কুম্ভের মেলায় এসেই খোঁজ পড়ে লাইটওয়ালের। অন্ধকারকে আলোয় ভরে দেন তিনি। তাঁর হাত ধরেই সেজে ওঠে রাতের কুম্ভ। জুনা আখড়ার সামনে পৌঁছে খুঁজলেই দেখা মিলবে ‘মোল্লাজি লাইটওয়ালে’-র। মহম্মদ মেহমুদকে লাইটওয়ালে নামেই সবাই চেনে।
মেহমুদের কথায়, ‘‘রাতে এখানে এলে দেখবেন গোটা এলাকা আলোয় ভরে উঠেছে। সব আমার কাজ!’’ গর্ব ঝরে পড়ে লাইটওয়ালের গলায়। সেই ১৯৮৬ সালে হরিদ্বারের কুম্ভমেলা দিয়ে শুরু। নাশিক বাদ দিয়ে বাকি সব কুম্ভমেলায় পৌঁছে গিয়েছিলেন মেহমুদ। ক’টা কুম্ভমেলা দেখেছেন? ভাল মনে না-পড়লেও নয় নয় করে এগারোটি তো বটেই— জানান লাইটওয়ালে।
নাগা সন্ন্যাসী সঙ্গম গিরি প্রতি কুম্ভে আসেন জুনা আখড়ায়। বললেন, ‘‘ফি বারই ওঁকে পাই। কোনও দিন জানতে চাইনি কী নাম। ও আমাদের বন্ধু, লাইটওয়ালে’’ তাঁর কথায়, ‘‘হিন্দুদের কাছে আমরা গুরু, মুসলিমদের কাছে পির। মুসলিমরা নিরাকারের পুজারী। আমরা সাকারে পুজো করি। পথটাই যা আলাদা। কিন্তু পৌঁছতে তো হবে শেষমেশ একই জায়গায়!’’এ ভাবেই প্রতি কুম্ভে এক মিলনের সাক্ষী থাকে সাগর সঙ্গম। মেহমুদ জানান, কোনও দিন ধর্ম বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি এই সহজ যাতায়াতে”। ‘‘সাধু বাবাদের সঙ্গে থেকে মনে হয়, এটা আমারও বাড়ি। কত বার তো ওঁদের পাশে ওঁদের গদিতেই বসেছি। শ্রদ্ধা করি ওঁদের। এখানে এসেও পাঁচ বার নামাজ পড়ি। কোনও অসুবিধে হয়নি কখনও। বরং সাধুরাই অনেক সময় আমাকে জায়গা করে দিয়েছেন।’’ পুরনো কথা মনে পড়ে যায় মেহমুদের। জানান— যদি সাধুরা এমন ভাবে আমাকে গ্রহণ না করতেন, কবেই আসা ছেড়ে দিতাম। যে দিন এই সহজ জায়গাটা শেষ হয়ে যাবে, সেটাই হবে তাঁর শেষ কুম্ভ।
কুম্ভ তো এক মাস। বাকি সময়টা কী ভাবে দিন গুজরান হয়? জানালেন, কখনও মুজফ্ফরনগরে জন্মাষ্টমী উৎসব, কখনও বা মেরঠের বিখ্যাত নাউচণ্ডী মেলা। মেলার তো অভাব নেই। বসে থাকেন না লাইটওয়ালে।