা থেকেই গাড়ি বোঝাই মাল কিভাবে আত্মসাৎ করা যায় তার পরিকল্পনা করতে বলেন। হাবু মিত্র নিজেই ছিলেন বি. রডা কোম্পানির একজন কেরানী। তিনি শুধুমাত্র খবর দিয়েই ক্ষান্ত থাকেন নি, তাঁকে যা করতে বলা হবে সেটা করতেও তিনি রাজি ছিলেন। এই খবর পাবার পরে যুগান্তর, আত্মোন্নতি, মুক্তি সংঘ, বরিশাল পার্টি ইত্যাদি দলের নেতাদের সর্বদলীয় বৈঠক হয় এবং পরিশেষে শ্রী শচন্দ্র পালের নেতৃত্বে ‘মুক্তি সংঘ’ এবং ‘আত্মোন্নতি’র কর্মীদের দ্বারা দিনে-দুপুরে একশ্যান সংগঠিত হয়।
এত অস্ত্র চুরির ঘটনা ভারতে এর আগে ঘটেনি। ঘটে গেল ১৯১৪ সালে। চুরি যাওয়া অস্ত্রের বেশ কিছু গিয়ে পৌঁছেছিল বাঘা যতীনের হাতে। অস্ত্র লুঠের মূলে ছিলেন ‘সুবোধ’ বালক হাবু। কিন্তু অন্য যুবকটি বিশ্বাসঘাতকতা না করলে হয়তো লড়াইটা জিততে পারতেন যতীনরা।
৩৯ নং মলঙ্গা লেনের বাসিন্দা অনুকুল চন্দ্র মুখার্জি ছিলেন আত্মোন্নতি সমিতির একজন একনিষ্ঠ কর্মী। অস্ত্র আর বিপ্লবী সংগ্রহে তাঁর পারদর্শীতার জন্য তাঁকে দলের সবাই ‘গুরুদেব’ বলে ডাকতেন। সেখানকারই ছেলে হাবু ওরফে শ্রীশচন্দ্র মিত্র। ডানপিটে ছেলে নজরে পড়ে যান গুরুদেবের। ছেলেটিকে তিনি গড়ে পিঠে নেন। ট্রেনিংইয়ে বেপরোয়া হাবু হারিয়ে গেল।
বিপ্লবী বিপিন বিহারি গাঙ্গুলীর বন্ধু রডা অ্যান্ড কোম্পানির কর্মী কালিপদ মুখার্জির চেষ্টায় ১৯১৩ সালের অগাষ্ট মাসে অস্ত্র হাবুর চাকরি হয়ে গেল রডা কোম্পানিতে। প্রত্যেকেরই লক্ষ্য ইংরেজদের ডেরা থেকে অস্ত্র লুঠ করা এবং বিপ্লবীদের হাতে তুলে দেওয়া। হাবু’র সূচ হয়ে প্রবেশের শুরু ১৯১৩ সালের আগস্ট মাসে। ফাল হয়ে বেরনো ১৯১৪-র আগস্টে। মাঝের এই একবছরে হাবু কমপক্ষে ৪০ বার দক্ষতার সাথে অস্ত্র খালাসের কাজ করে প্রিক সাহেবের বিশ্বাস অর্জন করে নিয়েছিল।
১৯১৪’র আগস্টে খিদিরপুর ডকে ‘ট্যাক্টিসিয়ান’ নামক জাহাজে করে এলো রডা কোম্পানির ২০২টি দেবদারু কাঠের বাক্স। যার একটিতে ছিল ৫০ টি মৌজার পিস্তল। ১৯১৪ সালের ২৬ আগস্ট প্রিক সাহেব ‘প্রিয়’ হাবুকে কাস্টম হাউসের জেটিতে নিয়ে গিয়ে মাল খালাসের প্রয়োজনীয় চিঠি ও টাকা দিয়ে চলে যান। হাবু সরকারি অফিসার- ইন-চার্জ এর কাছ থেকে মাল বুঝে নেওয়ার অছিলায় প্রতিটি বাক্স খুলে দেখে দশটি বাক্সকে চিহ্নিত করে রাখে। পূর্ব পরিকল্পনা মত অনুকুল চন্দ্র মুখার্জির পাঠানো গাড়ি সমেত সাতখানা মোষের গাড়িকে পোর্টের গুদামে নিয়ে যাওয়া হয়। সাত নম্বর গাড়ির সাথে হরিদাস দত্ত, অতুল নামে এক হিন্দুস্থানী কুলির ছদ্মবেশে ঢুকে পড়েন। এই হরিদাস ছিলেন ঢাকার বাসিন্দা এবং বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষের দলের লোক।
