গত রবিবারই নির্বাচনী নির্ঘন্ট প্রকাশ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। লোকসভা ভোটের আর এক মাসও বাকি নেই। এরই মধ্যে বাংলার মানুষকে অসম্মান করতে বিজেপির তরফ থেকে দাবি করা হয়, বাংলার সব কটি বুথই ‘অতি স্পর্শকাতর’। রাজ্যবাসীর এই ‘অপমানের’ জবাব দিতে আবারও পথে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আজ ধর্মতলায় রানি রাসমণি রোডে ৪৮ ঘণ্টার ধর্নায় বসল তৃণমূলের মহিলা শাখা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে স্পর্শকাতর কেন্দ্রের তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কমিশন সূত্রের খবর, উত্তেজনাপ্রবণ ওইসব কেন্দ্রে বিশেষ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করতে চান তাঁরা। যদিও মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, বাংলায় এমন কোনও স্পর্শকাতর কেন্দ্র নেই। আর ঠিক এরপরে দিন, বুধবারই বাংলার সমস্ত বুথকে অতি স্পর্শকাতর বলে ঘোষণা করার দাবি তুলে দিল্লীতে নির্বাচন কমিশনেরও দ্বারস্থ হয়েছিল বিজেপি। এবার সেই গেরুয়া শিবিরকে পাল্টা চাপের মুখে ফেলতে তৎপর তৃণমূল।
তৃণমূলের দাবি, রাজনৈতিক লড়াই নয়, এতদিন কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তৃণমূলকে হেনস্তা করে এসেছে গেরুয়া বাহিনী। এবার ভোটের মুখে নির্বাচন কমিশনকেও দলীয় স্বার্থে কাজে লাগাতে তৎপর হয়ে পড়েছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের দল। এ প্রসঙ্গে দলনেত্রী মমতা বলেন, ‘শান্ত বাংলাকে কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে, এই ধরণের মন্তব্যে বাংলাকে অপদস্ত করার ছক করছেন বিরোধীরা।’
তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, যে রাজ্যে নানা ধর্মীয় কিংবা সামাজিক পার্বণ নির্বিঘ্নে পালিত হয়, যেখানে গো-রক্ষকের নামে গণপিটুনির ঘটনা ঘটে না, সেখানে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলা বস্তুত রাজ্যবাসীকে অমর্যাদা করার শামিল। যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে খুনোখুনির তথ্য তুলে তৃণমূলকে আক্রমণ করেছে বিজেপি, তাও বিভ্রান্তিতে ভরা। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীও জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে যেসব রাজনৈতিক কর্মী খুন হয়েছেন, তাঁদের ৯৯ শতাংশই তৃণমূলের সদস্য। ওইসব খুনের অভিযোগও বিজেপির বিরুদ্ধে।
শাসকদলের এক শীর্ষ নেতার ব্যাখ্যা, তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে একদিকে কুৎসা, অন্যদিকে কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে হেনস্তা করার কৌশল নিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু বাংলার মানুষ ওই চক্রান্ত ধরে ফেলেছিল। সিবিআই, ইডি, আয়কর দপ্তর সহ কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে দিয়ে বিরোধীদের চাপে রাখার কৌশল গোটা দেশেই প্রয়োগ করেছে বিজেপি। মোদীর শাসনকালে তার বিরোধিতা যে করেছে, তাকেই এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে। পরে অবশ্য এই এজেন্সিগুলির স্বাধিকার প্রশ্নের মুখে পড়েছে। যা ভারতের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই সব অভিযোগকে সামনে এনে ইতিমধ্যেই পথে নেমেছে জোড়াফুল শিবির।
দলের মহিলা শাখার সভানেত্রী রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ভোটে নিজেদের বিপর্যয় আঁচ করে বিজেপি ফের কুৎসার আশ্রয় নিয়েছে। রাজ্যের সব বুথ নাকি অতি স্পর্শকাতর। তাদের এই দাবি শুধু কোনও দলকে নয়, রাজ্যবাসীকেই অপমানের নামান্তর। তাই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জরুরি। কেননা নির্বাচন কমিশনকেও দলীয় স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যবহার করতে উদ্যত হয়েছে বিজেপি। এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতেই এই ধর্নার আয়োজন। দু’দিন ধরে এই ধর্না-বিক্ষোভ চলবে।