বাজারে কেনাকাটা কমছে। আর সেই ঝিমিয়ে থাকা চাহিদাকে আরও প্রকট করে পাল্লা দিয়ে কমছে জিএসটি থেকে আয়। রাজকোষের হাল এতটাই করুণ যে, নরেন্দ্র মোদী সরকারের অর্থ মন্ত্রক রাজ্যগুলিকে জিএসটি বাবদ ক্ষতিপূরণও মেটাতে পারছে না।
পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, ‘‘অগস্ট ও সেপ্টেম্বরে জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ কেন্দ্রের কাছে প্রায় ১৪৩৩ কোটি টাকা দাবি করেছি। এখনও তা মেলেনি। শেষ বার জুন-জুলাইয়ের জন্য ১১১২ কোটি পাওয়া গিয়েছিল।’’ কেরলের অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাক বলেন, ‘‘কেন্দ্রের থেকে এখনও ওই ক্ষতিপূরণের টাকা না-মেলায় রাজ্যের কোষাগার থেকে রোজকার খরচ চালানোই মুশকিল হয়ে গিয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক যে, রাজ্যের প্রয়োজন সম্পর্কে কেন্দ্র সংবেদনশীল নয়। অথচ জিএসটি ক্ষতিপূরণ রাজ্যের বিধিবদ্ধ অধিকার।’’
অমিত মিত্রের মতে, জিএসটি প্রতারণাও এর বড় কারণ। সরকারি সূত্রের খবর, সোমবারই অমিতবাবু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে এ নিয়ে কড়া চিঠি লিখেছেন। তাঁর দাবি, এ বিষয়ে দ্রুত জিএসটি পরিষদের বৈঠক ডাকা হোক। জিএসটি থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর রাস্তা খুঁজতে সম্প্রতি অফিসারদের নিয়ে কমিটিও তৈরি হয়েছে। অমিতবাবু চিঠিতে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘অফিসাররা কিছু স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ ও ব্যবস্থার উন্নতির সুপারিশ করতে পারেন। তবে তা কি যথেষ্ট?’
চিঠিতে তাঁর অভিযোগ, ‘‘জিএসটিতে জালিয়াতি-প্রতারণা বন্ধ করতে ফাঁকফোকর বোজানোর জন্য বারবার বলেছি। তা সত্ত্বেও জিএসটি পরিষদে কোনও আলোচনা হয়নি। গত দু’এক বছরে এই কেলেঙ্কারি সব সীমা ছাড়িয়েছে। কিছু অসৎ ব্যবসায়ী কাঁচামালে মেটানো করের ভুয়ো বিল দেখিয়ে টাকা দাবি করায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। কিছু রিপোর্ট দেখে মনে হচ্ছে, রফতানিতেও এই প্রতারণা হচ্ছে। অর্থাৎ শুধু কর ফাঁকি নয়, যে ব্যবসা হয়নি তার জন্য কর ছাড় নেওয়া হচ্ছে। অথচ এ নিয়ে কোনও টাস্ক ফোর্স তৈরি হয়নি।’’ অমিতের দাবি, ‘বিজনেস ইন্টেলিজেন্স’ ব্যবস্থা গড়ে প্রতি রাজ্যে এর শাখা তৈরি হোক।
বাজারে কেনাকাটা যে কমছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে টানা তিন মাস ধরে জিএসটি থেকে আয় ১ লক্ষ কোটি টাকার নীচেই রয়ে গিয়েছে। অথচ অর্থ মন্ত্রক এই খাতে মাসে ১.১৮ লক্ষ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য স্থির করেছে। সেপ্টেম্বরে আদায় হয়েছিল ৯১,৯১৬ কোটি টাকা। যা ছিল ১৯ মাসে সর্বনিম্ন। অক্টোবরে তা সামান্য বেড়ে ৯৫,৩৮০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। কিন্তু তা-ও ২০১৮ সালের অক্টোবরের তুলনায় সেই অঙ্ক প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা কম। তাই এই অবস্থার জন্যে যে কেন্দ্রই দায়ী তা বলাই বাহুল্য।