ছ’টি গাড়িতে বাকি মাল তুলে সাত নম্বর গাড়িটিতে হরিদাস হাবুর চিহ্নিত করা দশটি বাক্স তুলে দেন। হাবু ছ’টি গাড়িকে গেট পাস দিয়ে বেড়করে দেওয়ার কিছু পরে যখন ওই গাড়িগুলি খানিক দূরে চলে যায় তখন সাত নম্বর গাড়িটিকে গেট পাস দিয়ে বের করেন হাবু আর চালককে নির্দেশ দেন অতুলের নির্দেশ মত গাড়ি নিয়ে যেতে।
হাবু ছ’টি গাড়ি নিয়ে ভ্যান্সিটার্ট রো’এর রডা কোম্পানীর গুদামে হাজির হয়। কিন্তু সাত নম্বর গাড়ি আসেনি। উদ্বিগ্ন হওয়ার ভান করে সাত নম্বর গাড়ির খোঁজে সে বেড়িয়ে পরে। প্রিক সাহেবেরও কোন সান্দেহই হয় না।
এদিকে চালককে মদ্যপ করিয়ে হরিদাস অস্ত্র ভরতি গাড়ি নিয়ে চম্পট দেয়। পরের দিন হাজির হয় শিক্ষাগুরু অনুকুল চন্দ্র মুখার্জির বাড়ি। হিন্দ আইনক্স সিনেমা হলের উল্টোদিকে অনুকুল চন্দ্র মুখার্জি, বিপিন গাঙ্গুলী, হরিদাস দত্ত ও গিরীন্দ্র নাথ ব্যানার্জির মূর্তি সহ ঘটনাটির সংক্ষেপ বর্ননাও মেলে। ৩২/২ মলঙ্গা লেনে ছিল কান্তি মুখার্জির লোহার গোলা। অনুকুল চন্দ্র সেখানে বাক্সগুলো নামিয়ে রেখে মোষের গাড়িটিকে ছেড়ে দেন। এরপর দুটি গাড়িতে বাক্সগুলি চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় হিদারাম ব্যানার্জি লেনের মধ্যে দিয়ে ৩নং জেলিয়াপাড়া লেনের ভুজঙ্গ ধরের বাড়িতে।
সেখান থেকেই বিপ্লবীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সেই রাতেই পিস্তল ও টোটাগুলি বিলি করে দেওয়া হয়। তিন দিন পরও হাবু ফিরে না আসায় ২৯ আগস্ট বিকেলে প্রিক সাহেব ঘটনাটি পুলিশকে জানান।
৩১আগস্ট গিরীন্দ্রানাথ, অনুকূল চন্দ্র, নরেন্দ্রনাথ ভট্যাচার্য, কালিদাস বোস ও ভুজঙ্গ ধর কে গ্রেফতার করা হয়। বিপিন গাঙ্গুলি গা ঢাকা দেওয়ায় তাঁকে ধরা যায় নি। ২৭ সেপ্টেম্বর বিলি না হওয়া ২১২০০ টোটাসহ হরিদাস দত্তকে পুলিশ বড়বাজার এক গুদাম থেকে গ্রেফতার করে। মূল কর্তা হাবু তখন রংপুরে। পরে হাবু আশ্রয় নেয় অসমের গোয়ালপাড়াত। সেখান থেকে হাবু মণিপুরে চলে যায়। এরপর হাবুর আর কোন খোঁজ মেলেনি।
১৯১৫ সালের ৮ মার্চ ‘বেনিফিট অফ ডাউটে’ গিরীন্দ্রনাথ ও অনুকূল চন্দ্র ছাড়া পান। কারাদন্ড হয় ভুজঙ্গ ধর হরিদাস দত্ত, কালিদাস বসুদের। ততদিনে চুরি যাওয়া পিস্তল ও টোটা বাংলার বিপ্লবীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করছেন। বাঘা যতীন এই পিস্তল আর টোটা নিয়ে বুড়িবালামের তীরে যুদ্ধ করলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। কারণ যুদ্ধের জন্য যথেষ্ট অস্ত্র তাঁদের কাছে ছিল না।
