উত্তরপ্রদেশে যোগীর পুলিশের ‘ঠোক দো’ নীতি নিয়ে এবার উদ্বেগ প্রকাশ করল দেশের শীর্ষ আদালত। ‘গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা দরকার।’ যোগীর রাজ্যে পুলিশের এনকাউন্টার নিয়ে এমনই মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের।
গতকাল, সোমবার একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এনকাউন্টার প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের বক্তব্য জানতে চায়। তারপর সঙ্ঘর্ষ ও মৃত্যু সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র পড়ার পর প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি অশোক ভূষণ ও বিচারপতি এস কে কউলের বেঞ্চ মনে করছে, বিষয়টি ‘গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা দরকার।’ স্বাভাবিকভাবেই আদালতের এমন মন্তব্যে লোকসভা ভোটের আগে প্রবল অস্বস্তিতে পড়ল যোগী আদিত্যনাথের সরকার এবং তাঁর দল।
পুলিশের গুলিতে মৃত্যু নিয়ে আদালতের নজরদারিতে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) বা সিবিআই গঠনের আর্জি জানিয়ে শীর্ষ আদালতে জনস্বার্থ মামলা করে ‘পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টি’ (পিইউসিএল) নামে একটি সংগঠন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে উত্তরপ্রদেশ সরকারকে নোটিস পাঠিয়ে শীর্ষ আদালত ১২ ফেব্রুয়ারি মামলাটির শুনানির দিন ধার্য করেছে।
গতকাল শুনানির সময় যোগী সরকারের আইনজীবী মুকুল রোহতগি দাবি করেন, রাজ্য সরকার সবকিছু আইন মেনেই করেছে। তবে জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘এনকাউন্টার মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ। সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। এনকাউন্টার নিয়ে বিস্তারিত শুনানির প্রয়োজন রয়েছে।’
সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের মার্চ মাসে উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকার গঠনের পর থেকে ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত রাজ্যের ২৪টি জেলায় ২,৩৫১টি শ্যুট আউট এবং ৬৩টি সঙ্ঘর্ষমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে বারবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে যোগী সরকারকে। পিইউসিএলের দাবি, রাজ্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পুলিস নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে নিরীহ মানুষকেও হত্যা করেছে।
এনকাউন্টারের সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং পুলিসের অতিরিক্ত ডিজি আনন্দ কুমারের বক্তব্যও জমা দেওয়া হয়েছে আদালতে। এর আগে একই নামের ভুল লোক ও নিরীহ মানুষকে খুনের ঘটনাও ঘটেছে। বিভিন্ন ভিডিও ‘ভাইরাল’ হয়েছে, যার কোনওটিতে পুলিশের কর্তাকে ‘ঠোক দো’ বলতে শোনা গেছে, কোনওটিতে কাউকে মারার পরিকল্পনার কথা সামনে এসেছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, ভুয়ো সঙ্ঘর্ষে যাঁদের মারা হচ্ছে, তাঁরা মূলত দলিত, মুসলিম অথবা অনগ্রসর শ্রেণির মানু্ষ। ঘটনাচক্রে, পরিসংখ্যান বলছে, ওই সঙ্ঘর্ষগুলির বেশিরভাগই হয়েছে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মেরঠ, শামলি, মুজফফরনগর, বাগপত, সাহরানপুর, নয়ডা ও গাজিয়াবাদ জেলায়। এর মধ্যে একটা বড় অংশেই মুসলিমদের বাস। ফলে পুলিশের এনকাউন্টার যে আসলে সরকারের মুসলিম বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ, এমনটাই মনে করছেন সকলে।