আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা তার পরই আই লিগের ফিরতে লেখে খেলতে নেমে পড়বে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান। এক ডার্বি থেকে আর এক ডার্বির মাঝখানের সময়টা খুব একটা বেশি নয় কিন্তু তার মধ্যেই বদল হয়েছে অনেককিছু। বদলে গিয়েছেন মোহনবাগানের কোচ। প্রথম ডার্বি হেরে অনেকটাই ব্যাটফুটে চলে যাওয়া মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী বিদায়ের পর রাতারাতি প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদ জামিলের হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন ক্লাব কর্তারা। তাঁর আগমনে জয়ে ফিরেছে মোহনবাগান। তা হলে কি খালিদের সামনে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে বদলার পালা? করণ ইস্টবেঙ্গল থেকে বিদায়টা যে তার খুব ভালমতো হয়নি। মুখে কিছু না বললেও কোচের সামনে কিন্তু বড় দলেও নিজেকে প্রমাণ করার লক্ষ্য।মোহনবাগানে খালিদ। ইস্টবেঙ্গলে আলেসান্দ্রো। দুজনের হিমশীতল আচরণ, মনোভাব ও কথাবার্তায় কলকাতা ডার্বির উত্তাপ টের পাওয়া মুশকিল।
ডার্বির গুরুত্ব আগের মতোই আছে। দুই ক্লাবের মর্যাদার লড়াই ঘিরে সমর্থকদের রেষারেষি আছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পরস্পরকে আক্রমণ করে কটাক্ষ ও কটূক্তি আছে। কিন্তু আই লিগের ফিরতি ডার্বির আগে সেই উত্তেজনায় টগবগ করে ফোটা মেজাজের চিহ্ন মিলল না এদিন দুই প্রধানের কোচ খালিদ ও আলেসান্দ্রোর সাংবাদিক–সম্মেলনে। এমন কোনও বেফাঁস মন্তব্য দুজনের একজনও করলেন না, যাতে প্রতিপক্ষ তেতে উঠতে পারে। দুই কোচের বক্তব্যের সারমর্ম, ফিরতি ডার্বি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তে চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে ভাবছি না। শুধু ফোকাস রবিবারের ম্যাচে। ৩ পয়েন্ট পাওয়া লক্ষ্য।
ইস্টবেঙ্গলের প্রথম ডার্বি জয়ের সময় বাগান কোচ ছিলেন শঙ্করলাল। এবার দায়িত্বে খালিদ। চোটের জন্য খেলেননি সনি। এবার খেলবেন। সনিকে নিয়ে বাড়তি ভাবনাচিন্তা আছে? আটকাতে পারবেন? ফিরতি ডার্বিতে এই দুটো বিষয় কতটা ফ্যাক্টর হবে আপনার কাছে? আলেসান্দ্রোর আত্মবিশ্বাসী প্রতিক্রিয়া, ‘এটা একটা বড় ম্যাচ। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ যেভাবে খেলা উচিত, সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মোহনবাগান বড় দল। ভাল মানের ফুটবলার আছে। আগে কী হয়েছে ভুলে গিয়ে, সামনের ম্যাচের খুঁটিনাটি বিষয় মাথায় রেখেই মাঠে নামবে ফুটবলাররা। হার-জিতের চাপ নিয়ে নয়, ভাল খেলার লক্ষ্যে। সনির জন্য স্পেশাল কোনও প্ল্যান নেই। রবিবার ম্যাচেই বোঝা যাবে সনি ফ্যাক্টর হবে কিনা।’ রিয়েল কাশ্মীর ও চেন্নাইয়ের মধ্যে খেলা আছে। এই দুটো দল রয়েছে লিগ টেবিলের ওপরের দিকে। সেক্ষেত্রে ওদের চাপে ফেলতে রবিবারের ডার্বি জেতা কতটা জরুরি? আলেসান্দ্রোর সাফ জবাব, ‘অন্যরা কে কী করল, সেটা নিয়ে ভাবছি না। একসঙ্গে অনেকগুলো দল চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য লড়ছে। এখনও অনেক ম্যাচ বাকি। অনেক ওঠানামা হবে। সেটা নিয়ে পরে ভাবব। এখন ফোকাস শুধুই রবিবারের ম্যাচের ৩ পয়েন্টে।’
কোন ছকে ইস্টবেঙ্গল বধের পথে হাঁটবেন, সেটা গোপনই রাখলেন বাগান কোচ খালিদ। ইস্টবেঙ্গলের কোচ থাকার সময় ডার্বির আগে কেমন যেন চাপে কুঁকড়ে যেতেন। এবার একেবারে ফুরফুরে মেজাজে। সাংবাদিকদের প্রশ্নে এমন উত্তর দিলেন, হাসির রোল উঠল। কী কারণে আগেরবারের তুলনায় এবার অনেক বেশি রিল্যাক্সড? চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে টিকে থাকতে এটা কি টার্নিং পয়েন্টের ম্যাচ? বাগান কোচের উত্তর, ‘আমি এমনই। কখনও চিন্তিত, কখনও রিল্যাক্সড। হ্যাঁ, এবার হালকা মেজাজে আছি। ফুটবলারদের একই মেজাজে থেকে ম্যাচ জেতার কথা বলেছি। টার্নিং পয়েন্ট বলতে পারেন। তবে চ্যাম্পিয়শিপের কথা ভেবে বা বদলার মনোভাব নিয়ে খেলতে বলছি না ফুটবলারদের। ওরা জানে এই ম্যাচের গুরুত্ব।’ খালিদের এই খোলামেলা আচরণটাই বাগান–শিবির ও ফুটবলারদের চাপমুক্ত রেখেছে ফিরতি ডার্বির আগে। আসলে সনি যাঁর সহায়, তিনি তো এমন ফুরফুরে থাকবেনই। সনিকে অন্যতম সেরা অস্ত্র বলতে দ্বিধা করলেন না। আর গত দু ম্যাচে গোল না খাওয়াটা উদ্বেগ কাটিয়েছে। ডার্বির আগে অরিজিৎ, ওমর, পিন্টুর ফিট হওয়াটাও দলের শক্তি বাড়িয়েছে খালিদের ৪-২-৩-১ ছকে।
এটাকে ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন কিনা এই প্রশ্নে খালিদ বলেন, ‘না। এটা ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠা বা চ্যালেঞ্জের লড়াই নয়। ক্লাবের মর্যাদা ও সমর্থকদের কথা ভেবেই ম্যাচটা জেতা জরুরি। এই ম্যাচটা জিতলে পরবর্তী ম্যাচগুলো নিয়ে প্ল্যানিং করতে সুবিধে হবে।’ প্রতিপক্ষ দলের কোনও বিশেষ ফুটবলারকে নজরে রাখার কথা বললেন না। খালিদের মতে, ওদের গোটা দলটাই বিপজ্জনক। সেট পিসে খুব ভাল। এমন একটা দলের বিরুদ্ধে ডিফেন্স জমাট রেখে দ্রুত গোল তুলে নেওয়ার চেষ্টা থাকবে।