বাঘা যতীনদের কাছে পৌঁছানোর কথা ছিল আটক হওয়া ২১২০০ টোটা। যা পৌঁছায়নি অজানা মাড়োয়ারি ছেলের বিশ্বাসঘাতকতায়। সেই টোটাগুলির সন্ধান পুলিশকে বলে দেয়। ধরা পরা টোটাগুলি ধরা না পরে যদি বাঘা যতীন পেতেন তাহলে বুড়িবালামের যুদ্ধের ইতিহাস হয়তো বদলাতেও পারত। বুড়িবালামের তীরের শেষ ৭৫ মিনিটের যুদ্ধটায় আর একটু সময় বেশি টিকেও থাকা যেত হয়তো। যদির কথা নদীতে। আর বাকি সবই ইতিহাস।
এই কাজ সমাধা হবার পরে ব্রিটিশ সরকার যেমন ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছিল। বিপ্লবীরাও তেমনি আনন্দে ও আত্মপ্রত্যয়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। অতি যত্নে ও সংগোপনে মাউজার পিস্তলগুলো (যেগুলো দরকারে রাইফেলের মতন ব্যবহার করা যেত) বিপ্লবী দলের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। তখন কিন্তু কোন দলাদলি ছিল না – কে অনুশীলন, কে যুগান্তর, কে ছোটবড় দলের লোক, এসব ভাবার অবসর কারও ছিল না। তখন মহাযুদ্ধ সমাগত। সেই যুদ্ধের সৈনিক হবার পূর্বে অস্ত্রের প্রয়োজন। সেই অস্ত্র এসেছে, এখন ইন্দো-জার্মান ষড়যন্ত্র সফল হোক, জাহাজ বোঝাই আগ্নেয়াস্ত্র আসুক, ভাণ্ডার বোঝাই অর্থ আসুক বৈপ্লবিক কাজে-দেশের কাজে ব্যবহার করার জন্য – এটাই ছিল সকলের লক্ষ্য। ১৯১৪ সাল থেকে অনুষ্ঠিত বিপ্লবীদের যুদ্ধকালীন যত ভয়াল একশ্যান ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে, তার মূলে প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রেই ছিল রডার অস্ত্রাগার থেকে লুন্ঠিত ‘মাউজার’ এর শক্তি। ‘রডা একশ্যান’ শুধুমাত্র দুঃসাহসী ও চমকপ্রদই নয়, এর রাজনৈতিক গুরুত্বও প্রচুর।
(তথ্যসূত্র:
১- অগ্নিযুগ, শৈলেশ দে।
২- Bagha Jatin: Life in Bengal and Death in Orissa by Prithwindra Mukherjee, Manohar (২০১৬)।
৩- বাঘা যতীন, মনি বাগচী।
৪- বাংলার পাঁচ স্মরণীয় বিপ্লবী: সম্পাদনা-দেবপ্রসাদ জানা, দীপ প্রকাশন (২০০৮)।
৫- বাঘা যতীন: পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। দে’জ পাবলিকেশন (২০০৩)।
৬- স্বাধীনতা সংগ্রামে সশস্ত্র বিপ্লবীদের ভূমিকা: সুধাংশু দাশগুপ্ত, ন্যাশনাল বুকস এজেন্সি (২০০৯)।
৭- বাংলার মুক্তি সন্ধানী: সব্যসাচী চট্টপাধ্যায় ও রাখী চট্টপাধ্যায়, মে ২০০৫ সাল।
৮- Bagha Jatin: An Unsung Hero by Dr. Rup Narayan Das (২০০৭)।
৯- আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৫ই আগস্ট ২০১৯ সাল।)
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত