মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবারই বলে থাকেন, ‘এগিয়ে বাংলা’। তাঁর দাবি যে মোটেই ভ্রান্ত নয়, সে ইঙ্গিত মিলেছে কেন্দ্রীয় রিপোর্টেও। এবার পঞ্চায়েত পরিচালনা ও গ্রামোন্নয়নে বাংলাকেই দেশের ‘রোল মডেল’ বলল খোদ বিশ্বব্যাঙ্ক। জানা গেছে, গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়নে বাংলার কাজে খুশি তারা। পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে সুসংগঠিত ও সংহত করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যে ভাবে পদক্ষেপ করেছে, তাকে স্বীকৃতি দিয়ে বাকি রাজ্যগুলিও যাতে বাংলাকে রোল মডেল করে এগিয়ে চলে, সেই পরামর্শই দিয়েছে বিশ্বব্যাঙ্ক।
রাজ্যের গ্রাম পঞ্চায়েতের পরিকাঠামো উন্নয়ন ও তার পরিচালন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থ সাহায্যে আইএসজিপি (ইনস্টিটিউশনাল স্ট্রেংদেনিং অফ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রোগ্রাম) প্রকল্প চালু হয়েছে। তাতে গ্রাম পঞ্চায়েত ভবন তৈরি, কম্পিউটার কেনা, ইন্টারনেট সংযোগ, পঞ্চায়েত সদস্যের প্রশিক্ষণ-সহ নানা ধরনের পরিকাঠামো বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকা উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সেই মতো বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সহযোগিতায় রাস্তা, আলো, পানীয় জল, ব্রিজ, কালভার্ট প্রভৃতি তৈরি হয়। মোট বরাদ্দের ৪৯ শতাংশ টাকা ইতিমধ্যে রাজ্যে খরচ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিশ্বব্যাঙ্কের কর্তারা।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাঙ্কের এ দেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিরেক্টর জুনেইদ কামাল আহমেদ সব রাজ্যের পঞ্চায়েত সচিব এবং তাঁদের আর্থিক সাহায্যে চলা বিভিন্ন প্রকল্পের ডিরেক্টরদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকেই যেসব রাজ্যে তাদের কর্মসূচি চলছে, তার পর্যালোচনা করা হয়। বাংলায় চলা প্রকল্পগুলির কাজকর্ম নিয়ে প্রশংসা করেন বিশ্বব্যাঙ্কের কর্তারা। সেখানেই উল্লেখ করা হয়, ৩২২৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে তাদের পরিকাঠামো বৃদ্ধি করার জন্য ওই টাকা দেওয়া হয়। কমপক্ষে ৪০-৫০ লক্ষ টাকা পায় পঞ্চায়েতগুলি। সর্বাধিক এক কোটি টাকার বেশি।
কাজের গুণগত বিচার ও পরিকল্পনা অনু্যায়ী টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেই টাকা ঠিকমতো খরচ হচ্ছে কি না তা দেখতে বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা বাংলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে বেড়ান। এরপরই বিশ্বব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে সরেজমিনে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। তার উপর ভিত্তি করেই বিশ্বব্যাঙ্ক প্রশংসা করেছে। শুধু মুখে নয়, পঞ্চায়েত দফতরকে লিখিতভাবেও সে কথা জানিয়েছে তারা।
২০১০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়নে গ্রাম পঞ্চায়েত সশক্তিকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করে বিশ্বব্যাঙ্ক। সেই কর্মসূচি রূপায়ণের সময়সীমা ধার্য করা হয় ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত। বিশ্বব্যাঙ্ক প্রথমে ৯৬০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা জানালেও, গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি ভালো কাজ করায় সেই খরচ দাঁড়ায় ১১২০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়, ইন্টিগ্রেটেড স্ট্রেনদেনিং গ্রাম পঞ্চায়েত প্রজেক্ট (আইএসজিপিপি) ওয়ান।
রিভিউ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বব্যাঙ্ক দ্বিতীয় দফায় কাজ শুরুর জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৬২০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছিল। এই পর্যায়ের কাজ শেষ করার জন্য সময়সীমা ধার্য করা হয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে রাজ্যগুলির জন্য বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার আগে মাত্র দু’বছরের মধ্যেই সেটা অতিক্রম করে ফেলেছে বাংলা। খোদ বিশ্বব্যাঙ্কের অফিসাররা সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মাত্র দু’বছরেই রাজ্য ১৬২০ কোটি টাকার মধ্যে ৪৯.৪ শতাংশ অর্থ খরচ করে ফেলেছে। যা গোটা দেশের কাছেই এক অনন্য নজির। এ জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিশ্বব্যাঙ্কের কর্তারা। তখনই তাঁরা জানান, আইএসজি প্রকল্প রূপায়ণে দেশের আদর্শ মডেল হল বাংলাই। তাই অন্যদেরও এক্ষেত্রে বাংলাকেই অনুসরণ করা উচিত।