আজ, বৃহস্পতিবার বিধাননগরের সেন্ট্রাল পার্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত দিয়ে উদ্বোধন হতে চলেছে ৪৩ তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার। ইতিমধ্যে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিও প্রায় শেষ। গুটিকয়েক স্টল অসম্পূর্ণ রয়ে যাওয়ায় বুধবার দিন-রাত এক করে চলল স্টল নির্মাণের কাজ। এবার কয়েকদিন শুধু বইয়ের গন্ধে মজে থাকার পালা।
ভিন জেলা ও মহানগরের সব পথ আজ থেকে মিলে যাবে সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে। দর্শকের বিচারে সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বইমেলা শুরুর ঘণ্টা বাজতে বাকি আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এ বছর বইমেলার থিম দেশ গুয়াতেমালা। ঐক্য, সংহতি ও সম্প্রীতির সুর ছড়িয়ে পড়বে বইমেলায়। বিশেষ সম্মানিত অতিথি গুয়েতেমালার লেখক প্রফেসর উদা মোরালেস। থাকবেন লেখক শঙ্কর, গুয়েতেমালা ও রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত, রাজ্যের একঝাঁক মন্ত্রী এবং লেখকরা। দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বইমেলা চলবে।
গত বছর থেকে সেন্ট্রাল পার্কে বইমেলা হচ্ছে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, এবার বইমেলার নিরাপত্তা, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আরও আঁটোসাঁটো করা হয়েছে। বড় স্ক্রিন লাগানো হয়েছে প্রবেশদ্বারের বাইরে। বইমেলার ভিতরে চলা অনুষ্ঠান সেই স্ক্রিনে দেখা যাবে। যা এবারেই প্রথম বলে দাবি উদ্যোক্তাদের। ৬০০ বইয়ের স্টল ও ২০০ লিটল ম্যাগাজিনের স্টল তৈরি হয়েছে। বইয়ের স্টলগুলিতে চলছে রংয়ের প্রলেপ দেওয়ার কাজ। মোট কথা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রস্তুতি চলছে।
মেলা নিয়ে ব্যস্ততা তুঙ্গে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটেও। এই ক’দিন লক্ষ লক্ষ বইপ্রেমীর নিরাপত্তা ও পথ সচল রাখাও পুলিশের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বইমেলা জুড়ে থাকবে সিসিটিভি। শুধু মেলা মাঠেই থাকবে ২০০টি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা। এছাড়া মেলার মাঠের বাইরে এবং বিধাননগরে বিভিন্ন মোড়ের ক্যামেরাগুলি দিয়ে বিশেষ কন্ট্রোল রুম থেকেই নজরদারি চলবে। নজরদারি চালাতে দু’হাজারেরও ওপর পুলিশকর্মী সাদা পোশাকে টহল দেবেন মেলা প্রাঙ্গণে। মেলা মাঠকে ৪টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি জোনে নজরদারির জন্য বসেছে ১টি করে ওয়াচটাওয়ার ও ২টি করে হেল্প ডেস্ক।
এর পাশাপাশি পুলিশ, পরিবহণ, দমকল-সহ বিভিন্ন দফতরের ইউনিফায়েড কমান্ড কন্ট্রোল রুম করা হয়েছে। মেলার প্রতিটি প্রবেশ পথেই ‘মে আই হেল্প ইউ’ ডেস্ক, পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম থাকবে। এছাড়া বইচুরি, মহিলাদের হেনস্থা, অপরাধ ঠেকাতে বাছাই করা অফিসারদের নিয়ে বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। সাদা পোশাকে থাকবেন অ্যান্টি মলেস্টেশন টিমের মহিলা পুলিশকর্মীরা। থাকছে দমকলের গাড়ি, অ্যাম্বুল্যান্স, চিকিৎসা পরিষেবা। সমস্যায় পড়লে বা কারও অভিযোগ থাকলে ১০০ ডায়াল অথবা মেলায় পুলিশের হেল্প ডেস্কে জানানো যাবে।
ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় বসেছে পথনির্দেশিকা। কোথায় বাস থেকে নামতে হবে, তাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে প্রশাসন। সেন্ট্রাল পার্ক লাগোয়া করুণাময়ী মোড় থেকে ময়ূখভবন পর্যন্ত কোনও বাস চলাচল করবে না। বাসগুলিকে ময়ূখভবন ও করুণাময়ী থেকে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। মেলার জন্য বিশেষ বাস থাকবে করুণাময়ী বাস টার্মিনাস, নবদিগন্ত বাস টার্মিনাস, ময়ূখভবন লাগোয়া রাজ্য পর্যটন দফতরের জমি এবং সিকে৬৫ নম্বর প্লটে। অটো ও ট্যাক্সির পার্কিং বিধানচন্দ্র রায়ের মূর্তির সামনে।
পাশাপাশি গাড়ি পার্কিংয়ের জন্যও নির্দিষ্ট জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। সেন্ট্রাল পার্কের উল্টোদিকে ডিজে৫ নম্বর জমিতে ১ হাজারের বেশি গাড়ি রাখা যাবে। ডিজে৩ নম্বর প্লটেও পার্কিং এরিয়া করা হয়েছে। প্রয়োজনে ময়ূখভবনের উল্টোদিকে রাস্তার পাশে গাড়ি রাখার অনুমতি দেবে পুলিশ। সেন্ট্রাল পার্কের সামনে কোনও গাড়ি দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। তবে বয়স্ক মানুষ ও পরিবারের লোকেদের নামিয়ে পার্কিং এরিয়ায় যেতে পারে গাড়ি।
বুধবার মেলার নিরাপত্তা নিয়ে বিধাননগরের উপনগরপাল (সদর) অমিত পি জাভালগি বলেন, ‘গিল্ড, পুলিশ, অগ্নিনির্বাপণ দফতর, বিধাননগর পুরনিগম, পরিবহণ, বিদ্যুৎ ও নগরোন্নয়ন দফতরকে নিয়ে সমন্বয় দল প্রতিদিন রাত ৮টায় পর্যালোচনা বৈঠকে বসবে। সেদিনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পরের দিনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থার রূপরেখা তৈরি হবে।’