বুধবারই নির্দেশিকা জারি করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বায়োপিক ‘পিএম নরেন্দ্র মোদী’-র মুক্তি আটকে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তারা জানিয়েছে, লোকসভা ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ছবি মুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সেইসঙ্গে কমিশন তাদের নির্দেশিকায় এ-ও জানায় যে, ‘নির্বাচন চলাকালীন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে ক্ষতি করতে পারে এমন কিছু বৈদ্যুতিন মাধ্যমে দেখানো যাবে না’। যার ফলে কোপ পড়ছে বিজেপির ২৪ ঘন্টার চ্যানেল নমো টিভিতেও। সম্প্রচার হলেও অনুমোদন ছাড়া এই চ্যানেলে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কোনও অনুষ্ঠান করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি ভোট প্রচারে কুকথা বলার অভিযোগে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ও সে রাজ্যের দলিত নেত্রী মায়াবতীকে নোটিস পাঠিয়েছে কমিশন। একই সঙ্গে দু’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী মহারাষ্ট্রে প্রচারে গিয়ে সেনা নিয়ে যে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন সেই রিপোর্টও কমিশনের ঘরে জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশন কর্তারা। প্রসঙ্গত, চলতি নির্বাচনের প্রচারে সেনাদের যাতে টেনে না আনা হয়, সে জন্য একাধিক বার সতর্ক করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু দিন তিনেক আগেই বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার পরাক্রমের উদাহরণ টেনে নতুন ভোটারদের বিজেপির পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান মোদী।
মোদীর ভাষণের পরই ওঠে তীব্র নিন্দার ঝড়। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিরোধীরা কমিশনের দ্বারস্থ হলে সংশ্লিষ্ট জেলার নির্বাচনী অফিসারের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠায় কমিশন। মহারাষ্ট্রের মুখ্য নির্বাচনী কমিশনারের হাত ঘুরে সেই রিপোর্ট এসে পৌঁছায় দিল্লীতে। গতকাল উপ নির্বাচনী কমিশনার সন্দীপ সাক্সেনা বলেন, ‘রিপোর্ট এসেছে। যা কমিশনের নির্দিষ্ট দল খতিয়ে দেখবে।’ তবে কমিশন সূত্রের খবর, মহারাষ্ট্র থেকে যে রিপোর্ট এসেছে তাতে প্রাথমিক অনুসন্ধানে মোদীর ও’দিনের বক্তব্য নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি ভেঙেছে বলেই জানা গেছে। ফলে কমিশন এখন ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেয় সেটাই দেখার।
একই ভাবে নমো টিভির ক্ষেত্রে দিল্লীর মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছিল কমিশন। বিজেপির সাফাই, এটি নাকি একটি বিজ্ঞাপনী টিভি চ্যানেল। অর্থের বিনিময়ে ওই ডিটিএইচ চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিয়েছে দল। তবে তারপরই কমিশন সাফ জানিয়ে দিয়েছে, চ্যানেল ভাড়া নিলেও তাতে কোনও রাজনৈতিক বিষয় সম্প্রচার করতে কমিশনের অনুমোদন প্রয়োজন। কমিশনের স্পষ্ট নির্দেশ, অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত নমো টিভিতে রাজনৈতিক কোনও বিষয় প্রচার করা যাবে না।
অন্যদিকে, বিজেপি প্রার্থীদের হারাতে উত্তরপ্রদেশে মুসলিমদের একজোট হয়ে ভোট দেওযার পরামর্শ দিয়েছিলেন দলিত নেত্রী মায়াবাতী। পাল্টা আক্রমণে বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ হিন্দু সমাজের ভোট ভাগাভাগি না করে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আবেদন করেন। আজ কমিশন জানিয়েছে, দু’টি ক্ষেত্রেই নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ হওয়ায় নোটিস পাঠানো হয়েছে দুই নেতা-নেত্রীকে। আবার ভারতীয় সেনাকে ‘মোদীর সেনা’ বলে জনসভায় বক্তৃতা করার জন্য বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নকভির বিরুদ্ধেও নির্বাচনী বিধিভঙ্গের একটি মামলা করা হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে খবর।